ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেনাপ্রধানকে নিয়ে ভুল বক্তব্য ॥ জাফরুল্লাহর দুঃখ প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

সেনাপ্রধানকে নিয়ে ভুল বক্তব্য ॥ জাফরুল্লাহর দুঃখ প্রকাশ

বিডিনিউজ ॥ সেনাপ্রধানকে নিয়ে একটি টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যটি ভুল বলে স্বীকার করে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “আমি দেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করেছিলাম।” সময় টিভিতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য নিয়ে আলোচনার মধ্যে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে আসেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য জাফরুল্লাহ। বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী নেতা হিসেবে পরিচিত জাফরুল্লাহ কামাল হোসেন ও বি চৌধুরীর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কর্মসূচীতে সক্রিয়। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ভুল বক্তব্য ও শব্দ বিভ্রাটের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও মর্মাহত। জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করার কোন চিন্তা বা উদ্দেশ্য আমার ছিল না। “জেনারেল আজিজকে আমি অসাবধানতাবশত কোন মনকষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্য আমি পুনরায় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।” তিনি বলেন, “জেনারেল আজিজ একজন দক্ষ আর্টিলারি সেনা কর্মকর্তা। তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জিওসি ছিলেন না, কমান্ডেন্টও ছিলেন না। তিনি তার কর্মজীবনের এক সময়ে চট্টগ্রাম সেনাছাউনিতে আর্টিলারি প্রশিক্ষক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল হয়নি, একবার কোর্ট অব ইনকোয়ারি হয়েছিল।” বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন কি না- জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ বলেন, “খুব সহজ-সরলভাবে এখানে বলেছি, আমার শব্দচয়নে ভুল ছিল। এই ভুলের জন্য নিশ্চয়ই দুঃখ প্রকাশ করছি।” কোন ধরনের ‘ভয়’ থেকে এই সংবাদ সম্মেলন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ভয় পাওয়ার লোক আমি না। ভয় আমি করি না।” এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের সেনাবাহিনীর গৌরবে আমি গর্বিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কালাতিপাত করেছি। যুদ্ধ শেষে আমিই প্রথম কুমিল্লা কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল চালু করি। পরে আমি ও ডাঃ আজিজুর রহমান ঢাকা কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল চালু করি।” ২১ অগাস্ট গ্রেনেড মামলার রায়ের আগের দিন সময় টিভির আলোচনা অনুষ্ঠান সম্পাদকীয়তে আলোচক হিসেবে উপস্থিত জাফরুল্লাহ চৌধুরী দাবি করেন, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ যখন ‘চট্টগ্রামের জিওসি’ ছিলেন, সেখান থেকে ‘সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ চুরি’ যাওয়ার ঘটনায় তার ‘কোর্ট মার্শাল’ হয়েছিল। এরপর বিষয়টি নিয়ে সেনা সদরের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়। সময় টিভি নিজেদের বক্তব্যসহ সেটি প্রচার করে। প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, “বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরি জীবনে কখনই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি সেপ্টেম্বর ২০১০ হতে জুন ২০১১ পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ আর্টিলারি ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন, জুন ২০১১ হতে মে ২০১২ পর্যন্ত ঢাকার মিরপুরে ৬ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার এবং মে ২০১২ হতে ডিসেম্বর ২০১২ পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। “বর্ণিত সময়ে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা সেনানিবাসে কোনো সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ চুরি বা হারানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তার দীর্ঘ বর্ণাঢ্য সামরিক চাকরি জীবনে কখনই কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হননি।” সেনাসদরের প্রতিবাদলিপিতে জাফরুল্লাহর বক্তব্যকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে বর্ণনা করে বলা হয়, ওই বক্তব্য “সেনাবাহিনী প্রধানসহ সেনাবাহিনীর মত রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে হেয় করার হীন অপচেষ্টা মর্মে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়।” এরপরই সংবাদ সম্মেলন করে জাফরুল্লাহ বলেন, “আমি ইতোমধ্যে বিগত দুই দিন কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে আমার বক্তব্যে ভুল শব্দচয়ন ও শব্দবিভ্রাটের বিষয়টি প্রকাশ করে সেনাপ্রধানের নিকট দুঃখ প্রকাশ করেছি।” “চূড়ান্তভাবে ভুল বোঝাবুঝির অবসানকল্পে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।”
×