ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগে জামায়াতী এনজিওর আট জঙ্গী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৯ নভেম্বর ২০১৮

জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগে জামায়াতী এনজিওর আট জঙ্গী গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর একটি এনজিওর বিভিন্ন পদে থাকা জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী থেকে জঙ্গী হওয়া আটজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকাসহ নানা আলামত উদ্ধার হয়েছে। টাকাগুলো নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও জেএমবি জঙ্গীদের দেয়ার কথা ছিল। এর আগে সিআইডির হাতে জঙ্গী অর্থায়নের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর একটি এনজিওর ৮ জন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। গত বুধবার ৭ নবেম্বর রাতে রাজধানীর পল্লবী থানাধীন মিরপুর ডিওএইচএস-এর ৯ নম্বর সড়কের ৬৪৪ নম্বর বাড়ির ৫ম তলায় ‘স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ (এসকেবি)’ নামের একটি এনজিওতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, মোঃ সাফ ওয়ানুর রহমান (৩৪), সুলতান মাহমুদ (২৫), মোঃ নজরুল ইসলাম (৩৮), মোঃ আবু তাহের (৩৬), মোঃ ইলিয়াস মৃধা (৩০), মোঃ আশরাফুল আলম (২৪), হাসনাইন (৩০) ও মোঃ কামরুল (২৮)। তাদের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা ছাড়াও ৮টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বইসহ অন্যান্য আলামত জব্দ হয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম খান জানান, গ্রেফতারকৃতরা এক সময় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা বর্তমানে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। গ্রেফতারকৃতরা জেএমবি ও আনসার আল ইসলামকে আর্থিকভাবে সহায়তা করত। জঙ্গীদের সহায়তা করার জন্য পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। তারা চট্টগ্রাম অঞ্চলে তৎপরতা জোরদার করতে চেয়েছিল। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, এনজিওটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের মতাদর্শের অনুসারীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল। দীর্ঘদিন ধরে তারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এনজিওটির পরিচয়ে মানবিক কর্মকা- পরিচালনার আড়ালে জঙ্গীবাদে অর্থায়ন ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে জঙ্গীবাদ প্রচার করছিল। গত আগস্টে এনজিও ব্যুরো জঙ্গীবাদে অর্থায়ন ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার দায়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এই এনজিওটির কর্মকা- নিষিদ্ধ করে। এনজিওটি পাকিস্তান, তুরস্ক, ফিলিপিন্স, কানাডা, সৌদি আরব ও ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ইসলামভিত্তিক সংস্থা থেকে অনুদান সংগ্রহ করে। দেশে ও বিদেশে হিসাব বহির্ভূত বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অনুদানের নামে অর্থ সংগ্রহ করে। সূত্রটিও আরও জানিয়েছে, পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন আল খিদমত ফাউন্ডেশন এনজিওটির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিবিরে নির্বিঘেœ জঙ্গীবাদী কর্মকা- চালাচ্ছে। আল খিদমত ফাউন্ডেশন পাকিস্তানভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল-কায়েদা ও লস্কর-ই-তৈয়েবার সঙ্গে জড়িত। গ্রেফতারকৃতরা এনজিওটির মাধ্যমে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনগুলোর পক্ষে তৎপরতা চালাচ্ছিল। এদের সঙ্গে লস্কর-ই-তৈয়েবা ও আল-কায়েদার যোগাযোগ আছে। গ্রেফতারকৃতরা এনজিও কার্যক্রমের আড়ালে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভিন্ন কৌশলে সরকারবিরোধী প্রচারণা, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও রোহিঙ্গাদের প্ররোচিত করে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছিল। রোহিঙ্গাদের জঙ্গী দলে বেড়াতে আল-কায়েদা ও লস্কর-ই-তৈয়েবা আনসার-আল-ইসলামের গ্রেফতারকৃতদের অর্থায়ন করে আসছিল। মূলত গ্রেফতারকৃতদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে কর্মী সংগ্রহের চেষ্টা করছিল জঙ্গী সংগঠন আল-কায়েদা, আনসার আল ইসলাম ও লস্কর-ই-তৈয়েবা। পুরোপুরি সক্রিয় করার পর দেশের ভেতরে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর এনজিওর মাধ্যমে জঙ্গী অর্থায়নের দায়ে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমীর ও যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচার চলাকালীন সময়ে মৃত্যু হওয়া মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফের আট সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত মুহম্মদ ফজলুল হক রিকাবদার, ফজলুল হক, হুমায়ুন কবীর, আশরাফুল হক, আসগর হোসাইন, শেখ শাহজাহান কবীর, মনিরুল ইসলাম, আব্দুর রউফ ও আল মামুন খন্দকার এক সময় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আবুল কালাম বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি নামের ওই এনজিওটি এনজিও ব্যুরোর কাছ থেকে নিবন্ধন নেন। এরপর এনজিওটির মাধ্যমে জঙ্গীবাদে অর্থায়ন করে আসছিলেন। এনজিওটির সার্বিক কর্মকা- জামায়াতে লিখিতভাবে অবহিত করা হতো। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এনজিওটির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ এসেছে সাড়ে ৬২ কোটি টাকারও বেশি। এসব অর্থের অধিকাংশই জঙ্গীবাদ বিস্তারে ব্যয় করা হয়েছে। জঙ্গী অর্থায়নে সহায়তাকারী আরও নয় জামায়াত নেতাকর্মী পলাতক। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এই এনজিওটি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর কৃষিবিদরা নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেড ও নবধারা কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামের আরও দুইটি সংগঠন গড়ে তুলে মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ প্রচারণার কাজে লাগাত। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করত জামায়াত। সেই অর্থ নিজেদের রাজনৈতিক দলের সদস্যদের দেয়ার পাশাপাশি আত্মসাত, জঙ্গী ও সন্ত্রাসের কাজে অর্থায়ন করা হতো। হিসাব মোতাবেক ২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতির এ্যাকাউন্টে ৬২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বিদেশ থেকে অনুদান হিসেবে আসে। পুরো এই এনজিওটির নাটেরগুরু শিবির নেতা মোস্তাক আহমেদ খাঁ। তিনি তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন দেশের জঙ্গী সংগঠনগুলোর কাছ থেকে অর্থ এনে জামায়াত-শিবিরের এনজিওর মাধ্যমে জঙ্গীবাদে অর্থায়ন করত।
×