ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী ইশতেহারে পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 নির্বাচনী ইশতেহারে পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জোট ও দলগুলোর কাছে ইশতেহারে যুক্ত করার জন্য পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। সংগঠনটি বলেছে, মহাপরিকল্পনাভিত্তিক পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। এই উন্নয়নে সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে পৌরসভা, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিকল্পনা পেশাসহ অন্য কারিগরি পেশার অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সব পর্যায়ে উন্নয়ন নিশ্চিতের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেন এমন দাবি করেছে বিআইপি। অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসরমান বাংলাদেশের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য ভৌত পরিকল্পনায় নানামুখী সমস্যার সমাধানের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার বাস্তবতা দিন দিন বাড়ছে। নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা যথাযথভাবে গ্রহণের মাধ্যমে এ অবস্থার দ্রুত উন্নতি সম্ভব। কিন্তু নীতি ও আইন প্রয়োগ না হওয়ায় পরিকল্পনার কাক্সিক্ষত প্রসার এখনও ঘটেনি। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় আঞ্চলিক ভারসাম্যের অভাব রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বিআইপি এ দাবি জানিয়েছে। বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক দলসমূহের নির্বাচনী ইশতেহারে সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব রাখা হয়েছে। দলগুলো যাতে আমাদের দেয়া প্রস্তাব তাদের ইশতেহারে যুক্ত করে তার জন্য জোর দাবি রাখছি। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে, দেশের আয়তনের তুলনায় অধিক জনসংখ্যা, অধিক জন-ঘনত্ব এবং অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এদেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রতি বছর দেশের প্রায় ৭১ হাজার হেক্টর জমি অপরিকল্পিতভাবে অকৃষিজ খাতে পরিবর্তিত হচ্ছে। একদিকে যেমন শিল্পায়ন প্রয়োজন অন্যদিকে দেশের বনাঞ্চল, জলাভূমি, হাওড়, বিল, পাহাড়ের মতো সংবেদনশীল এলাকা সংরক্ষণও দরকার। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য টেকসই উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে সারাদেশের ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। পরিকল্পিত নগর ও গ্রাম উন্নয়নকে সঠিক নীতি ও আইনী কাঠামোর আওতায় আনা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে খসড়া ‘নগর উন্নয়ন নীতি’ ও ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন’ চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে হবে। দেশের প্রবাহমান উন্নয়ন ব্যবস্থাকে মহাপরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার পরিকল্পনার মাধ্যমে শৃঙ্খলিত করা প্রয়োজন। এ জন্য নগর ও শহরে ভৌত পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। দেশের গ্রামাঞ্চলেও দ্রুত নগরায়ণের ছোঁয়া লাগছে। গ্রাম ও উপজেলার সুষ্ঠু ভূমি ব্যবহারের জন্য উপজেলা পর্যায়ে ‘পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ’ তৈরি করতে হবে। দেশে নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বর্তমানে দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ নগরে বসবাস করে। দেশের মোট আয়তনের আনুমানিক ৭ ভাগ নগর এলাকা থেকে জাতীয় আয়ের প্রায় ৬০ ভাগ অবদান রাখছে। আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের অর্ধেক মানুষ নগরেই বসবাস করবে। তাই দেশের বর্তমান নগরায়ণের বাস্তবতা ও ভবিষ্যত প্রেক্ষিত বিবেচনায় নগরায়ণকে সঠিকভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে একটি ‘নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়’ করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এস ডি জি) অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত পরিকল্পিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এগিয়ে যেতে হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশিত উপজেলা ভিত্তিক বর্তমান ইমারত নির্মাণ নক্সা অনুমোদন প্রক্রিয়াকে যথাযথ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানভিত্তিক মহাপরিকল্পনা প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের জন্যে জাতীয় পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি অতি জরুরী।
×