ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেপরোয়া গাড়ি চালনায় মৃত্যু হলে চালকের মৃত্যুদন্ড ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:১১, ৮ এপ্রিল ২০১৯

 বেপরোয়া গাড়ি চালনায় মৃত্যু হলে চালকের মৃত্যুদন্ড ॥ আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে কারও মৃত্যু হলে সেটা দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে না। সেটাকে হত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তখন এর বিচার হবে পেনাল কোডের ৩০২ ধারা মোতাবেক। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে হত্যা প্রমাণিত হলে আদালত ৩০২ ধারা মোতাবেক দোষীকে সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন দিতে বাধ্য থাকবেন। প্রচলিত আইনের প্রয়োগ, জনসচেতনতা ও শিক্ষার সমন্বয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। এক্ষেত্রে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে, মাইন্ডসেটের পরিবর্তন আনতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। জনগণকে বুঝাতে হবে যে, শুধু চালকের ভুলে দুর্ঘটনা হয় না অন্যান্য কারণেও হয়। রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাগো বাংলা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘নিরাপদ সড়ক ঃ আইনের প্রয়োগ ও জনসচেতনতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনা-সংক্রান্ত অপরাধ, ১০৫ নম্বর ধারা। এ আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, মোটরযান চালনা-সংক্রান্ত কোন দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোন ব্যক্তি আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে তৎসংক্রান্ত অপরাধসমূহ পেনাল কোডের এতদ সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী অপরাধ বলে গণ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, পেনাল কোডে সেকশন ৩০৪ এর ‘বি’-তে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংগঠিত দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। ‘আমি আপনাদের একটা কথা বলি, এই পেনাল কোডের কথা কেন বললাম? যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তাহলে আইনের কথায় শাস্তি আসলেই হচ্ছে মৃত্যুদন্ড। কিন্তু আদালত যদি মনে করেন, তাহলে তাকে যাবজ্জীবন দিতে পারেন।’ ‘এখন আমরা যদি এ রকম কোন সড়ক দুর্ঘটনা দেখি যে, এখানে চালকের সম্পূর্ণভাবে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে এই দুর্ঘটনা হয়েছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই পেনাল কোডের ৩০২ ধারায় বিচার করতে তো কোন বাধা নেই। কারণ, সেটা হত্যা। সেটা আর দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ে না’ -যোগ করেন তিনি। দুর্ঘটনা আর হত্যা কিন্তু এক জিনিস নয়। সেটাই বুঝতে হবে। প্রত্যেক আইনের মধ্যে এটা লেখা প্রয়োজন পড়ে না যে, হত্যার জন্য মৃত্যুদন্ডাদেশ দিতে হবে। আমাদের সেই আইন আছে। প্রত্যেকটা দুর্ঘটনা বা ঘটনা, যে তথ্য বা যে গল্প, সেটাকে বিশ্লেষণ করে, বিবেচনা করে এবং তদন্ত করে যে তথ্যটা বেরিয়ে আসে, সেখানে যদি প্রমাণিত হয় এটা হত্যা, তাহলে তো ৩০২ ধারা মতে তাকে শাস্তি দিতে হবে। এটাই আইনের কথা। এটাই আইন বলে। এটাই আদালতে প্রমাণ করলে আদালত শাস্তি দিতে বাধ্য।’ আইনমন্ত্রী বলেন দুর্ভাগ্যই যে, সরকারের এত উন্নয়ন সত্ত্বেও সম্পূর্ণ নিরাপদ করা সম্ভব হয়নি আমাদের সড়ক-মহাসড়কগুলো। সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং হচ্ছে। সম্ভাবনাময় তরুণ প্রাণ আমাদের সন্তানদের জীবন প্রদীপ অকালে নিভে যাচ্ছে যন্ত্রদানবের চাকায় পিষ্ট হয়ে। নিরাপদ সড়ক-আমাদের সবারই প্রত্যাশা। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রাণের দাবির প্রতি বর্তমান সরকারও শ্রদ্ধাশীল। আমাদের সন্তানতুল্য তরুণ প্রজন্ম রাজপথে নেমে সে দাবিই উচ্চকিত করে তুলেছে। আমরা চাই প্রতিটি সড়ক নিরাপদ হোক। সে বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেই আমাদের সরকার এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ৩৫ বছর আগের একটি পুরনো আইন দিয়ে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই গতবছর (২০১৮) আমাদের সরকার ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস করেছে। পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ অধিদফতরসমূহ। চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, বৈধ লাইসেন্স নিশ্চিতকরণের মতো জরুরী কাজগুলো যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরসমূহ কাজ করছে। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আইনই যে যথেষ্ট নয়। আইন থাকা সত্ত্বেও আমরা অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিনি। কারণ আইন মেনে চলার মতো একটি সুস্থ সংস্কৃতি এবং সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতা ছাড়া শুধু আইন প্রণয়ন করে আমরা একটি নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব না। এ ক্ষেত্রে আমাদের সকলেরই সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে। সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য সড়কের কারিগরি ত্রুটি যেমন দূর করতে হবে, তেমনই গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিক তথা গাড়ির চালক, হেলপার, যাত্রী এবং পথচারীসহ সকলের মিলিত প্রয়াস এবং সতর্কতা, দায়িত্বশীলতা খুবই জরুরী। বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় যে বিপুল জনস্ফীতি, যে বিপুল সংখ্যক যানবাহন-সে তুলনায় ট্রাফিক সংখ্যা অপ্রতুল। ট্রাফিক ব্যবস্থার আরও উন্নতি এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ কাজে লাগাতে হবে। একই সঙ্গে গণপরিবহনের চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দায়িত্বশীল ও চাপমুক্ত রাখতে হবে। মন্ত্রী বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা সবাই যদি সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করি, তবেই গণপরিবহনে সুশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং সড়কগুলো হয়ে উঠবে অধিকতর নিরাপদ। পরিবহন মালিক সমিতি, ট্রাফিক বিভাগ, বিআরটিএ, সড়ক পরিবহন সংস্থা সম্মিলিতভাবে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কাজ করবে-এটা সকলেরই প্রত্যাশা। যুগের প্রয়োজনে আধুনিক কারিগরি ব্যবস্থাপনার সহায়তায়, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সড়ক-মহাসড়কের বিদ্যমান ত্রুটিসমূহ দূর করা যাবে-এ বিষয়ে আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। যে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সালে আমরা প্রণয়ন করেছি তা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েই করেছি। তবে এই আইনের সুফল পেতে হলে তা যথাযথভাবে কার্যকর করা অত্যন্ত জরুরী বলে বিবেচনা করি। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কবি নাসির আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বক্তৃতা করেন।
×