ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ধান পেতে চলছে আটক রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদ

হলি আর্টিজানে হামলার পলাতক জঙ্গী খালিদ কোথায়

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

হলি আর্টিজানে হামলার পলাতক জঙ্গী খালিদ কোথায়

শংকর কুমার দে ॥ গুলশান হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার চার্জশীটভুক্ত পলাতক আসামি শহীদুল ইসলাম খালিদ কোথায়? খালিদের সন্ধান পেতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে হলি আর্টিজানে হামলার আসামি মামুনুর রশিদ ওরফে রিপনকে। রিপন ও খালিদ এক সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যায়। রিপন ধরা পড়ছে, তবে এখনও পলাতক খালিদ। দেশ ‘অস্থিতিশীল’ করতে দেশকে একটি ‘জঙ্গী রাষ্ট্র’ বানানোর জন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়েও দেশের ভেতরে হামলার ছক কষেছিল জেএমবি। নির্বাচনের পরও দেশের বিভিন্নস্থানে জঙ্গী হামলার মাধ্যমে নাশকতা চালানোর জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে পলাতক জঙ্গীরা। জিজ্ঞাসাবাদে এই ধরনের তথ্য দিয়েছে মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন ওরফে রেজাউল ওরফে রেজাউল করিম ওরফে আবু মুজাহি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতে বেশ কিছু দিন কাটিয়ে দেশে ফিরে নব্য জেএমবিকে আবার সংগঠিত করার চেষ্টায় ছিল নিষিদ্ধ ওই দলটির শূরা সদস্য রিপন। দেশের কয়েকটি স্থানে নাশকতার পরিকল্পনাও সাজাচ্ছিল সে। বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেয়া গুলশান হামলার ঘটনায় ছয় জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারের মুখোমুখি করতে পারলেও পলাতক ছিল দুই জঙ্গী। ৩১ বছর বয়সী মামুনুর রশিদ রিপন তাদেরই একজন। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে ঢাকার দিকে আসার সময় শনিবার রাত ১১টার পর গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় একটি বাস থেকে রিপনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গুলশানের হলি আর্টিজান মামলার পলাতক আসামি মামুনুর রশিদ রিপনকে গ্রেফতারের পর সবুজবাগ থানার এক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। বাসাবো বালুর মাঠে জঙ্গীদের গোপন বৈঠকের ঘটনায় গত বছরের এপ্রিল মাসে দায়ের করা ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রিপন। রবিবার তাকে আদালতে হাজির করে সবুজবাগ থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ কফিলউদ্দিন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে রেজাউল করিম ওরফে রেজা বলেছেন, তিনি নব্য জেএমবির একজন শূরা সদস্য। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার ঘটনায় অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার জন্য ৩৯ লাখ টাকা ও অস্ত্র, বিস্ফোরক সরবরাহ করেছিল রিপন। এ ছাড়াও জঙ্গী বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট গুলশান হামলায় দুবাই থেকে আসা ১৪ লাখ টাকা বাংলাদেশে গ্রহণ করে বলে তথ্য রয়েছে তদন্ত সংস্থার কাছে। দুবাইয়ে পলাতক মুফতি শফিকুর রহমান নব্য জেএমবিকে নিয়মিত অর্থ সহায়তা করত। বাশারুজ্জামান ওই অর্থ সংগ্রহ করে মূল সমন্বয়ক তামিমের কাছে দিত। বাকি দুই জঙ্গীর একজন হলেন সপরিবারে সিরিয়ায় পলাতক ডাক্তার রোকন। গুলশানে জঙ্গী হামলার আগে নিউ জেএমবির তহবিলে টাকা দেয় ডাক্তার রোকন। সংগঠনটির শূরা বোর্ডের এক সদস্য টাকা গ্রহণ করে। দুই দেশ ঘুরে হাত বদল হয়ে এ টাকা বাংলাদেশে পৌঁছায়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ২০১৮ সালের প্রথম দিকে আবার সক্রিয় হওয়া চেষ্টা করে রিপন। জেএমবির বিভিন্ন গ্রুপকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন তিনি। পুরনো ও আত্মগোপনে থাকা জঙ্গীদের নিয়ে এই পুনর্গঠনের কাজটি করছিলেন রিপন। ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নির্বাচনের আগে বেশ কিছু জায়গায় তারা নাশকতার ছক কষছিল বলে গোয়েন্দা তথ্য পায় র‌্যাব। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে জেএমবির জঙ্গীরা দেশের বিভিন্নস্থানে নাশকতা চালানোর জন্য তৎপর হয়। কিন্তু সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর আবারও সক্রিয় হয় জঙ্গীরা।
×