ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের গড় আয়ুর সঙ্গে প্রবীণের সংখ্যাও বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

মানুষের গড় আয়ুর সঙ্গে প্রবীণের সংখ্যাও বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রবীণের সংখ্যাও। বর্তমানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ থেকে ৮ শতাংশ। যা আগামী ২০৫০ সালে ২০ থেকে ২২ শতাংশে পৌঁছাবে। আর তাই এখন থেকে এ প্রবীণদের অধিকার ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বুুধবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত রাজধানীর একটি হোটেলে ‘প্রবীণ অধিকার সুরক্ষায় করণীয় : আন্তঃপ্রজন্ম সমন্বয়’ শীর্ষক সেমিনারে এই আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার রয়েছে বলেই এখন প্রবীণরা ভাতা পাচ্ছেন, নীতি প্রণয়ন হয়েছে। তবে এখনও প্রবীণদের অধিকার নিশ্চিতে বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। পিকেএসএফের চেয়ারম্যান আরও বলেন, সংবিধানে আছে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না। ফলে এখন এ অধিকার নিশ্চিত করতে শক্তভাবে দাবি তুলে তা বাস্তবায়ন করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন ও প্রবীণ নীতি হয়েছে, এখন প্রবীণদের সুরক্ষায় নতুন একটি আইন হওয়া প্রয়োজন। এর দাবি তুলতে হবে। প্রবীণদের সঙ্গে একজন সঙ্গী থাকতে হবে, কারণ প্রবীণ হলে সবাই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। সেতু বন্ধনের মাধ্যমেই এ নিঃসঙ্গতা দূর করা সম্ভব হবে। অনুষ্ঠানে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, যারা প্রবীণ তাদের জন্য বিশ^ নানাভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং নিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। আগামী ৩২ বছর পর বাংলাদেশে প্রবীণদের সংখ্যা ২০ থেকে ২২ শতাংশে পৌঁছে প্রতি পাঁচ জনে একজন প্রবীণ হবে। তাই এখন থেকে তাদের নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে। আইনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বিদ্যমান জাতীয় প্রবীণ নীতিমালার আলোকে প্রবীণদের জন্য একটি আইন তৈরি করা প্রয়োজন। পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে আইন তৈরি করে শৃঙ্খল সমাজ তৈরি করার কথাও বলেন তিনি। হেল্প এইচ ইন্টারন্যাশনালের কান্টি ডিরেক্টর রাবেয়া সুলতানা বলেন, আমাদের সমাজের ৬০ থেকে ৭০ বছরের প্রবীণদের কর্ম ক্ষমতা থাকলেও তাদের কর্ম অক্ষম মনে করা হয়। এ কারণে তাদের অলস সময় পার করতে হয়। প্রবীণবান্ধব দেশ গড়তে না পারায় তাদের বোঝা মনে করা হয়। প্রবীণদের কল্যাণে তিনি কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ফ্ল্যাটে স্বামী-স্ত্রী, বাচ্চা ও গেস্টদের থাকার জন্য রুম বরাদ্দ থাকলেও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্য কোন আলাদা কক্ষ বরাদ্দ রাখা হয় না। তারা অন্যের রুম শেয়ার করেন। গেস্ট না থাকলে গেস্ট রুমেই থাকতে দেয়া হয়। এর বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা উচিত। এডুকেশন কারিকুলামে প্রবীণদের অধিকার নিয়ে আলাদাভাবে পার্ট রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আশা করছি খুব দ্রুত এটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-প্রবীণ ফাউন্ডেশন বিল পাস করা। এ বিলটি যত দ্রুত পাস করা সম্ভব হবে তত দ্রুত প্রবীণদের অধিকার বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও তিনি আরও বলেন, গ্রাামের পাশাপাশি শহরের প্রবীণদের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রবীণবান্ধব সমাজ গড়াতে হবে। ৬০-৭০ বয়সের প্রবীণদের কর্মের বাইরে রাখা যাবে না, প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা চালু করতে প্রস্তাব করেন তিনি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন-ইউএনএফপিএ’র কান্ট্রি ডিরেক্টর আসা বিত্তা টরকেলসন, ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী, মেজর জেনারেল (অব) জীবন কানাই দাস, প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞানের মহাসচিব অধ্যাপক আতীকুর রহমান প্রমুখ।
×