ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণমাধ্যমের হাত-পা বাঁধতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ॥ রিজভী

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গণমাধ্যমের হাত-পা বাঁধতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ॥ রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানুষের মুখ বন্ধ ও গণমাধ্যমের হাত-পা বাঁধতে জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে বন্দুকের নলের মুখে চাপ প্রয়োগ করে দেশত্যাগ ও পদত্যাগে বাধ্য করে বিচার বিভাগকে সরকার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গণতন্ত্র থাকছে কোথায়? রিজভী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামক আইনে মানুষের বাক ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। এ আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা সংবিধান পরিপন্থী। এই আইন বাকশালেরই প্রেতাত্মা। গণমাধ্যমে অথবা যে কোন মাধ্যমেই যাতে দুর্নীতির কোন খবর যাতে প্রকাশিত না হয়, অথবা প্রকাশ করতে না পারেন সেজন্যই এই ন্যক্কারজনক কালো আইন তৈরি করা হলো। এই আইনে মানুষের সকল বাক ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধের বিস্তার লাভ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এটি সংবিধানবিরোধী একটি আইন। সরকারের লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা কালো আইন করা হয়েছে। রিজভী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংবিধানের মূল চেতনা বিশেষ করে মুক্ত চিন্তা, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ করা হয়েছে। এ আইনটি বাকশালের প্রেতাত্মা। ডিজিটিাল নিরাপত্তা আইনের কারণে দেশের মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ল। কারণ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এখন বিনা ওয়ারেন্টে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের অফিস ঢুকে তল্লাশির নামে তা-ব চালাতে পারবে, কম্পিউটারসহ সকল কিছু জব্দ করতে পারবে, যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে। সাধারণ মানুষও এই কালো আইনের থাবা থেকে রেহাই পাবে না। তাই এই কালাকানুনের বিরুদ্ধে দেশবাসীসহ সকল গণমাধ্যমের কর্মী ও মুক্ত চিন্তার মানুষদের রুখে দাঁড়াতে হবে। রিজভী বলেন, কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও সরকার তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন না। বরং তাকে চিকিৎসা না দিয়ে তিলে তিলে মারার চক্রান্ত করছে। আমরা অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় রায় দিয়ে কারাবন্দী করে এক নম্বর মিশন কার্যকর করেছে। এরপর এখন দুই নম্বর মিশন কার্যকর করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্টের মামলায় আগামী ১০ অক্টোবর রায় দেয়া হবে। রিজভী বলেন, বর্তমান সরকার সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করেছে। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার ‘এ ব্রোকেন ড্রিম’ বইয়ে পরিষ্কার করে বলেছেন যে, দেশের গোয়েন্দা সংস্থার হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মুখে তিনি দেশ ছেড়েছেন। বন্দুকের নলের মুখে চাপ প্রয়োগ করে দেশত্যাগ ও পদত্যাগে তাঁকে বাধ্য করে বিচার বিভাগকে সরকার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের বিষয়ে রিজভী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্টের মামলায় ১০ অক্টোবর রায় দেয়া হবে। দীর্ঘ ১৪ বছর ঝুলন্ত রাখার পর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা সুপরিকল্পিত নীলনক্সারই অংশ। রায় প্রকাশের আগেই সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা বলছেন এই রায় হওয়ার পর বিএনপি বিপাকে পড়বে। তার মানে সরকার জানে কী রায় হতে যাচ্ছে। এই মামলায় ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখা হবে কি না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। রিজভী বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাসায় হামলা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীর বাসভবনে পুলিশি তল্লাশির ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, তৈমুর আলম খন্দকার, দলের নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আব্দুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনীর হোসেন প্রমুখ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গণতন্ত্র থাকছে কোথায়? নজরুল ॥ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দেশে গণতন্ত্র থাকছে কোথায় এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পরে গেছেন, তার বাম হাত, বাম পা পঙ্গু হয়ে পড়েছে। তিনি হাঁটতে পারেন না চলতে পারেন না। তার চোখের অবস্থা এত খারাপ হয়ে গেছে চিকিৎসা না নিলে তিনি অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। এত কিছু জানার পরও মায়ের জাত আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোন উদ্যোগ নিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মজিবুর রহমান চৌধুরী, সংগঠনের নেতা এম জাহাঙ্গীর আলমসহ আরও ক’জন বক্তব্য রাখেন।
×