ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমরাই আসছি, আনন্দবাজারকে হাসিনা

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

আমরাই আসছি, আনন্দবাজারকে হাসিনা

বিডিনিউজ ॥ টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের আনন্দবাজার ডিজিটালকে গত বুধবার এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, ‘আমরাই আসছি। কারণ, মানুষ আমাদেরই চাইছেন।’ আনন্দবাজার জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় সুধাসদনে বসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার বিপুল আস্থা। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। জনগণের ভোটেই আমরা নির্বাচিত হব।’ শেখ হাসিনা আনন্দবাজারকে বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা আগের মতো অত চ্যালেঞ্জিং নয়। বৈরিতার পরিবেশও নেই। বরং আমাদের পক্ষে একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর আগের নির্বাচনগুলোয় একটা বিভেদ লক্ষ্য করতাম। এবার কিন্তু একচেটিয়াভাবে সকলের সমর্থনটা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। সেটা টেরও পাচ্ছি।’ ৩০ ডিসেম্বর ভোট সামনে রেখে শেখ হাসিনার বেসরকারী খাত উন্নয়ন-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অর্থায়নে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (আরডিসি) করা একটি জনমত জরিপে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবার ২৪৮টি আসনে জয়ী হতে পারে, আর বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেতে পারে ৪৯টি আসন। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতাসীন হচ্ছে- এতটা নিশ্চিত কিভাবে হচ্ছেন- এমন প্রশ্ন শেখ হাসিনার সামনে রেখেছিল আনন্দবাজার। জবাব দিতে গিয়ে দশম সংসদ নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে সহিংসতার কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। তিনি বলেন, ওই নির্বাচনের সময় প্রায় ৬০০ স্কুলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল, প্রিসাইডিং অফিসার হত্যা করা হয়েছিল, তৈরি করা হয়েছিল ব্যাপক জনদুর্ভোগ। তার ভাষায়, সেসব কথা ‘মানুষ ভুলে যায়নি’। সে সময়ে জনগণই রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং তারাই আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সেই জনগণ আবার তাকে ভোট দেবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে উদ্ধৃত করে আনন্দবাজার লিখেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরে সহিংসতার জন্য বিএনপি জনসমর্থনহীন হয়ে পড়ে। আর তাতেই আওয়ামী লীগের ফের সরকার গঠনের সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মূল প্রতিদ্ব›দ্বী কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেখ হাসিনা আনন্দবাজারকে বলেন, ‘নালিশ করার পাশাপাশি বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং মিথ্যা কথা বলতে ওরা ভীষণ পারদর্শী।’ বিএনপির পক্ষ থেকে এবার প্রতিটি আসনে একাধিক ব্যক্তিকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়ায় তাদের নিজেদের মধ্যেই সংঘাত শুরু হয়েছে বলেও দাবি করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দলের পুরনো বা জিতবেন এমন নেতাদের নমিনেশন দেয়নি ওরা। যে কারণে বঞ্চিতদের কাছে ওদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে।’ আনন্দবাজারকে শেখ হাসিনা বলেন, এখনকার তরুণরা আওয়ামী লীগের বিষয়ে ‘খুবই উৎসাহী’। বিএনপির সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা বিকৃতির ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে সত্যকে জানার একটা আগ্রহ রয়েছে। ইন্টারনেটে খুঁজলেই একাত্তরের অনেক তথ্য এখন জানা যায়। ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার বিষয়টি এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। ‘এর জেরে আওয়ামী লীগের প্রতি যুব স¤প্রদায়ের মতটাই পাল্টে গিয়েছে।’ নির্বাচনী সফরে জনগণের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সেই ভালবাসাটা দেখতে পেলাম। জানেন, তারা অন্তর থেকে চাইছেন আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক। জনগণ এটা জানেন, আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই তাদের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে।’ বিএনপির মনোনয়নে জামায়াতে ইসলামীর ২২ জনের ভোট করার প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘জামায়াত তো গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। মেয়েদের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া থেকে ঘরবাড়ি দখল করেছিল। ওদের নমিনেশন দেয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মানুষ শঙ্কিত।’ ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে থাকা এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেনের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে গণফোরাম গঠনের পর সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানমণ্ডি থেকে দাঁড়িয়ে কামাল হোসেনের জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই তিনি কিনা গেলেন জামাত-বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে? ‘আমি অবাক হইনি। কারণ কী জানেন? উনার শ্বশুরবাড়ি পাকিস্তানে। ছেলেদের একটু শ্বশুরবাড়ির টানটা বেশি থাকে।’ আনন্দবাজার ডিজিটাল লিখেছে, সাক্ষাতকারের শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনার কাছে তারা জানতে চেয়েছিল, ভোটের ফল কেমন হবে? উত্তরে শেখ হাসিনা হেসে বলেন, ‘ওই যে প্রথমেই বলেছিলাম, আমরাই আসছি। কারণ, মানুষ আমাদেরই চাইছেন।’’
×