ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আর বাকি মাত্র ২৬ দিন

নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিতে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

  নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিতে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো

শরীফুল ইসলাম ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ২৬ দিন। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো এখন ইশতেহার তৈরির কাজে ব্যস্ত। বড় দুটি রাজনৈতিক দল ইশতেহার তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগ ১৫ ডিসেম্বর ইশতেহার ঘোষণা করবে বলে ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপিও কাছাকাছি সময়েই ইশতেহার ঘোষণা করবে। অবশ্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বাধীন সিপিবি শনিবার সবার আগে ইশতেহার ঘোষণা করে ফেলেছে। আরও কটি দল দু’একদিনের মধ্যেই তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে। জানা যায়, ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দলই একটি ভাল ইশতেহারের মাধ্যমে চমক দেখাতে চায়। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবার ভিশন-২০৪১ সামনে রেখে এবং বিএনপি ভিশন-২০৩০ এর আলোকে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছে। দলের কিছু সিনিয়র নেতা এবং এ বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশিষ্টজনের সহযোগিতায় বড় রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহার তৈরির কাজ করছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মহাজোটে নির্বাচন করলেও ইশতেহার দেবে দলীয়ভাবে। এ জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ অন্যান্য দলও নিজস্ব অবস্থান থেকে নিজেদের সুবিধামতো ইশতেহার ঘোষণা করবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৫ ডিসেম্বর তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। আর বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, ৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন। এর পর যে কোন দিন তাদের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে এবং তা তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে তাদের রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের ইচ্ছা জোটগতভাবে নির্বাচনী ইশতেহার দেয়া। বিএনপি এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলেনি। তবে জোটগতভাবে দিলেও বিএনপি নিজস্ব অবস্থান থেকে ইশতেহার ঘোষণার প্রস্তুতি রেখেছে। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে আগামী প্রজন্মকে সামনে রেখে থাকছে ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার পরিকল্পনা ও প্রত্যয়। আর আগেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০-এর আলোকে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দেশের উন্নয়ন, সুশাসন, স্বচ্ছতা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নবধারার রাজনীতি ও সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহার তৈরি করছে এ দলটি। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট্রের ইশতেহারও প্রায় একই রকম হবে বলে জানা গেছে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান স্লোগান থাকবে দেশের মালিক জনগণ। সকল রাজনৈতিক দলই সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে। তবে নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেয়া প্রচারের সময়ের মধ্যে ভোটারদের হাতে হাতে ইশতেহার পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবে বড় বড় রাজনৈতিক দল। এর ফলে সাধারণ মানুষও মিলিয়ে দেখতে পারবে কোন্ দল ক্ষমতায় গেলে কি করবে। সূত্র মতে, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে ইশতেহার তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জাতির সামনে ইশতেহার তুলে ধরবেন। এরপর থেকে সবার জন্য তা উন্মুক্ত হবে। আমাদের লক্ষ্য জনগণের সামনে নির্বাচনের আগে ইশতেহার নিয়ে যাওয়া। বিএনপি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে থাকায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ইশতেহার ঘোষণা করবেন। পরে তা সারাদেশে নেতাকর্মীদের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। ইতোমধ্যেই ইশতেহার প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে বলেও দলীয় কার্যালয় থেকে জানানো হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করে। অবশ্য বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ইশতেহার প্রণয়নের জন্য সিনিয়র নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করে দিয়েছে অনেক আগেই। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার জন্য কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায় তা মাথায় রেখেই নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছে দলগুলো। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ক্ষমতায় গিয়ে কোন্ দল কি করতে চায় তা দলের ইশতেহার দেখলেই বোঝা যায়। তাই এবারও নির্বাচনের সামনে রাজনৈতিক দলগুলো কেমন ইশতেহার দেয় তা দেখার জন্য দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে। এদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সবার আগে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সংস্কার এবং ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণসহ ৩০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে দলটি। রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে ‘ভিশন মুক্তিযুদ্ধ-’৭১’ শিরোনামে ইশতেহার ঘোষণা করেন দলের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। এতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংবিধান, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও রাজনীতির সংস্কার, নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, বিকল্প অর্থনৈতিক নীতি প্রতিষ্ঠা করার কথা উল্লেখ করা হয়। ইশতেহার পাঠকালে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জনগণ যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। সেই স্বপ্ন হলো ‘ভিশন মুক্তিযুদ্ধ-’৭১’। তিনি বলেন, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে হলে বিদ্যমান ব্যবস্থার বদল করা এবং দ্বিদলীয় রাজনীতির বৃত্ত ছিন্ন করে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা অপরিহার্য। লুটপাটের ব্যবস্থা বদল করে বিকল্প রাজনৈতিক কর্মসূচী ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে সিপিবি বদ্ধপরিকর।
×