ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্থানীয় নির্বাচনে চীনপন্থীদের প্রাধান্য

তাইওয়ানে চীনের প্রভাব স্থায়ী রূপ পাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

তাইওয়ানে চীনের প্রভাব স্থায়ী রূপ পাচ্ছে

তাইওয়ান কী চীনের প্রথম খেলার ঘুঁটি হয়ে উঠছে। ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি শনিবারের স্থানীয় নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এক প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস। যে সকল গণতান্ত্রিক দেশ তাইওয়ানে চীন সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টার বিষয়ে উদ্বিগ্ন সে দেশগুলোর উচিত হবে দেশটিতে এ সপ্তাহান্তের নির্বাচনে চীনের সফলতা খুঁটিয়ে দেখা। এ নির্বাচন হয়েছে পুরো দ্বীপজুড়ে গ্রাম, শহর ও কাউন্টিগুলোতে এবং এর অবস্থানগত সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ হাজার। এ ভোটকে প্রায় মধ্যবর্তী নির্বাচন হিসেবে দেখা হয় এবং ২০২০ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠেয় আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গৌরচন্দ্রিকা হিসেবেও বিবেচনা করা হয় ব্যাপকভাবে। পত্রিকাটি বলেছে, বেজিংয়ের প্রতি সহযোগী প্রার্থীরা শীর্ষস্থানীয় ২৪টি পদের মধ্যে ১৬টিতে বিজয় অর্জন করবেন। বর্তমানে এদের দখলে রয়েছে মাত্র ৬টি পদ। নির্বাচনে চীন এর যে কোন হস্তক্ষেপের কথা অস্বীকার করেছে। কিন্তু দেশটি স্বাধীনতার পক্ষের দল ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) নেতৃত্বাধীন তাইওয়ান সরকারকে অস্থিতিশীল করবার চেষ্টা জোরদার করছে গত কয়েক বছর ধরে। বেজিং মূল ভূমি থেকে তাইওয়ানে পর্যটনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। তাইওয়ানের চারদিকে সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত করেছে এবং এমনকি তাইওয়ানের বিরুদ্ধে হামলার হুমকি দিয়েছে। স্রোত কত উল্টো দিকে বইতে পারেÑ ডিপিপি চীন সরকারের আক্রমণের বিরুদ্ধে শক্তিশালী রক্ষাকবচের ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে ২০১৬ সালে। দল একই সময়ে সরকারের কৃতিত্ব সৃষ্টির জন্য চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের নৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে বলেও মনে হয়েছে। দলটি ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয় এবং জাতীয় আইন পরিষদ নির্বাচনেও দৃঢ় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তখন দ্বীপের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান আকাক্সক্ষার অনুকূলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলো বলে মনে হয়েছে। ২০১৪ সালে বিস্ময়কর সানফ্লাওয়ার মুভমেন্টের পর ডিপিপি বিজয় অর্জন করে চীনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির অনুমোদন আটকে দেয়ার জন্য আইন পরিষদকে কাজে লাগায়। উল্লেখ্য, ওই আন্দোলনে প্রধানত জড়িত ছিলেন ছাত্ররা। একীভূতকরণের প্রধান সমর্থক তাইওয়ানের কৌমিংট্যাং (কনমটি) দল থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাইং হিউয়ের প্রশাসন চুক্তিটির মধ্যস্থতা করেছিল। চুক্তিতে তাইওয়ানের সার্ভিস সেক্টরে চীনের বিনিয়োগ অবাধ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদককারীদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দেয় যে, এতে তাইওয়ানের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিপদগ্রস্ত হবে। বিক্ষোভকারীদের অবস্থান প্রতিবাদ সফল হয় এবং চুক্তিটির প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়। কিন্তু চীন তখন কোন শব্দ করেনি। শনিবার রাতে, ভোটের ফল প্রকাশ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই, প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন ডিপিপির প্রধান হিসেবে পদত্যাগ করেন। সাই ইং ওয়েনের দলের পরাজয়ের আংশিক কারণ হচ্ছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধানে তার সাহসী প্রচেষ্টা। এ ধরনের সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে সিভিল সার্ভেন্টদের জন্য ব্যয়বহুল অবসর ভাতা কর্মসূচী বাতিলের পরিকল্পনা। তিনি তাইওয়ানের পরমাণু শক্তি কর্মসূচীরও বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু ডিপিপির পরাজয়ে এটা প্রতীয়মান হলো যে, তাইওয়ানের ওপর বেজিংয়ের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও স্পষ্টত বোঝা যায়, একটি উদার সমাজের দুর্বলতা কাজে লাগানোর সামর্থ্য রয়েছে দেশটির।
×