ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

নর্থ সাউথ ভার্সিটির সমাবর্তন

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী ॥ নোবেল জয়ী জে রবার্টস

প্রকাশিত: ১১:০৮, ৭ মার্চ ২০১৯

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী ॥ নোবেল জয়ী জে রবার্টস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের মেধাবী উল্লেখ করে নোবেল জয়ী ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার রিচার্ড জে. রবার্টস বলেছেন, আমি অনেক বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কাজ করে দেখেছি তারা অনেক মেধাবী। অনেক বড় বড় সমস্যাও তারা সমাধান করতে পারেন। তবে আমি মনে করি জীবনে ফেল করাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফেল করলেই সফলতা অনেক কাছে চলে আসে। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেন, আমাদের প্রধান শক্তি তারুণ্যের শক্তি। তারাই এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বুধবার বেসরকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর বসুন্ধরায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে আয়োজিত সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবেল বিজয়ী ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার রিচার্ড জে. বরার্টাস। আরও উপস্থিত ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি এম এ হাশেম, উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মোঃ শাহজাহান, বেনজীর আহমেদ, উপ-উপচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক গিয়াস ইউ আহসান, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ। সমাবর্তন বক্তৃতায় স্যার রিচার্ড জে. বরার্টাস শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, জীবনে ফেল করাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফেল করলেই সফলতা অনেক কাছে চলে আসে। আমার জীবনে ফেলের অর্জনও নোবেল বিজয়ী হতে সহায়তা করেছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের জীবনের লক্ষ্যমাত্রা পরিবার থেকে ঠিক করে দেয়া হয়। তাই নিজেদের ইচ্ছা বা স্বপ্ন চাপা পড়ে যায়, সেটিকে আর বিকাশিত করা সম্ভব হয় না। তার দ্বারা নতুন কিছু উদ্ভাবন বা আবিষ্কার হওয়া সম্ভব হয় না। এক ধরনের হতাশা নিয়েই জীবন পার করে দেন। তাই সকল শিশু ও তরুণদের অন্তরে লুকিয়ে থাকা স্বপ্নকে জাগাতে হবে। তবেই বাংলাদেশে অনেক নোবেল বিজয়ী তৈরি হবে। নিজের জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, পদার্থ বিজ্ঞানের ওপর আগ্রহ ছিল। এ বিষয়ে আমি অনেক পড়ালেখা করেছি। বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। সেখানে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করেছি। এর সমধান করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েও আমি হতাশ হইনি। অবশেষে আমি তাতে সফল হয়েছি। এর অর্জন হিসেবে নোবেল বিজয়ী হতেও সহায়তা করেছে। বাংলাদেশে প্রসঙ্গে বিচার্ড বরার্টাস আরও বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরলেও এদেশে রাজনৈতিক কিছু সমস্যা রয়েছে। সেসব কাটিয়ে শিশু ও তরুণদের এগিয়ে নিলে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে। আমি অনেক বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কাজ করেছি। দেখেছি তাদের তারা অনেক মেধাবী। অনেক বড় বড় সমস্যাও তারা সমাধান করতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, আমাদের প্রধান শক্তি তারুণদের শক্তি। তারাই এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও জাতির পিতার অবদান পড়াতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় দেশকে এগিয়ে নিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। আবার অনেকে আইন অমান্য করে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ব্যবসার জন্য চলতে পারে না, সকলকে আইন মেনে চলতে হবে। উচ্চশিক্ষার চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকার অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। দেশের শিল্প ও সেবা খাতের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আমি আশা করি, উচ্চশিক্ষার প্রত্যাশিত মান নিশ্চিত করতে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইন অনুযায়ী তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বিষয় বাছাই, শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, শিক্ষাদানের পদ্ধতি অব্যাহতভাবে উন্নত ও যুগোপযোগী করবে। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে সেবার মানসিকতা নিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। মাদক, জঙ্গী ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়তে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের সমাজে এখন সহিষ্ণুতার অভাব লক্ষ্য করি। পরমত সহিষ্ণুতার সংস্কৃতিকে ধারণ করার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। নর্থ সাউথ নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠান। ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। তাদের অনেকেই দেশে-বিদেশে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে। আমি প্রত্যাশা করি, এ বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত মান ধরে রাখতে সক্ষম হবে এবং গবেষণাক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেবে। সমাবর্তনে তিন হাজার ৪৮৭ শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী প্রদান করা হয়। দুজনকে চ্যান্সেলর পদক ও নয় জনকে ভাইস চ্যান্সেলর পদক দেয়া হয়।
×