ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়ার প্রধান হাব গড়ে উঠছে বাংলাদেশে

আকাশপথে বিপ্লব ২২ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আকাশপথে বিপ্লব ২২ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প

আজাদ সুলায়মান ॥ চৌদ্দ হাজার কোটি টাকার থার্ড টার্মিনাল। তিন হাজার কোটি টাকার কক্সবাজার দ্বিতীয় প্রকল্পে রানওয়ে নির্মাণ। আড়াই হাজার কোটি টাকার সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের জন্য নতুন টার্মিনাল ভবন। দুই হাজার কোটি টাকায় যশোর, রাজশাহী ও সৈয়দপুর এয়ারপোর্টের রানওয়ে ও ভবন সংস্কার। পৌনে তিন শ’ কোটি টাকায় কক্সবাজার বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন তৈরি। সাড়ে চার শ’ কোটি টাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার প্রতিস্থাপন। দেড় শ’ কোটি টাকায় শাহজালালে এ্যাপ্রোন তৈরি। রয়েছে ৮শ’ কোটি টাকার রাডার প্রকল্প। এ ধরনের ২২ হাজার কোটি টাকার একগুচ্ছ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সিভিল এভিয়েশন। এগুলোর মধ্যে এ মাসেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে এক হাজার কোটি টাকার কাজ। বহুল প্রতীক্ষিত থার্ড টার্মিনালের দরপত্র ডাকা হয়েছে গত পরশু। ডিপিপি অনুমোদিত হয়েছে তিনটের। আগামী সপ্তাহে পরিকল্পনা কমিশনে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে এগুলো। অর্থাৎ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এর দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে কার্যাদেশ দিয়ে কাজ শুরুর তোড়জোড় চালাচ্ছে সিভিল এভিয়েশন। এ জন্য ইতোমধ্যে এসব প্রকল্পের জন্য তৈরি করা হয়েছে প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামীর নেতৃত্বে এক ঝাঁক তরুণ ও মেধাবী প্রকৌশলীর বিষেশায়িত পুল। সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান জানিয়েছেন, এই বিশাল অংকের মেগা প্রকল্পগুলোর কিছু কাজ এ মাসেই শুরু হবে। আগামী ২ থেকে তিন বছরের মধ্যে এসব প্রকল্প শেষ হলে বদলে যাবে দেশের এভিয়েশন খাত। বলতে পারেন আকাশপথে বিপ্লব এখন সময়ের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী নিজে এসব প্রকল্পের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। কাজেই এগুলো এখন আর স্বপ্ন নয়-সত্যি সত্যিই ঘটতে যাচ্ছে। যেমন কক্সবাজার বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন ও শাহজালালের হ্যাঙ্গার প্রতিস্থাপন ও এপ্রোন তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে এ মাসেই। এগুলো সম্পন্ন হলে দেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম হাব। এভিয়েশন সেক্টরে এভাবেই ঘটতে যাচ্ছে বিপ্লব। এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সিভিল এভিয়েশনের বর্তমান চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান, মেম্বার (অপস) এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান, পরিচালক উইং কমান্ডার জিয়াউল কবীর চৌধুরী ও প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামীর নেতৃত্বে প্রকল্পগুলোর সার্বিক তদারকি চলছে। তাদের সঙ্গে রয়েছেন একঝাঁক দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ। বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন, যাতে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই উদ্বোধন করা যায়। মূলত এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে দেশের এভিয়েশন খাত। নবদিগন্তের সূচনা হবে দক্ষিণ এশিয়ার আকাশ যান চলাচলে। দুবাই হংকং সিঙ্গাপুরের মতো হাব গড়ে তোলার বিপুল সম্ভাবনা থেকেই প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার পাচ্ছে। থার্ড টার্মিনাল ॥ সব জটিলতা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেছে থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প। গত সোমবার এর দরপত্র ডাকা হয়েছে। আগামী ৭ মাসের মধ্যে দরপত্র যাচাই-বাছাই, মূল্যায়ন শেষে কার্যাদেশ দিয়ে কাজ শুরু সম্ভব হবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী। প্রায় চৌদ্দ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ করতে যাচ্ছে জাইকা। এর আগে সিভিল এভিয়েশন নিজস্ব অর্থায়নে একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে থার্ড টার্মিনালের সমীক্ষা প্রতিবেদন ও নক্সা তৈরি করে। জাইকা দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর সেই নক্সাই অনুমোদন করে। এ সম্পর্কে প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দুু বিকাশ গোস্বামী জনকণ্ঠকে বলেন, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের অনুমিত সময়সীমা তিন বছর। এ প্রকল্পের অনুমোদিত নক্সায় দেখা যায়, এখানে থাকছে চব্বিশটি বোর্ডিং ব্রিজ। তিন তলার একটি টার্মিনালে রাখা হয়েছে- অত্যাধুনিক ডিজিটাইজড সিস্টেম চেকইন, ইমিগ্রেশন ও প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ। এ টার্মিনাল থেকে বাইরে যাতায়াতের জন্য থাকছে বিশেষ টানেল, যা দিয়ে বিমানবন্দরের গোলচক্কর সংলগ্ন প্রতিটি সড়ক ব্যবস্থার সঙ্গে সংযোগ থাকছে। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ কাজ বলতে শুধু একটি ভবন আর কয়েকটি বোর্ডিং ব্রিজ বোঝায় না। এগুলো ছাড়াও পাওয়ার হাউস, সাব-স্টেশন, বিভিন্ন ফেসিলিটিজ, কমপক্ষে তিনটি কানেক্টিং টানেল ও ফ্লাইওভার, সব ধরনের কমিউনিকেশন সিস্টেম, বর্তমান ভিআইপি লাউঞ্জ ও অন্যান্য স্থাপনা উত্তরদিকে স্থানান্তর করার মতো আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। জানা যায়, বর্তমানের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবন, ভিভিআইপি লাউঞ্জ, ৬ বেসরকারী হেলিকপ্টারের হ্যাঙ্গার, একটি ফ্লাইং ক্লাব সরানোর জন্য এরই মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে এনডি নামে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চারকে। শাহজালাল বিমানবন্দরের সর্ব উত্তর প্রান্তের কার্গো এলাকায় প্রতিস্থাপন করে আগামী এক বছরেই শেষ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে প্রকৌশল বিভাগ। কক্সবাজার দ্বিতীয় প্রকল্প ॥ কক্সবাজার প্রকল্পের প্রথম পর্বের কাজ প্রায় শেষের পথে। এখন চলছে ডিসেম্বরের আগেই তা উদ্বোধনের প্রস্তুতি। এরই মাঝে ঝিনুক আকৃতির একটি অত্যাধুনিক ও সুবিশাল টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। পৌনে তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয় এই প্রকল্প কাজের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন হবে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই। সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান বলেছেন- কক্সবাজার টার্মিনালটি বেশ গুরুত্ব দিয়েই শুরু হচ্ছে এবং তিন বছরের মধ্যেই তা শেষ করা হবে। এদিকে কক্সবাজার প্রকল্পের (প্রথম পর্বের) পরিচালক তরুণ প্রকৌশলী আমিনুল হাসিব জানান, এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ আরও অনেক বড়। এতে থাকবে বর্তমান ৯ হাজার ফুট রানওয়েকে আরও তিন হাজার বাড়িয়ে ১২ হাজার ফুট উন্নীত করা। যাতে এখানে সুপরিসর ৭৭৭ এর পাশাপাশি ৭৪৭ এর মতো বড় উড়োজাহাজগুলো অবতরণ করতে পারে। রানওয়ে ছাড়াও এখানে ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট বাঁধ নির্মাণ ও সমুদ্রের ভেতরে লাইটিং হাউস নির্মাণ। এজন্য ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড কক্সবাজারের জমি অধিগ্রহণ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের দায়িত্ব পালন করবে। এটা হবে বিশ্বে হাতেগোনা কয়েকটি, যেমন- হেলসিংকি ও হংকং এয়ারপোর্টের মতো দৃষ্টিনন্দন এক বিমানবন্দর। মূলত বর্তমান সরকার কক্সবাজারকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান হাব হিসেবে গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। ওসমানী বিমানবন্দরের টার্মিনাল প্রকল্প ॥ বর্তমানে সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে রানওয়ে সংস্কারের কাজ চলছে। মীর আখতার নামে একটি কোম্পানি রানওয়ের কাজ খুব দ্রুতগতিতে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে তৎপর রয়েছে। এরই মাঝে আবার নতুন করে নেয়া হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণের প্রকল্প। সিভিল এভিয়েশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুল আফরোজ জানিয়েছেন, এ বিমানবন্দর সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন টাার্মিনাল ভবন, কার্গো হাউস, হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ে, কারপার্কিং, এক্সিট ও এন্ট্রি রোড ও চারটি বোর্ডিং ব্রিজ ও সেন্ট্রাল মনিটরিং পয়েন্ট তৈরি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ জন্য একটি পরামর্শক কোম্পানি তিনটি পর্যায়ে এ প্রকল্পের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ’১৯ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ২৩ সালে শেষ হবে। তখন এই প্রকল্পের সেবা মিলবে ’৩৯ সাল পর্যন্ত। তারপর দ্বিতীয় দফায় প্রস্তুতি নিতে হবে ’৪০ থেকে। তৃতীয় দফার প্রস্তাব ’৫৪ সালে, যাতে থাকবে একুশ সালের লক্ষ্য। আড়াই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই বিমানবন্দরে বর্তমানের তুলনায় তিনগুণ ফ্লাইট বেশি চলাচল করতে পারবে। রাডার ও এটিসি ॥ আধুনিক বিশ্বের নিরাপদ বিমান চলাচলের জন্য রাডার ও এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম প্রধান বিবেচ্য স্থাপনা। এভিয়েশন জগত যতটা এগিয়ে যাচ্ছে- রাডার ও ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমও ততই আধুনিক হচ্ছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিভিল এভিয়েশনও হাতে নিয়েছে বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত এই প্রকল্প। প্রথম দফায় রাডার প্রকল্পের প্রস্তাব নানা জটিলতায় ভেস্তে যাওয়ায় দ্বিতীয় দফা আবারও একটি প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। মৃতপ্রায় এ প্রকল্পটিকে পুনরুজ্জীবন প্রদানকারী সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি) উইং কমান্ডার জিয়াউল কবীর চৌধুরী বলেন, রাডার প্রকল্পটি অবশ্যই সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার প্রকল্প। যতদ্রুত সম্ভব এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চলছে। জানা গেছে, প্রকল্পটি বর্তমানে ৮শ’ কোটি টাকায় প্রাক্কলন ব্যয় ধরে একটি প্রস্তাব চেয়ারম্যানের দফতরে পাঠানো হয়েছে। এটাকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে প্রস্তাব আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। খানজাহান আলী বিমানবন্দর ॥ বিমানবন্দরের উন্নয়ন দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের কাজেও হাত দিয়েছে সিভিল এভিয়েশন। এ জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ২০১৫ সালের ৫ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তারপরই বিমানবন্দরের নক্সা ও মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুতের জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগে ইওআই আহ্বান করে সিভিল এভিয়েশন। এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দুু বিকাশ গোস্বামী জানান, বিমানবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ। এখন শুরু হবে প্রজেক্ট অফিস ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ। জানা যায়, ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় বাগেরহাটের ফয়লায় মংলা-খুলনা মহাসড়কের পাশে হযরত খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। সে সময় এ প্রকল্পের জন্য ৯৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু বর্তমান সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হবার পর একনেকের ২০১৫ সালের ৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় খানজাহান আলী বিমানবন্দরের সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। সংশোধিত প্রকল্পে জমির পরিমাণ আরও ৫৩৬ একর বাড়ানো হয়। খুলনায় বিমানবন্দর তৈরির জন্য ’৬১ সালে খুলনা নগরী থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে ফুলতলার মশিয়ালীতে স্থান নির্ধারণ করা হয়। ‘৬৮ সালে ওই পরিকল্পনা বাতিল করে নগরীর তেলিগাতিতে নতুন স্থান নির্ধারণ করে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। আশির দশকে তৃতীয়বারের মতো স্থান নির্ধারণ করা হয় বাগেরহাটের কাটাখালীতে। চতুর্থ দফায় ’৯৬ সালে রামপাল উপজেলার ফয়লায় খানজাহান আলী বিমানবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এজন্য খুলনা-মংলা সড়কের পাশে ’৯৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯৬ সালের জুনে সিভিল এভিয়েশনের কাছে এ জমি হস্তান্তর করে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন। কিন্তু অর্থের অভাবে সে সময় নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। ’৯৭ সালের প্রথম দিকে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে ছোট আকারের বিমানবন্দরের প্রকল্প বাদ দিয়ে মাঝারি আকৃতির বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়। এজন্য প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৮৩ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী আবার শুরু হয় অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটের কাজ। ওই সরকারের আমলে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার মাটি ভরাটের কাজ হয়। কিন্তু ২০০৬ সালের প্রথম দিকে মাটি ভরাটের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর বর্তমান সরকারের শুরুর দিকেই আবার চাঙ্গা করা হয় প্রকল্পটি। সৈয়দপুরে আঞ্চলিক হাব ॥ বর্তমান সরকারের আমলে আবারও চালু করা হয় উত্তরাঞ্চলের সৈয়দপুর বিমানবন্দর। প্রতিদিন এখানে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ যাত্রীর সংখ্যা। বর্তমানে নয় শ’ একর জমির ওপর এ বিমানবন্দর। সিভিল এভিয়েশন এ বিমানবন্দরকে আরও উন্নত করে আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাতে এখান থেকে কলকাতা, অসম, ভুটান ও নেপালের ফ্লাইট পরিচালনা করা যায়। বর্তমানে এখানে একশ কোটি ব্যয়ে টার্মিনাল শেড, পার্কিং বেসহ অন্য আধুনিকায়নের কাজ চলছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্পে রয়েছে রানওয়ে শক্তিশালী (এসফল্ট হেচিং) কাজ। এ অঞ্চলের সঙ্গে আশপাশের দেশগুলোর আকাশপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ব্যবসা বাণিজ্য আরও জোরদার হবে বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী। সিভিল এভিয়েশনের পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে- সৈয়দপুর বিমানবন্দর এখন যতটুকু আছে তার দ্বিগুণ সম্প্রসারণ করতে হবে। এ জন্য আরও প্রায় নয় শ’ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। রানওয়ে আরও দ্বিগুণ সম্প্রসারণ করতে হবে। যাতে ৭৩৭ মতো মাঝারি ধরনের এয়ারক্রাফট ওঠানামা করতে পারে। যশোর বিমানবন্দরে নামবে ৭৩৭ ॥ যশোরে দৈনিক গড়ে পঁচিশটি ফ্লাইট ওঠানামা করে। দিনদিনই বাড়ছে এখানকার কর্মব্যস্ততা। অথচ সে তুলনায় নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধাদি। দীর্ঘদিন ধরেই এই বিমানবন্দরের উন্নয়ন ও সংস্কারের দাবি শেষ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের আমলেই বাস্তবায়িত হতে চলছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে একশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনাল ভবন তৈরির কাজ। প্রস্তাবিত প্রকল্পে রানওয়ে জোরদার ও আধুনিকায়ন করা হবে। এগুলো শেষ হলে এখানে বোয়িং ৭৩৭ ওঠানামা করতে পারবে। আধুনিকায়ন হচ্ছে ঈশ্বরদী ও রাজশাহী বিমানবন্দর ॥ এ দুটো বিমানবন্দরেও তিন শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে রানওয়ে সংস্কারসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের এই প্রকল্প আগামী ৩ বছরের মধ্যে শেষ করার টার্গেট দেয়া হয়েছে। এ নির্মাণ শেষ হলে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরও বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। জাইকা প্রকল্প ॥ এসব প্রকল্প ছাড়াও সম্পূর্ণ জাইকার অর্থায়নে দেশের কয়েকটি বিমানবন্দরের নিরাপদ বিমান চলাচলের জন্য বেশ কিছু সুবিধাসংবলিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কাজ চলছে। ১৮৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর, চট্টগ্রামে শাহ আমানত বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর, যশোর বিমানবন্দরে যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ চলছে।
×