ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

পুরান ঢাকার সব কেন্দ্রে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

পুরান ঢাকার সব কেন্দ্রে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি

এম শাহজাহান ॥ পুরান ঢাকার সব কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমবারের মতো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট দিয়েছে ঢাকা-৬ আসনের ভোটাররা। ওয়ারী, গে-ারিয়া, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, লক্ষ্মীবাজার, সিদ্দিক বাজার ও বংশালের একাংশ নিয়ে এই সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারিত। মাত্র ১০ সেকেন্ডে ইভিএমে ভোট দিয়ে বেরিয়ে এই আসনের নতুন ভোটার তরুণ-তরুণীদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, কাজলারপাড় ও ডেমরা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসনে। জাতীয় সংসদের ১৮০নং আসন ও ঢাকা-৭ আসনের সাধারণ ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল আটটায় ভোটগ্রহণের শুরুর পর থেকেই এই এলাকার ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে চলে আসেন। ঢাকার বংশালের একাংশ, কোতোয়ালি, চকবাজার, নাজিরাবাজার, লালবাগ, কামরাঙ্গীর চর ও হাজারীবাগের একাংশ নিয়ে এই আসন গঠিত। পুরান ঢাকার সব আসনে মহাজোট প্রার্থীদের সমর্থক, ভোটার ও শুভাকাক্সক্ষীদের মহড়া ছিল চোখে পড়ার মতো। রবিবার সকাল আটটায় ভোট শুরুর পর থেকে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। ভোটগ্রহণের শেষ মুহূর্ত বিকেল ৪টা পর্যন্ত সব কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। ভোটগ্রহণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী শহীদ জিয়া গার্লস এ্যান্ড কলেজ ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার অসিত বরুণ বিশ্বাস জনকণ্ঠকে বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। কোন রকম বিশৃঙ্খলা ছাড়া সারাদিন ভোটগ্রহণ চলবে। তিনি বলেন, সব ধরনের নির্বাচনী সংঘাত এড়াতে কেন্দ্রে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত আছেন। ওই কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কর্তব্যরত কেন্দ্র ইনচার্জ সাব-ইন্সপেক্টর মোস্তফা বলেন, প্রশাসনের কঠোর নজরদারির মধ্যে ভোটগ্রহণ চলছে। তাই নির্বাচনী সংঘর্ষ ও সংঘাতের কোন সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, এই কেন্দ্রে সব দলের এজেন্ট রয়েছে। ফলে জাল ভোট প্রদানেরও কেউ সাহস পাচ্ছে না। সকাল আটটায় নারিন্দা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ইভিএমে ভোট শুরু ॥ পুরান ঢাকার-৬ আসনে সকাল আটটায় ইভিএমে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়। ইভিএম পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে তরুণ প্রজন্মের ভোটাররা। এতে বয়স্ক ভোটারদের একটু অসুবিধা হলেও শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের ভোটাররা ছিল খুশি। নারিন্দা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন লারমিনি স্ট্রিটের বাসিন্দা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএর দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী কামরুন নাহার। সকালে ভোট দিয়ে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথম ভোট চমৎকার অনুভূতি। ইভিএম সত্যিই একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী পদ্ধতি। মাত্র ১০ সেকেন্ডে ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকার দুটিসহ দেশে মোট ৬টি আসনে ইভিএমে ভোট নেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে সারাদেশে এই পদ্ধতি চালু হওয়া দরকার। কারণ এতে সময় বাঁচার সঙ্গে সঙ্গে জাল ভোট দেয়ার সংস্কৃতি বন্ধ হয়ে যাবে। সকাল ৯টায় টিপু সুলতান রোডের গ্রাজুয়েট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন ॥ পুরান ঢাকার এই কেন্দ্রে সকাল ৯টায় ভোটারদের লম্বা লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোটারদের সামলাতে এই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখা যায়। এই কেন্দ্রের ভোটার তাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদ চৌধুরী বিজয়ী হবেন। তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এছাড়া বিএনপির কোন প্রার্থী এবার এই আসনে প্রচার কার্যক্রম চালাননি। ফলে তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও কম। বেলা ১১টা কামরুন নেছা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোটারদের ভিড় ॥ সকালে ভোটগ্রহণের পর থেকে বেলা ১১টার মধ্যে এই কেন্দ্রের চারপাশে ভোটার ও সমর্থকদের ভিড় বাড়তে থাকে। শান্তিপূর্ণভাবে এই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ইভিএম ভোট দিয়ে এই কেন্দ্রের ভোটার আশিষ কুমার সাহা বলেন, এটি একটি প্রযুক্তিবান্ধব। এই যন্ত্রে ঝামেলাহীনভাবে ভোট দেয়া সম্ভব এবং ভোট দিতে সময়ও কম লাগে। ব্যালটে ভোট দেয়ার তুলনায় এটিই ভাল সিস্টেম। কামরুন নেছা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোঃ সাইদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ইভিএমএ ভোটাররা ভোট দিতে পেরে খুশি। আমরাও ভোট নিতে পেরে খুশি। কারণ এই পদ্ধিতে ভোটগ্রহণ করা এবং ভোট দেয়া অনেক সহজ। ঢাকা-৫, যাত্রাবাড়ী শহীদ জিয়া গার্লস স্কুল কেন্দ্রে দুপুর ১২টায় উপচেপড়া ভিড় ॥ এই আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ হাবিবুর রহমান মোল্যা। আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন বিএনপির নবী উল্লাহ নবী। তবে নৌকার কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে বিএনপি কর্মী ও সমর্থক এই কেন্দ্রে তেমন দেখা যায়নি। তবে ধানের শীষের এজেন্ট ছিল কেন্দ্রের প্রতিটি বুথে। এই কেন্দ্রের ধানের শীষের এজেন্ট রাবেয়া খাতুন জনকণ্ঠকে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। কোন জাল ভোট হচ্ছে না। তিনি বলেন, তিনি সম্পূর্ণ চাপমুক্তভাবে এজেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তফা বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সক্রিয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ কারণে গ-গোল ছাড়াই ভোটগ্রহণ চলছে। ভোটের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাজলার পারের বাসিন্দা চা বিক্রেতা নাজমুল জনকণ্ঠকে বলেন, এই আসনে মোল্যা ভাই জিতবেন। তিনি গরিবের বন্ধু। গত নির্বাচনে জেলে থেকেও তিনি জয়ের পালা পড়েছিলেন। এখন পরিস্থিতি ভাল, তিনি এবার ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চেয়েছেন। ঢাকা-৭ আজিমপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বেলা ২টা ॥ আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে হাজী সেলিম এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। পুরান ঢাকার এই আসনে হাজী সেলিমের বাইরে যেন কিছু নেই। ভোটাদের পাশাপাশি তার কর্মী সমর্থকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এই কেন্দ্রের ভোটার আজিমপুরের বাসিন্দা ফারুক হাসান বলেন, এই আসনে এবার ধানের শীষের প্রার্থী ভোট চাইতে আসেনি। অনেকে বলছে তিনি বহিরাগত। এ কারণে পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দারা এবারও নৌকায় ভোট দিয়ে হাজী সেলিমকে বিজয়ী করবে। যদিও গত নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়েছিলেন। ভাগলপুর সরকারী বিদ্যালয়ে শেষ সময়েও ভোটারদের ভিড় ॥ বিজিবির গেট সংলগ্ন ভাগলপুল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের শেষ সময় বেলা সাড়ে তিনটায়ও ভোটারদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে অনেক ভোটার স্লিপ না থাকায় ভোট দিতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন।
×