ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওসব বাড়ির গ্যাস বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়

পুরান ঢাকায় আরও চার বাড়িতে রাসায়নিকের সন্ধান

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ৬ মার্চ ২০১৯

পুরান ঢাকায় আরও চার বাড়িতে রাসায়নিকের সন্ধান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টানা পঞ্চম দিনের মতো পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের টাস্কফোর্স। পাঁচ টিমের সাঁড়াশি অভিযানে মাত্র চার বাড়িতে কেমিক্যালের গুদাম পাওয়া গেছে। বাড়ি চারটির বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ নিয়ে পাঁচ দিনের অভিযানে ৭৪ বাড়িতে কেমিক্যালের গুদাম ও কারখানা থাকায় বাড়িগুলোর পানি, বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। টানা অভিযানে পুরান ঢাকার অধিকাংশ এলাকা থেকে কেমিক্যালের গুদাম সরে গেছে। যে কারণে পাঁচ টিমের সাঁড়াশি অভিযানে মাত্র চারটি কেমিক্যাল গুদামের সন্ধান মিলেছে। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। যেসব বাড়ির পানি, বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে সেসব বাড়িতে কবে নাগাদ বা কি প্রক্রিয়ার মধ্যে আবার বিদ্যুত, গ্যাস ও পানির সংযোগ দেয়া হবে, সে বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। মঙ্গলবার বেলা এগারোটার দিকে পুরান ঢাকার পাঁচ এলাকায় এক সঙ্গে অভিযানে নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তরফ থেকে গঠিত টাস্কফোর্সে পাঁচ দল। তবে মঙ্গলবারের অভিযানের সময় কোন বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেনি। ইতোপূর্বের সবকটি অভিযানের দিন বাড়ির মালিক ও এলাকাবাসী অভিযানকালে বাধার সৃষ্টি করেছিল। এমনকি গাড়ি ভাংচুর পর্যন্ত চালিয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় জানান, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শরীফ আহমেদ খানের নেতৃত্বে একটি দল অভিযানে নামে। দলটি বেলা সোয়া এগারোটার দিকে পুরান ঢাকার বকশীবাজারের ঢাকা টাওয়ারে অভিযান চালায়। অভিযানে হাজী আবুল হাসান টুটুল নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন আট তলা ওই ভবনের নিচ তলায় রাসায়িনের গুদামের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে ভবনটির বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গির্জা উর্দু রোডের ১০/এ নম্বর হোল্ডিং, জয়নাগ রোড ও হোসেনী দালানের তাঁতখানা লেনে অভিযান চালায়। অভিযান শেষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ জানান, পাঁচ স্থানে অভিযান চালিয়ে চারটি গোডাউন পাওয়া গেছে। গোডাউনগুলোতে প্লাস্টিক দানা ও প্লাস্টিক জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। তিনি বলছিলেন, অভিযানের পর থেকেই প্লাস্টিক দানা ও প্লাস্টিক কারখানার ব্যবসায়ীরা দাবি করে আসছিলেন, প্লাস্টিক কেমিক্যাল নয়। প্লাস্টিক দানায় বা প্লাস্টিকের জিনিসপত্রে আগুন লাগলে প্রচুর ধোঁয়া হয়। আর এতে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। চকবাজারের অগ্নিকা-ে প্লাস্টিক দানায় আগুন লেগে একই ঘটনা ঘটেছে। প্লাস্টিক দানায় আগুন লাগলে তা ভয়াবহ হয়। তাই ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে আবাসিক ভবনে কোন প্লাস্টিক দানার গুদাম বা কারখানা রাখা যাবে না। এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কোন বাসা বাড়িতে প্লাস্টিক দানা থাকলে, তা দ্রুত নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। প্রসঙ্গত, গত ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ৭১ জনের মৃত্যু হয়। দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে ৩৫। এমন ঘটনার পর আবারও কেমিক্যাল নিয়ে কথা ওঠে। চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকা-ে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় সরকার পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গুদাম সরাতে কড়া নির্দেশ জারি করে। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। টাস্কফোর্স গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে অভিযান শুরু করে। এদিন ২০ বাড়ির পানি, বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বাড়ির লোকজনদের বাড়ি থেকে কেমিক্যালের গুদাম নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়। পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক গত শনিবার সকাল থেকেই টাস্কফোর্সের চার দল অভিযানে নামে। অভিযানকালে বাড়ির মালিক ও স্থানীয়রা বাধা দেয়। গত শনিবার চালানো অভিযানে বাধা দেন স্থানীয়রা। পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন নিজে নেতৃত্ব দিয়ে অভিযান চালায়। অভিযানে ১৩ বাড়িতে কেমিক্যালের গুদাম থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব বাড়ির পানি, বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। গত রবিবার তৃতীয় দিনে চকবাজারের হরনাথ ঘোষ রোড থেকে অভিযান শুরু হয়। ওদিন মোট আটটিতে কেমিক্যালের গুদাম পাওয়া যায়। পরে ওসব বাড়ির বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। রবিবার লালবাগের শহীদনগরের রাজনারায়ণ ধর রোডে অবৈধ রাসায়নিক ও প্লাস্টিকের কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে টাস্কফোর্স। বিক্ষুব্ধ স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা টাস্কফোর্স সদস্যদের দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করেছিল। পরে বিক্ষোভকারীরা বিদ্যুত বিভাগের একটি গাড়িও ভাংচুর করে। এতে পুরো লালবাগসহ আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এদিকে পুরান ঢাকার কেমিক্যালের ব্যবসায়ীরা টাস্কফোর্সের কাছে কেমিক্যালের গুদাম সরিয়ে নিতে অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর সময় দিতে হবে। টাস্কফোর্স সূত্রে জানা গেছে, গুদাম সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সময় দেয়ার বিষয়টি আমলে নেয়া হচ্ছে না। এমনকি যেসব বাড়ির পানি, বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, সেসব বাড়িতে কোন প্রক্রিয়ায় আবার এসব সেবা চালু করা হবে, সে বিষয়েও কোন আলোচনা হয়নি। অভিযানগুলোতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তাসহ বিস্ফোরক অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ঢাকা ওয়াসা ও ডিপিডিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয়রা বলছেন, টানা অভিযানের কারণে বাড়ির মালিক ও গুদাম মালিকদের অনেকেই নিজ উদ্যোগেই বাড়ি থেকে কেমিক্যাল সরিয়ে ফেলেছেন। যা খুবই ইতিবাচক। এমন অভিযান অব্যাহত থাকলে আগামী এক সপ্তাহ পর পুরান ঢাকার কোন বাড়িতে কেমিক্যালের গুদাম তো পরের কথা কেমিক্যালের বস্তাও পাওয়া যাবে না।
×