ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গোয়াল ঘরে গিয়ে আর গরু চেক করবে না বিজিবি ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ৫ এপ্রিল ২০১৯

গোয়াল ঘরে গিয়ে আর গরু চেক করবে না বিজিবি ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এখন থেকে কারও গোয়ালঘর ও সীমান্ত হাটে গিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গরু চেক করবে না। সবাইকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বিজিবি সদর দফতরের দরবার হলে সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান রোধে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষের সময় যে তিনজন গ্রামবাসী নিহত হয় তার প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিজিবি সীমান্ত পাহারা দেবে। সেখানে ৫০০ গজের মধ্যে কেউ না গেলেই হলো। এই পরিধি প্রয়োজনে আরও একটু বাড়িয়ে দেয়া হবে। তবুও বিজিবি সীমান্তে চোরাচালান রোধে কাজ করবে। রাস্তা দিয়ে কেউ গরু বাজারে নিয়ে যাচ্ছে কি না? তা চেক করতে যাবে না। কেউ মাঠে গরুকে ঘাস খাওয়ালে তা চেক করতে যাবে না। আবার কারও বাড়িতেও যাবে না। গোয়ালঘরে তো পরের কথা। যে তিনজন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সেটির বিচার এখনও হয়নি। আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিচার হবে কি হবে না। তা আগেই বলার দরকার নেই। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল। বিজিবি নিজেও ঘটনাটি তদন্ত করছে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। কিছু প্রতিবেদন আমরা হাতে পেয়েছি। আর কিছু এখনও হাতে আসেনি। সব প্রতিবেদন একসঙ্গে এলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সীমান্তে হত্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অতি উৎসাহী কিছু লোক বর্ডার ক্রস করে চলে যায়। যার ফলে কিছু গুলির ঘটনা ঘটে। হত্যা হয়। সেটি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মাদকের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। বিজিবির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়। হয়তো সেটা বাইরে প্রকাশ পায় না। কারণ বিজিবির নিজস্ব একটি আইন আছে, সেই আইনেই তাদের বিচার হয়ে থাকে। সীমান্তে পাহারা থাকার পরও অবৈধ অস্ত্র আসে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বিজিবি সোচ্চার আছে। আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেষ্টও রয়েছে। অচিরেই থার্মাল সেন্সর বসানো হবে। যাতে করে সীমান্ত দিয়ে কেউ অস্ত্র নিয়ে দেশে প্রবেশ করতে না পারে। আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দেশের কোথাও কোন ক্রসফায়ার হচ্ছে না। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদকের সন্ধান পেয়ে উদ্ধার করতে গেলে মাদক কারবারিরা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও গুলি চালায়। তখন তারা বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। মাদকের বিষয়ে উপস্থিত অতিথিদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সবার আগে মাদকের ডিমান্ড হ্রাস করতে হবে। এজন্য জনপ্রতিনিধিদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। সীমান্তে সক্ষমতা আরও বৃদ্ধির জন্য এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ১৫ হাজার বিজিবি সদস্য নিতে বলেছেন। দুটি হেলিকপ্টারের এলসি হয়ে গেছে। আগামী বছর নাগাদ দেশে এসে পৌঁছাবে। একটি হেলিকপ্টার অত্যাধুনিক মানের। ২৬ জন সোলজার নিয়ে যে কোন প্রান্তে ছুটতে পারবে। সীমান্ত এলাকায় তরুণদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাজ করা হবে। মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তার প্রমাণ জেলখানাগুলো দেখেন। জেলখানার ক্যাপাসিটি ৩৫ হাজারের একটু বেশি। সেখানে জেলে বাস করছেন এখন ৯০ হাজারেরও বেশি। তার অর্ধেক মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে জেলে এসেছে। এ ছাড়া আইজিপিকে সীমান্ত এলাকায় দুর্বল ওসিদের পোস্টিং না দিয়ে একটু শক্তিশালী ওসি পোস্টিং দেয়ার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যাতে সীমান্ত এলাকায় মাদক বিক্রি না হয়। গরু আমদানির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় গরু আমদানি না হলে আমাদের লাভ। আমাদের কৃষকের লাভ বেশি। তারা খামার করে লাভবান হচ্ছে। সরকারীভাবে দেশে কোন গরু আমদানি হয় না। যা হয় তা বেসরকারী পর্যায়ে। গরু আমদানি করতে বিট খাটাল করে দেয়া হয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্য। সেটি আরও বাড়ানো যায় কি না তা চিন্তা করা হচ্ছে। তবে গরু আমদানি বেশি দিন থাকবে না। অচিরেই আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাচ্ছি। তখন গরু আমদানি টোটালি বন্ধ করে দেয়া হবে। নওগাঁর এমপি ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সীমান্তে যে কোন উপায়ে রাস্তা তৈরি করতে হবে।
×