ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেরামত করার পরই আকাশে বিকল ড্যাশ-৮ বিমান

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ৯ মার্চ ২০১৯

  মেরামত করার পরই আকাশে বিকল ড্যাশ-৮ বিমান

আজাদ সুলায়মান ॥ বার বার উড়োজাহাজে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। একের পর সর্বনাশ ঘটছে। মিলিয়ন ডলারের ইঞ্জিন পুড়ে নষ্ট হচ্ছে। গ্রাউন্ডেড হচ্ছে শত কোটি টাকা দামের উড়োজাহাজ। বিমানের প্রকৌশল শাখার অথর্ব, অপেশাদার কর্তাদের গাফিলতি আর কমিশন বাণিজ্যের দরুন এ ধরনের সর্বনাশ ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ গত বুধবারও ভারতের হায়দরাবাদ থেকে একটি ড্যাশ-৮-এর ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। গ্রাউন্ডেড হয়ে আছে বিমানের হ্যাঙ্গারে। এত বড় ঘটনা ঘটলেও বিমানের কারোর টনক নড়ছে না। এ সব নিয়ে বিমান প্রকৌশল শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক সাজ্জাতুর রহিমের কাছে প্রশ্ন রাখা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তিনি পরামর্শ দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার। জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ বলেছেন- এটা অনাকাক্সিক্ষত, আমরা ভাল ফেইথেই ওই এয়ারক্রাফটাকে হায়দরাবাদে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা দেশে ফেরার পথে একটা সমস্যা হয়ে গেছে। এখন হয়তো ঠিক করতে কিছু সময় লাগবে। বিমান জানিয়েছে, ভারতের হায়দরাবাদে ড্যাশ-৮ ‘সি-চেক’ করে ফেরার পথে বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়। বুধবার দেশে আসার পথেই এয়ারক্রাফটটির ইঞ্জিনের ওপরে থাকা ব্ল্যাংকেট পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে ইঞ্জিন অস্বাভাবিক উত্তপ্ত হওয়ায় ইঞ্জিন অয়েল বিপজ্জনক মাত্রায় চলে আসে। ফলে আকাশেই বড় ধরনের দুর্ঘটনার হুমকির মুখে পড়ে। যদিও এতে কোন যাত্রী ছিল না। বিমানের প্রকৌশল শাখা জানিয়েছে, চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতি ও ঝুঁকি নিয়েই এটি দেশে আসতে সক্ষম হয়। গত তিন দিন ধরে এটি হ্যাঙ্গারে গ্রাউন্ডেড। এয়ারক্রাফটটিকে এওজি (এয়ারক্রাফট অন গ্রাউন্ড) অবস্থায় রাখা হয়েছে। তবে এয়ারক্রাফটটির ইঞ্জিন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে কিনা সেটি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে ইতোমধ্যে এয়ারক্রাফটটির নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান কানাডার বোম্বায়ডিয়ার কোম্পানিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই বোম্বায়ডিয়ার প্রতিনিধিরা ঢাকায় আসবেন বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দিক আহমেদ। ওই ত্রুটি সারতে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি জানান, এয়ারক্রাফটটি কবে নাগাদ আবার অপারেশনে আসতে পারে তা এখনই সুনিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রকৌশল বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এয়ারক্রাফটটির নিউমেটিক লাইনের পাইপে ক্ল্যাপ খোলা ছিল। যে কারণে অয়েল লিক করায় এই সমস্যা তৈরি হয়। মূলত গত ২৫ জানুয়ারি এয়ারক্রাফটটিকে ভারতের হায়দরাবাদের ‘জিএমআর এ্যারো টেক কোম্পানি’তে পাঠানো হয় ‘সি-চেক’ (বড় ধরনের মেরামত) করানোর জন্যে। ১৫ দিনে ‘সি-চেক’ শেষ করার কথা থাকলেও সময় লেগেছে প্রায় দেড় মাস। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। ভাল উড়োজাহাজটি সেখানে পাঠিয়ে মেরামতের নামে আরও খারাপ করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিমানের সিনিয়র ম্যানেজমেন্টেই প্রশ্ন উঠেছে ‘জিএমআর এ্যারো টেক কোম্পানি’র সি-চেকের কাজের মান নিয়ে। এ সম্পর্কে একজন প্রকৌশলী বেশ দুঃখ করেই জনকণ্ঠকে বলেন, প্রকৌশল শাখার এখন যে অবস্থা তা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এমন একজন অথর্ব ব্যক্তিকে লাখ লাখ টাকা বেতনে পরিচালক পদে বসানো হয়েছে- যিনি বিমানের মতো একটা প্রতিষ্ঠিত এয়ারলাইন্সের এ্যারোনটিক্যাল সম্পর্কে যতটা নলেজ থাকার দরকার তার ছিটেফোঁটাও নেই। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই প্রকৌশল শাখায় একের পর এক উড়োজাহাজ যাান্ত্রিক ত্রুটির শিকার হচ্ছে। যখন তখন গ্রাউন্ডেড হচ্ছে। আগে পরে কাজ না করে-যাত্রী উড়োজাহাজে রেখে যান্ত্রিক ত্রুটি সারার মতো উদাসীনতার রেকর্ড গড়েছেন। হায়দরাবাদের মতো অখ্যাত কোম্পানির কাছে কেন এ উড়োজাহাজটিকে পাঠানো হলো জানতে চাইলে বিমানের কেউ মুখ খোলেনি। এ নিয়েও শোনা যায় নানা অভিযোগ। মূলত এ কাজের বিনিময়ে কেউ কমিশন বাণিজ্য করেছে কিনা সেটা তদন্ত করার দাবি উঠেছে। বিশেষ কোন সুবিধার বিনিময়ে এমন অনভিজ্ঞ কোম্পানির দ্বারস্থ হলেন কিনা-সেটি খুঁজে বের করা দরকার। এই ধরনের চেক সম্পন্নের পর এবং এয়ারক্রাফট ডেলিভারি নেয়ার আগে সব ঠিক আছে কি-না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিজস্ব মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা সর্বশেষ একবার দেখে নিতে হয়। ‘জিএমআর এ্যারো টেক কোম্পানি’ থেকে ‘সি-চেক’ শেষে বিমানের কোন মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা সব দেখে আনা হয়নি। এ বিষয়ে বিমানের একজন সিনিয়র প্রকৌশলী বলেন, যিনি কাজ বোঝেন, তাকে হায়দরাবাদ পাঠানো হয়নি। সেখানে কি ধরনের দুই নম্বরি করা হয়েছে সেটা ফাঁস হয়ে যাবার ভয়েই এমন কৌশল নেয় বিমান। এতে ফলাফল হয়েছে উল্টো। ‘সি-চেক’ এর জন্যে ভারতীয় ‘জিএমআর এ্যারো টেক কোম্পানি’কে কত টাকা প্রদান করা হয়েছে- সেটাও কেউ জানাতে পারেনি। তবে অর্থ শাখা জানিয়েছে, পৌনে দুই লাখ ডলারের বিনিময়ে এই ‘সি-চেক’ করে আনা হয়েছে। জানতে চাইলে এমডি মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, এটা বিব্রতকর। যদিও এয়ারক্রাফটে যে কোন সময় টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে কী কারণে এমনটি ঘটল আমরা খতিয়ে দেখছি।
×