ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত নৌরুট দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে পারে

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাংলাদেশ-ভারত নৌরুট দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে পারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌপথ ও নৌ চলাচলের সুযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সড়ক ও আকাশ পথে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ভাল থাকলেও পিছিয়ে রয়েছে নৌপথ। যদিও নৌপথ ও নৌ চলাচলের সুযোগ নিতে পারে উভয় দেশ। এক্ষেত্রে সুযোগ বাড়ানো গেলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বল্প খরচে ভ্রমণও আরামদায়ক হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘সমুদ্র শিল্প : বাংলাদেশ-ভারতের সামনে বড় সুযোগ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। ইন্ডিয়া চেম্বার অব কমার্স আইসিসি ও ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আইবিসিসি আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌ সচিব আবদুস সামাদ ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত ভারতীয় হাই কমিশনার আদর্শ সোয়াইকা। এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমও আইবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ১৯৭২ সালে প্রথম স্বাক্ষরিত অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ও বাণিজ্য প্রটোকল অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে নদীপথে বাণিজ্য ও যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। তখন থেকে প্রটোকলটি কার্যকর এবং ২/৩ বছরের জন্য নিয়মিত নবায়ন হয়ে আসছে। কার্গো চলাচলের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দুই দেশের মধ্যে নদীপথ ব্যবহারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও ভারতের অভ্যন্তরীণ নৌপথ কর্তৃপক্ষের ভ্রমণ অনুমতির প্রয়োজন হয়। অনুষ্ঠানে ড. মশিউর রহমান বলেন, জলপথে সংযোগ তৈরি হলে বাংলাদেশ-ভারত দুদেশই লাভবান হবে। স্বাধীনতার পর ’৭২ সালে দু’দেশের মধ্যে নৌ যাতায়াত ছিল। অভিন্ন নদী প্রশ্নে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের জন্য সহায়ক নয়। এসব কারণে নদী শুকিয়ে যায়। আবার বাংলাদেশের জটিল কাস্টমস ইত্যাদিও কারণ হিসেবে কাজ করেছে। তিনি বলেন, জলযোগাযোগ বাড়াতে দু’দেশের সরকারকে ব্যবসায়ী এবং যাত্রীদের কথা শুনে সমাধান করতে হবে। যৌথ জলবিদ্যুতের ব্যবস্থা করলে কম দরে শিল্পে বিদ্যুত দেয়া সম্ভব হবে। দু’দেশের উদ্যোক্তারা যৌথভাবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করতে পারে। আদর্শ সোয়াইকা বলেন, সম্ভাবনা অনুযায়ী দেশের জলযোগাযোগ কাজে লাগানো যায়নি। তবে ভারত আঞ্চলিক সংযোগ বাড়াতে বন্দর উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের লাইন অব ক্রেডিটসহ বিভিন্ন উদ্যোগে জলপথের উন্নয়ন হচ্ছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশের রফতানি বাড়ছে। এখন আর পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় জাহাজ এ দেশ থেকে খালি ফিরে যাবে না। নৌপরিবহন সচিব আবদুস সামাদ বলেন, জলপথের সংযোগ পণ্য ও পর্যটন ও যাত্রী পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দু’দেশের মধ্যে নৌ যাতায়াত, পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলেন তিনি। দু’দেশের বাণিজ্য প্রসঙ্গে নৌপরিবহন সচিব বলেন, বাংলাদেশে ভারতের আমদানির তুলনায় রফতানি ৭ থেকে ৮ গুণ বেশি। পণ্য নিয়ে ভারতের জাহাজ আসে। ফিরে যায় খালি। দু’দেশের মধ্যে জলপথের যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে বিশাল যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে তা কাজে লাগাতে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে আরও তৎপরতা থাকা প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। প্রসঙ্গত, অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ও বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রটোকলে চারটি রুট রয়েছে। আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যে নিয়োজিত অপর দেশের নৌযান চলাচলে সুবিধা দিতে প্রত্যেকটি দেশের পাঁচটি বন্দরকে ‘পোর্টস অব কল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রটোকল অনুযায়ী প্রতিটি দেশে চলাচলকারী নৌযানসমূহকে নির্দিষ্ট বাঙ্কার পয়েন্ট থেকে জ্বালানি ও প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রটোকল রুট দিয়ে বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন ট্রাফিক পরিবাহিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে ১৪ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য কার্গো এবং প্রায় ৫ হাজার ট্রানজিট কার্গো। আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য কার্গোর মধ্যে প্রধানত থাকে সিমেন্ট, ক্লিঙ্কার ও ফ্লাই এ্যাশ।
×