ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন সুপ্রীমকোর্ট এখন কার

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

মার্কিন সুপ্রীমকোর্ট এখন কার

গত কয়েক দশক ধরে আমেরিকার সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টের উত্তরোত্তর রাজনীতিকরণ ঘটেছে। জনগণের শ্রদ্ধা ও আস্থার এই আসনটি ধরে রাখতে হলে এটির সংস্কার প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। পঞ্চাশের দশকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ার উদারপন্থী ওয়ারেনকে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ করেছিলেন। রিপাবলিকান প্রধান সিনেট সম্মতিক্রমে তার নিয়োগ অনুমোদন করেছিল। ওয়ারেন নিজেও ছিলেন রিপাবলিকান। তথাপি তার নিয়োগ নিয়ে কোন বিতর্ক হয়নি। প্রশ্নও ওঠেনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রেট কাভানগকে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগ দিয়েছেন। তার নিয়োগ নিয়ে সিনেটে শুনানিও হয়েছে। সেই শুনানি ছিল দলগত ঝগড়ার এক তোলপাড় রূপ যা সরাসরি টেলিভিশনে পরিবেশিত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার অধিকতর রাজনৈতিক অংশগুলোতে উচ্চঃস্বরে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের ৯টি আসনের একটি পূরণ করার প্রক্রিয়াটি কেন ও কিভাবে এত বিরোধপূর্ণ হয়ে উঠল। গত জুন মাসে বিচারপতি এ্যান্থনী কেনেডি অবসর নেয়ার পর ট্রাম্প কাভানগকে সেই শূন্যপদে মনোনয়ন দেন। তার এই নিয়োগের মধ্য দিয়ে সুপ্রীমকোর্টে কয়েক প্রজন্ম ধরে রক্ষণশীলদের সুদৃঢ় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠিত হবে। কেনেডি যতদিন সুপ্রীমকোর্টে ছিলেন ততদিন সেখানে একটা ভারসাম্য ছিল। কারণ বাকি ৮ জন বিচারপতির মধ্যে ৪ জন ছিলেন মূলত উদারপন্থী এবং ৪ জন কট্টর রক্ষণশীল। কেনেডি কখনও রক্ষণশীলদের পক্ষ কখনও উদারপন্থীদের পক্ষ নিতেন। তিনি ছিলেন আদালতের সুইং ভোট। কাভানগের নিয়োগের মধ্য দিয়ে সেই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেল। কারণ তিনি ঢের বেশি রক্ষণশীল। কাভানগের নিয়োগ নিয়ে উত্তেজনা ও বিতর্কের আরেক কারণ ট্রাম্প নিজে। ফেডারেল আইন লঙ্ঘনের এক ষড়যন্ত্রে তাকে জড়িত করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে তার রাশিয়া কানেকশন নিয়ে তদন্ত চলছে। ট্রাম্পকে সেই তদন্তের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে কিনা, তাকে অভিযুক্ত করা যাবে কিনা কিংবা তিনি নিজে নিজেকে মন্দা করতে পারবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত সুপ্রীমকোর্টকে নিতে হতে পারে। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সম্পর্কে কাভান কি দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন তার দ্বারা এসব প্রশ্নে আদালতের রায় নির্ধারিত হতে পারে। তার চেনেও বড় ব্যাপার হলো, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে কংগ্রেস অধিকতর পার্টিজান বা পক্ষপাতপুষ্ট হওয়ায় বিভিন্ন ইস্যুতে সহজেই জট লেগে খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। সেসব ইস্যু আইনসভায় মীমাংসিত হতে পারত সেগুলো নিগূঢ় আইনগত ও সাংবিধানিক ঝগড়ার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আদালতের ভূমিকা মতই বেশি রাজনৈতিক হয়ে উঠছে ততই রাজনৈতিক চরিত্র লাভ করছে বিচারক মনোনয়নের মতো বিষয়টি। এই মনোনয়নদানের ক্ষমতা সংবিধানে প্রেসিডেন্টের হাতে অর্পিত হয়েছে। একটা সময় ছিল যখন রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্টরা জন পল স্টিভেনস, ডেভিড সুলটার, হ্যারি ব্ল্যাকমাম ও উইলয়াম ব্রেনানের মতো উদারপন্থীদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন আর ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্টের। বাইরন হোয়াইটের মতো রক্ষণশীলদের মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই দিন অনেক আগেই গত হয়েছে। ১৯৮০র দশক থেকে প্রেসিডেন্টরা বিচারপতি পদে এমন সব ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে আসছেন যাদের তারা মনে করেন যে দলগত বিভাজনে ওঠা তাদের পক্ষে বরাবরই থাকবেন এবং এ কাছে তারা বহুলাংশে সফলও হয়েছেন। বিচারপতিরা আজীবনের জন্য নিয়োগ পান। কাভানগের বয়স ৫৩ বছর। সুতরাং কাভানগের নিয়োগ নিয়ে দু’পক্ষের লড়াই আগামী কয়েক দশক দেশের গতিপথ কি হবে তা নির্ধারণের লড়াই। প্রেসিডেন্টের মনোনয়ন অনুমোদনের জন্য সিনেটের ১০০ সদস্যের মধ্যে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের অর্থাৎ ৫১ ভোটের প্রয়োজন। আর কোন কিছুই এই অনুমোদনের পথে বাধ্য হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। সিনেটে এখন রিপাবলিকান সদস্য ৫১ জন। এদের মধ্যে যারা অবসর নিতে যাচ্ছেন এবং যারা এমনিতে ট্রাম্পের ঘোরতর সমালোচক তারাও এই ইস্যুটির পক্ষে ভোট দেবেন বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। কাভানগের নিয়োগ অনুমোদন নিয়ে রিপাবলিকান এই বিজয় নিঃসন্দেহে হবে রাজনৈতিক বিজয়। তবে এ জাতীয় নিয়োগ নিয়ে দলটি এর আগে নোংরা রাজনীতি করতে ছাড়েনি। এ ব্যাপারে একটি দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে। ২০১৬ সালে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি এন্টোনিন স্ক্যালিয়া মারা গেলে তার শূন্য পদে প্রেসিডেন্ট ওবামা মোটামুটিভাবে উদারপন্থী বিচারক মেরিক গারল্যান্ডকে নিয়োগ দেন। কিন্তু সিনেটে রিপাবলিকান সংখ্যাগুরু দলের নেতা মিচ ম্যাকোনেল তার মনোনয়ন অনুমোদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠানে অস্বীকৃতি জানান। এমন নজির আধুনিক ইতিহাসে নেই। এদিকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ওবামার প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গারল্যান্ডের মনোনয়নের মেয়াদও ফুরিয়ে যায়। ট্রাম্প এসে রক্ষণশীল আইনজ্ঞ নীল রিকশাচকে সেই আসনে নিয়োগ দেন এবং ম্যাকোনেলের সেনেট অতি দ্রুত তার মনোনয়ন অনুমোদন করেন। এখন কাভানগের নিয়োগ অনুমোদিত হলেই সুপ্রীমকোর্টে রিপাবলিকান প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এ ভাবে মার্কিন সুপ্রীমকোর্ট যা এতদিন ছিল দলগত ভেদাভেদের উর্ধে এক চূড়ান্ত নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান তা এখন এখন রিপাবলিকানদের কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×