ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দাদের ধন্যবাদ জানালেন গাজীপুর ও রংপুরের মেট্রোপলিটন ইউনিট উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

ঘন বসতিপূর্ণ দেশে আমরা জঙ্গী দমনে সফল হয়েছি

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  ঘন বসতিপূর্ণ দেশে আমরা জঙ্গী দমনে সফল হয়েছি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। বাংলাদেশ পুলিশের সেবার মনোভাব, সততা এবং আন্তরিকতা সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে, এ কাজে পুলিশ বাহিনী সফল হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ যাতে আরও সহজে মানুষকে সেবা দিতে পারে সে লক্ষে কাজ করছে সরকার। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি, এটা আমাদের ধরে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। রবিবার রংপুর এবং গাজীপুর পুলিশের দু’টি পৃথক মেট্রোপলিটন ইউনিটের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। এতে করে পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসও ফিরে এসেছে। যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরকারী কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনগণ এবং রংপুর ও গাজীপুর পুলিশ লাইন্সের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে এই ইউনিট দু’টির উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। বাংলাদেশ কারও কাছে হাত পেতে চলবে না, বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবে, আত্মসম্মান এবং মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাবে, বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলবে। তিনি বলেন, রংপুর ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ইউনিটের উদ্বোধন করছি এই জন্য যে, মানুষের সেবাটা যাতে নিশ্চিত হয়। কারণ, দেশের উন্নয়ন করতে হলে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা দরকার। তিনি এ সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যেখানে আজ বিশ্বজুড়ে জঙ্গীবাদ একটি বড় সমস্যা, সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি ঘণবসতিপূর্ণ দেশে আমরা এই জঙ্গীবাদ দমনে সাফল্য অর্জন করেছি। পুলিশ বাহিনীকে আমি ধন্যবাদ জানাই, তারা সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেই আজকে আমরা এই জঙ্গীবাদ দমনে সক্ষম হয়েছি। কারণ আন্তরিকতার সঙ্গে তারা কাজ করেছেন। কোন একটি ঘটনা ঘটলে দিনরাত যখনই হোক, ফোন করেছি তাদের সাড়া পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের তথাকথিত আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাসের সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, তাঁদের ওপর আঘাত এসেছে। অগ্নিসন্ত্রাসে আমাদের ১৭ জন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও অগ্নিসন্ত্রাসের হাত থেকে রেহাই পায়নি। তিনি বলেন, আমি এটুকুই বলব যে, একটা দেশকে উন্নত করতে হলে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা। সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। দেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের। অবশ্যই দেশকে গড়ে তোলার জন্য আমরা সকল মানুষের জন্য সেবা নিশ্চিত করতে চাই। আর সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়েছি। তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। এই যে নতুন মেট্রোপলিটন গঠন করা হলো এতে অনেক পুলিশ সদস্যের পদোন্নতিরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের পদেরও আপগ্রেডেশন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আর্থ-সামাজিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা বাজেট বৃদ্ধি করেছি, পুলিশের বাজেটও আমরা বাড়িয়ে দিয়েছি। জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো আমরাও করার উদ্যোগ নিচ্ছি। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গ একসময় অবহেলিত ছিল। ইতোমধ্যে আমরা সেখানে ইপিজেড করেছি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। আর রংপুরকে যেহেতু একটা বিভাগ করেছি সেখানে বিভাগীয় সুযোগ-সুবিধাটাও যেন স্থানীয় জনগণ পায় সেভাবেই আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আজ রংপুর এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের যেহেতু যাত্রা শুরু হচ্ছে কাজেই এই দু’অঞ্চলের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তাটা নিশ্চিত হবে। মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নটা আরও ত্বরান্বিত হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সারাদেশে উন্নত সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে পারলেই, দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ত্বরান্বিত হবে। দেশের সব মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, সে বিষয়েও অনুষ্ঠানে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময় যেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি, এখন তা হয়েছে ১৬ কোটি। জনগণের সেবা সময়মতো জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রংপুরকে আলাদা প্রশাসনিক বিভাগ করা হয়েছে। সেবা দিতে গিয়ে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে পুলিশ বাহিনীকে যে কষ্ট স্বীকার করতে হয় সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যি কথা বলতে কি, আসলে সব থেকে বেশি কষ্টটা তাদেরই করতে হয়, তাদের কোন কর্মঘণ্টা নাই, সময় নাই। মানুষ যখনই চাচ্ছে তখনই তাদের ছুটে যেতে হচ্ছে, তাদের কাজ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তিনি যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন, পুলিশ মাত্র ২০ শতাংশ রেশন পেত। এখন তা বাড়িয়ে শতভাগ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশের সংখ্যা জনসংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল ছিল। তাদের চিকিৎসা, আবাসনের ভাল ব্যবস্থা ছিল না। সরকার সেসব বিষয়েও উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা রাজারবাগে হাসপাতাল নির্মাণ করে দিয়েছি, আবাসনের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করে দিয়েছি। আমি নিজেই দেখেছি, টিনের ঘর, বৃষ্টি আসলে পানি পড়ে, বিশ্রাম নিতে পারে না, পালা করে ঘুমাত। প্যারেডের জন্য জায়গা ছিল না, মাঠের মধ্যে প্যারেড হতো, বৃষ্টি হলে প্যারেড করতে পারত না। আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে চেষ্টা করেছি এ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার, উন্নত করার এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাতে মানুষকে সেবা দিতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি রেখেও আমরা কাজ করেছি। জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন এবং পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী অনুষ্ঠানে বক্তৃৃতা করেন। মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী গাজীপুর এবং রংপুরের স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন। এ সময় গণভবন প্রান্ত এবং গাজীপুর ও রংপুরে কয়েক মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার জনগণ, পুলিশ ও র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ এবং স্থানীয় উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।
×