ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পায়রায় দিনবদলের আলোয় ১৩৬ পরিবার

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

 পায়রায় দিনবদলের আলোয় ১৩৬ পরিবার

ওরা এখন দিন বদলের আলোয় হাঁটতে শুরু করেছেন। ছিলেন অদক্ষ পেশার অনির্ধারিত কর্মের মানুষ। অনিশ্চয়তার দোলাচালে দুলছিল জীবিকার চাকা। চাকায় ছিল না কোন গতি। আর এখন বদলে যাচ্ছে পেশার ধরন। পরিচিত দক্ষ কর্মী হিসেবে। এরা এখন মানবসম্পদে পরিণত হতে চলেছেন। এদেরই একজন শারমিন সুলতানা শিল্পী। বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিন মাসের। তিন মাস আগেও শারমিন গ্রামের এক কিশোরী পরিচয় ছিল। এখন চটপটে কথা বলেন। প্রশিক্ষিত কম্পিউটার অপারেটর। জেলে ও কৃষি পেশার মিজানুর তো রীতিমতো হতবাক করা কথাবার্তা বললেন। মেকানিক্যাল মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন লালুয়ার মহল্লাপাড়ার এই মানুষটি। এখন গাড়ি চালানো কিংবা ইঞ্জিন মেরামতের একজন প্রশিক্ষিত কর্মী। জীবিকা নির্বাহে তার পেশার অনিশ্চয়তা নেই-নিজের দাবি এমন। কেটে গেছে। মাইক হাতে নিয়ে অনুভ‚তি প্রকাশ করলেন এভাবে, ‘আই এ্যাম নট ফার্মার। আই এ্যাম নট ফিশারম্যান। আই এ্যাম মোটর ড্রাইভার।’ তার দাবি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সদিচ্ছায় তার জীবনে এক নতুন আলো জ্বালিয়ে দিয়েছেন। আর এ কাজটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। রাবনাবাদ পাড়ের বদলে যাওয়া মিজানুর যেন নতুন পেশার ভাবনায় এখন বিভোর। দাবি করলেন, দক্ষতার উন্নয়ন করেছেন। এখন একটি চাকরিও দিন। রাজমিস্ত্রির প্রশিক্ষণ নেয়া রুহুল আমিন জানালেন, প্রশিক্ষিত হওয়ার এই আলো যেন ধরে রাখতে পারেন। লালুয়ার ১১ নং হাওলা গ্রামের বাসিন্দা আনিসুর রহমান। বয়স ৫০। পাঁচ জনের সংসারে ভরসা কৃষিকাজ। বসতভিটাসহ এক একর জমির মালিক। সবটুকু পায়রা বন্দর অধিগ্রহণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য হিসেবে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন তিনি একজন দক্ষ নির্মাণ শ্রমিক। পুরনো কৃষি পেশা বদলে যাবে। মানুষটি সনদ হাতে পেয়ে কিছুটা দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব ভুগছিলেন। তিনটি মাসে প্রশিক্ষণকালীণ দৈনিক পাঁচ শ’ করে টাকাও পেয়েছেন। বাড়িঘরসহ জমির ক্ষতিপূরণের টাকাও পাবেন। গৃহপুনর্বাসনের একটি পাকা ঘর পাবেন। এসব ভাবতেই তিনি অবাক। যেন যুগোপযোগী একটি পরিকল্পনার ফসল পাচ্ছেন এ মানুষটি। জমি-ঘর যাবে প্রথম আফসোস ছিল। এখন আর নেই আনিসুরের। জানালেন আনিসুর তাঁদের ট্রেডে ৩৬ জন এখন দক্ষ নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। চারিপাড়ার শাহাবুদ্দিন প্যাদা। তিন মাস আগেও জাল বাইতেন। মাছ ধরতেন রাবনাবাদ নদীতে। লেখাপড়া জানেন না। চার জনের সংসারের বোঝা বহনকারী মানুষ তিনি। এখন প্রশিক্ষিত কর্মী। বাড়িসহ ৩০ শতক জমির মালিক। জানালেন শাহবুদ্দিন, হাতেনাতে শিখেছেন। কোন সমস্যা হয়নি। মানুষগুলোর সবাই যেন এখন নিজেকে ভরসা করতে পারছেন। নিজেকে দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো মানুষে পরিণত করেছেন। লালুয়ার ধঞ্জুপাড়া গ্রামের আব্দুল করিম। তাগড়া যুবক। অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিন মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণে একটি সনদ পেয়েছেন। তার শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি এটি বড় অর্জন বলে মনে করছেন করিম। ৩ ডিসেম্বর পায়রা বন্দরে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রথম দফায় ১৩৬ সদস্য তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে সনদ নিতে এসে এমনসব অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। পায়রা বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (ই, এনইউপি, এনডিসি, পিএসসি, বিএন) জানান, ৩৫ ট্রেডে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ৪২০০ পরিবারের থেকে একজন করে সদস্যকে এভাবে কর্মদক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ শেষে সনদ দেয়া হবে। যেন কেউ বেকার না থাকে। জরিপ করে ডরপ এনজিওর মাধ্যমে নৌবাহিনীর উদ্যোগে সুচারুভাবে এ প্রশিক্ষণ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করা হবে। পাশাপাশি জমিহারাদের ক্ষতিপূরণের টাকার পাশাপাশি ঘর হারাদের পুনর্বাসনে ৬টি মৌজায় পাকা বসতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া এসব পরিবারের সদস্যদের বেসিক কম্পিউটার ছাড়াও মোটর ড্রাইভিং, মোবাইল সার্ভিসিং, ব্রয়লার ও ককরেল পালন, হাঁসমুরগির খাবার তৈরি, পারিবারিকভাবে গাভী পালন, বসতভিটায় সবজিচাষসহ জীবন-জীবিকার সহায়ক কর্মসংস্থানভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। চারটি ইউনিয়নের সাত হাজার একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে পায়রা সমুদ্রবন্দর। যেন এরা সবাই দিন বদলের আলোয় আলোকিত মানুষে পরিণত হয়েছেন। -মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×