ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

অন্যথায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট

নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে জাতীয় পার্টি এককভাবে লড়বে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে জাতীয় পার্টি এককভাবে লড়বে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে আসন ভাগাভাগি হবে। যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে তাহলে ফের আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট গঠন করবে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপা। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কাছে কমপক্ষে ৮০টি আসন চায় দলটি। সবকিছু নির্ভর করছে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার ওপর। জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস মিলেছে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, একক নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠন করেছে জাতীয় পার্টি। এর লক্ষ্য হলো নির্বাচনে ইসলামী দল ও সমর্থকদের ভোট পাওয়া। দলকে সংগঠিত করতে শুরু হতে যাচ্ছে সাংগঠনিক সফরও। আগামী ৬ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করারও প্রস্তুতি নিয়েছে জাতীয় পার্টি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে গিয়ে সরকার গঠন করার ক্ষেত্রে নিজেদের দাবি দাওয়ার কথাও জানিয়েছে দলটি। বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদে জাপার দুই প্রতিমন্ত্রী ও একজন মন্ত্রী রয়েছেন। জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে আওয়ামী লীগ যদি তৃতীয় বারের মতো ফের সরকার গঠন করে তাহলে মন্ত্রিপরিষদে জাপার প্রতিনিধিত্ব অনেক বেশি দাবি করা হয়েছে। জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের জানিয়েছেন, তাদের এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে এককভাবে ভোটে অংশ নেবে জাপা। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত হয়েছে। তবে বিএনপি ভোটে অংশ নিলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা প্রবল বলে জানান তিনি। বিএনপি ভোটে এলে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোট থেকে ৮০টি আসন চায় জাপা। জাপা সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এরশাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা হবে না। এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা হবে। যদিও প্রায় এক বছর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চেয়ে প্রার্থী তালিকা দিয়েছিল জাতীয় পার্টি। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ সময় দলের আরও শীর্ষ তিন নেতাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। বৈঠকে ঠিক কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারে জাতীয় পার্টির কাকে কাকে রাখা যায় সেসব বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীকে। নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ আরও নানা বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করলে অন্তত ১২ জন মন্ত্রী চেয়েছেন এরশাদ। নির্বাচনকালীন সরকারে জাপার পক্ষ থেকে আরও অন্তত তিনজন প্রতিনিধি রাখারও দাবি আছে। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২৯ অক্টোবরের পর নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা জানিয়ে বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের পরিধি ছোট হবে। তবে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আরও প্রতিনিধি নেয়ার দাবি আছে। জাপার সঙ্গে মহাজোট গঠন প্রসঙ্গে কাদের জনকণ্ঠকে বলেন, মহাজোট গঠনের বিষয়টি বিএনপির নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ওপর নির্ভর করছে। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। নির্বাচনের সময় শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোন সমস্যা হবে না বলেও জানান তিনি। জাপা সূত্র বলছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় পার্টি প্রার্থী ঠিক করবে। যেসব এলাকায় জাপার শক্তিশালী অবস্থান সেখানে তাদের প্রার্থী থাকবে। যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বদনাম রয়েছে সেখানেও জাপার পক্ষ থেকে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দেয়া হতে পারে। অর্থাৎ নিশ্চিত বিজয় হবে এমন পরিকল্পনা থেকেই প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। এক্ষেত্রে উভয় দলই জোট গঠন করে নির্বাচনী জোয়ার সৃষ্টির পক্ষে। যদিও বারবার একক নির্বাচন করার কথা বলছেন ক্ষণে ক্ষণে মত পাল্টানো নেতা এরশাদ। কিন্তু ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফের মহাজোট করে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। লড়বেন ভোটযুদ্ধে। বাস্তব কথা হলো, বাকি জীবন তিনি ক্ষমতার সঙ্গেই থাকতে চান। রাজনীতিতে একা হয়ে ফের কোন বিপদের মুখে নিজেকে ঠেলে দিতে চান না। এমন কথাও বহুবার বলেছেন তিনি। এরশাদের দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা বলছেন, এককভাবে নির্বাচন করলে এরশাদ ছাড়া কারো জয়লাভের সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করলে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী যেমন বিজয়ী হবে তেমনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়েও ভূমিকা রাখতে পারবে। এমন চিন্তা থেকেই এরশাদ আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকার পক্ষে। জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, এরশাদ আশা করেন ন্যূনতম ৮০টি আসন আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ৭০টি আসনে ছাড় দিতে চেয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এসে এরশাদ আকস্মিক সরে যাওয়ায় জাতীয় পার্টি এটি অর্জন করতে পারেনি। অনেকেই দল প্রধানের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেন। শেষ পর্যন্ত ৩৪টি আসন পায় জাপা। সংরক্ষিত আসন মিলিয়ে এখন জাপা ৪০জন এমপি নিয়ে সংসদের বিরোধী দল। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমরা একক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতোমধ্যে দলের জনপ্রিয় নেতাদের মধ্যে অনেককেই এলাকায় কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার ওপর আমাদের পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নির্ভর করছে। বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আবারও মহাজোট গঠন হতে এমন আভাস দিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। বিএনপি না এলেও আমরা নির্বাচন থেকে সরে যাব না। জানতে চাইলে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ বলেন, নির্বাচন যত সামনে আসবে ততো রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট হবে। নানা রকমের পট পরিবর্তনের খেলা দেখা যাবে জাতীয় রাজনীতিতে। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। ইতোমধ্যে জাপার তৃণমূল নেতারা ন্যায্য হিস্যা আদায় করে রাজনৈতিক জোট গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন আমাদের দলের চেয়ারম্যানকে।
×