ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্র্রাহ্মণবাড়িয়া হানাদার মুক্ত আজ

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

 ব্র্রাহ্মণবাড়িয়া হানাদার মুক্ত আজ

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ আজ ৮ ডিসেম্বর। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস। এদিন পাকহানাদার মুক্ত হয় সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি স্মরণীয় নাম। ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংস হামলার পর ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত পুরো জেলা ছিল রনাঙ্গণ এলাকা। ১৯৭১ সালের এদিনে ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে স্বজন হারানো ব্যথা ভুলে গিয়ে জয়বাংলা সেøাগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র খচিত রক্তলাল পতাকা উত্তোলন করা হয়। জেলার কসবা উপজেলার মন্দভাগ থেকে শুরু করে সিলেট জেলার মনতলা সীমান্ত পর্যন্ত পুরো এলাকায় নয় মাসব্যাপী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে। চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ’৭১ সালের ৩০ অক্টোবর সম্মুখ যুদ্ধের মাধ্যমে মুকন্দপুর মুক্ত হয়, এরপর কসবা ও আখাউড়া মুক্ত হয়। ৭ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানী বাহিনী চতুুুর্মুখী আক্রমণের আশঙ্কায় রাতের বেলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে আশুগঞ্জের দিকে চলে যায়। ৮ তারিখ সকালে বিনা বাধায় মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনী শহরে প্রবেশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। চাঁদপুর নিজস্ব সংবাদদাতা চাঁদপুর থেকে জানান, শনিবার চাঁদপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে চাঁদপুর পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিল। চাঁদপুর থানার সামনে বিএলএফ বাহিনীর প্রধান মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ প্রথম চাঁদপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল চাঁদপুরে পাক হানাদার বাহিনী দুটি বিমান থেকে সেলিংয়ের মাধ্যমে প্রথম আক্রমণের সূচনা করে। প্রথম দিনেই হামলায় চাঁদপুর শহরের পুরান বাজারের একজন নারী পথচারী নিহত হন। পরদিন ৮ এপ্রিল বিকেলে প্রায় ৫শ’ পাকসেনা বোঝাই একটি বহর চাঁদপুর আসে। শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়টি অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে তারা। এ স্কুলের মাঠ থেকে প্রতিদিনের ন্যায় লতুফা বেগম নামে এক বৃদ্ধা গরু-ছাগল বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় পাকবাহিনীর সদস্যরা রাতের খাবার জোগাড় করার জন্য প্রথম অপারেশন হিসেবে ওই বৃদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করে এবং বৃদ্ধার একটি গরু ও একটি ছাগল নিয়ে তারা রাতের খাবার খান। আর পাক সেনাদের অফিসারদের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসটি নির্ধারণ করা হয়েছিল। ৮ এপ্রিল রাতেই চাঁদপুরে অবস্থানরত ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্নভাবে পাকহানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালান। হামলা দেখে পাকহানাদার বাহিনীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। তখন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মক আহত হন। ৯ এপ্রিল পাকবাহিনী ভোরে শহরে ঢুকে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইসমাইল হোসেন ভলন্টিয়ার (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে। একই সঙ্গে তারা শহরের হাসান আলী হাইস্কুলের মোড়ে আপাক ও মাখন নামে দুইজন যুবককে সাইকেল চালাতে দেখে গুলি করে হত্যা করে। মীরসরাই নিজস্ব সংবাদদাতা মীরসরাই চট্টগ্রাম থেকে জানান, ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে মীরসরাইকে হানাদার মুক্ত করে। ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনার পর থেকেই মীরসরাইয়ের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন শুরু করে। ৮ ডিসেম্বর সকাল বেলা সুফিয়া রোড ওয়ার্লেস স্টেশন থেকে একটি পাকবাহিনীর জিপ তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওঁৎপেতে থেকে শক্রর অবস্থান নিশ্চিত করে মুক্তিযোদ্ধারা। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে সকল মুক্তিযোদ্ধার কাছে এ খবর পাঠানো হয়। বেলা প্রায় ১১টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে সংগঠিত হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে এক যোগে ঝটিকা আক্রমণ চালায়। শুরু হয় পাক সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে গুলি বিনিময়। পাক সেনাদের অবস্থান ছিল মীরসরাই হাই স্কুল (বর্তমান মীরসরাই সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়), মীরসরাই থানা, মীরসরাই সিও অফিস। বৃষ্টির মতো গুলি বিনিময়ে এক পর্যায়ে মনে হলো পাক সেনাদের পক্ষ থেকে কোন প্রতিরোধ আসছে না। মুক্তিযোদ্ধারা সতর্কভাবে শত্রুর অবস্থানের দিকে গিয়ে দেখলেন পাক সেনারা পালিয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধারা থানায় প্রবেশ করে পাক সেনাদের আটটি রাইফেল উদ্ধার করে। পাক সেনারা চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে গেছে বলে পরে জানা যায়। ভালুকা নিজস্ব সংবাদদাতা ভালুকা, ময়মনসিংহ থেকে জানান, ১৯৭১ এর এই দিনে আফসার বাহিনীর আক্রমণে পাক ও রাজাকার বাহিনী ভালুকা ঘাঁটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে এই দিনটিকে ভালুকার মুক্তিকামী জনতার ভালুকা মুক্ত দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে আসছে। ৭১-এর ৭ ডিসেম্বর মধ্যরাতে আফসার বাহিনীর অধিনায়ক মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ভালুকা সদরে পাক ও রাজাকার বাহিনীর ঘাঁটির তিন দিক থেকে প্রচন্ড আক্রমণ শুরু করলে পাক সেনারা এক পর্যায়ে ভালুকা ঘাঁটি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা ভালুকা থানা প্রাঙ্গণে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। এর পরেই বাহিনীর প্রধান মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ ও কোম্পানি কমান্ডার বছির উদ্দিন আহমেদ ও সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধার বিশাল বাহিনী ভালুকা থানায় ও ধামশুর চৌধুরী বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করেন। ভালুকা মুক্ত দিবসে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যৌথভাবে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ঝালকাঠি নিজস্ব সংবাদদাতা ঝালকাঠি থেকে জানান, আজ ৮ ডিসেম্বর, ঝালকাঠি হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১-এর এই দিনে ঝালকাঠি পাকহানাদার মুক্ত হয়েছিল। বিজয়ের বেশে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করে। জেলার সর্বত্র আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে স্বাধীনতাকামী জনতা। ‘৭১ এর ২৭ এপ্রিল ভারী কামান আর মর্টার শেলের গোলা নিক্ষেপ করতে করতে পাক হানাদার বাহিনী ঝালকাঠি শহর দখলে নেয়। এরপর থেকে পাক বাহিনী রাজাকাদের সহায়তায় ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলাজুড়ে হত্যা, ধর্ষণ, লুট আর আগ্নিসংযোগসহ নাটকীয় নির্যাতন চালায়। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন নিরীহ বাঙালীদের ধরে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে পৌরসভা খেয়াঘাট এলাকায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো।
×