ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভিটামিন সির উৎস আমলকী

প্রথম কামড়ে টক চিবোলে মিষ্টি রসালো ফল

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

প্রথম কামড়ে টক চিবোলে মিষ্টি রসালো ফল

মোরসালিন মিজান ॥ একেবারেই অন্যরকম একটি ফল। রসালো মাংসল ফলের স্বাদটাও মিশ্র। প্রথম কামড়ে টক। দ্বিতীয় কামড়ে মিষ্টি। একটু চিবোলে স্বাদ বাড়তে থাকে। টক মিষ্টি স্বাদের পাশাপাশি আছে ভরপুর ভিটামিন সি। এরপর আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ফলটি আমলকী। এক সময় এটি ছিল শীতের ফল। এখন অনেক আগেভাগেই বাজারে চলে আসে। এবারও এসেছে। এখন ঢাকার বাজারে, ফুটপাতে ঝুড়ি ভর্তি আমলকী। নতুন টাটকা ফল। হলদেটে গায়ের রং। দেখেই জীবে কেমন যেন জল চলে আসে। খুচড়া বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত প্রায় এক সপ্তাহ আগে বাজারে প্রবেশ করেছে আমলকী। আগে বড় বড় গাছ থেকে ছোট ছোট আমলকী পাওয়া হতো। আর এখন ছোট ছোট গাছে বড় বড় আমলকী। ছাদ বাগানেও ভাল ফলন। মুখে দিয়ে টক মিষ্টি স্বাদ মনে হলেও, ফলটিতে পাঁচটির বেশি স্বাদ মওজুদ থাকে। আর ভিটামিন সি’র কথা তো বলে শেষ করা যাবে না। অন্য যে কোন ফলের তুলনায় আমলকীতে ভিটামিন সি’র পরিমাণ বেশি। প্রতি ১শ’ গ্রাম আমলকীতে ভিটামিন সি’র পরিমাণ ৪৬৩ মিলিগ্রাম। চিকিৎসকদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার হয়। মাঝারি আকারের দুটো আমলকী মুখে পুড়লেই সেটি পাওয়া হয়ে যায়! বিভিন্ন গবেষণা বলে, আমলকীতে কমলার চেয়ে ২০ গুণ, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। এ জন্য আমলকীকে বলা হয় ভিটামিন সি’র রাজা। এর বাইরেও প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান রয়েছে আমলকীতে। পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতিটি আমলকীতে ১৬.২ গ্রাম শর্করা, ০.৭ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ৩.৪ গ্রাম আঁশ, ৭০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩.১ মিলিগ্রাম লৌহ ও ০.০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি ওয়ান থাকে। আমলকীর ভেষজ গুণও অনেক। মুখে দিলে খাওয়ার রুচি বাড়ে। হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ জন্য আধাচূর্ণ শুষ্ক ৫ থেকে ৬ গ্রাম ফল ১ কাপ পানিতে ঘণ্টাখানেক ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে। পরে কচলিয়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ বার পানিটুকু পান করা চাই। ভেষজ চিকিৎকদের মতে, তাতে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি দূর হবে বমি সমস্যা। ভিটামিন সি’র অভাবজনিত রোগ সারাতেও কাজ করে আমলকী। পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তশূন্যতা দেখা দিলেও এটি মহৌষধের কাজ করে। লিভার ও জন্ডিস রোগের পথ্য এটি। জানা যায়, দেশীয় ওষুধ ও প্রসাধনী সামগ্রী তৈরিতে আমলকীর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। আমলকী বেঁটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথায় দেয়া গেলে ভাল ঘুম হয়। কাঁচা আমলকীর রস চুলে লাগানোর উপকার সম্পর্কে বরাবরই সচেতন শহুরে মেয়েরা। প্রতিদিন এ রস মাথায় দিয়ে দুই তিন ঘণ্টা রাখা গেলে এবং এক মাস মাখলে চুলের গোড়া শক্ত হয়। চুল পড়া এবং তাড়াতড়ি চুল পাকা বন্ধ হয়। আমলকীর চিরুনির মতো সাজানো পাতায়ও উপকার আছে। পাতার রস আমাশয় প্রতিষেধক। তবে আমলকীর আচার জেলি ও মোরব্বার কথা না বললেই নয়। এ ফল দিয়ে তৈরি আচার জেলি মোরব্বা অত্যন্ত সুস্বাদু হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, মিয়ানমারসহ আশপাশের দেশগুলোতে আমলকী হয়। বীজ শাখা কলম ও জোড় কলম থেকে এর বংশবিস্তার করা যায়। এ গাছ ১০ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। ফুল ধরে এপ্রিল-মে মাসের দিকে। তবে ফুল খুব ছোট হওয়ায় তেমন চোখে পড়ে না। ফলই গাছের প্রধান বৈশিষ্ট্য। মৌসুমে প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে ২শ’ কেজির মতো আমলকী পাওয়া যায়। দামও অন্য অনেক ফলের তুলনায় কম। এর পরও সবাই কদর করেÑ এমন কথা বলা যাবে না। কারও কারও চোখ এড়িয়ে যায়। কেউ কিনছি কিনব করে মৌসুম শেষ করে দেন। এবার যেন তা না হয়। মৌসুমের আমলকীর স্বাদ নিন। উপকারগুলো গ্রহণ করুন।
×