ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

ভাসছে চরাঞ্চল, ডুবছে বসতি

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ভাসছে চরাঞ্চল, ডুবছে বসতি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নিম্নাঞ্চলে ক্রমেই রূপ নিচ্ছে বন্যার। রাজশাহীর পদ্মার নদীর মধ্যচর ছাড়াও ওপারের চরে এরইমধ্যে প্লাবিত হয়েছে ঘরবাড়ি ও জনবসতি। পানি ঢুকেছে এপারের নদীতীরবর্তী এলাকায়। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার হারে পানি বাড়ছে এখন পদ্মায়। এতে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ফলে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন পদ্মাতীরবর্তী ও বিভিন্ন চরাঞ্চলের মানুষ। এরইমধ্যে রাজশাহীর পদ্মাতীরবর্তী নিচু এলাকাগুলো ডুবে গেছে। নগরীর শ্রীরামপুর থেকে পঞ্চবটির বিভিন্ন এলাকা ডুবে গেছে। এছাড়াও পদ্মার ওপারে সীমান্তবর্তী চরগুলোতেও দেখা দিয়েছে বন্যা। নদীর পানি এখনও বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও এভাবে পানি বাড়তে থাকলে যে কোন সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। রাজশাহী পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক জানান, প্রতিদিনই পদ্মার পানি চার-পাঁচ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে। সর্বশেষ বুধবার সকালে পদ্মায় রাজশাহীতে পানির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ১৭ মিটারে। এর আগের দিন ছিল ১৯ দশমিক ১৬ মিটার। এর আগে শনিবার দুপুর ১২টায় রাজশাহী নগরীর বড়কুঠি পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৪ মিটার। গত শুক্রবার ভোরে ছিল ১৬ দশমিক ৯৬ মিটার। সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১৭ মিটার। এনামুল হক জানান, রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মার পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। এখন প্রতিদিন পানি বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এবার ভরা বর্ষায় পদ্মার বুকে অধিকাংশ স্থানে চর দেখা গেলেও বর্ষা শেষে উজানের পানিতে এখন পদ্মার সে চর ডুবে গেছে। ফুলে ফেপে ভরা যৌবন ফিরে পেয়েছে পদ্মা নদী। রাজশাহী পাউবো সূত্র জানায়, ভারতীয় অংশে মহানন্দা নদীতে পানি বিপদসীমার মাত্র এক মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে চলতি সপ্তাহে মহানন্দা বিপদসীমা অতিক্রম করবে। তখন রাজশাহীর পদ্মায়ও পানি আরও বাড়বে। এমনকি বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যাও দেখা দিতে পারে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর বর্ষায় ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়া হয়। ফারাক্কা বাঁধের পানি ধরে রাখার সক্ষমতা ৫০ হাজার কিউসেক। এর অতিরিক্ত পানি ধরে রাখতে পারে না। ফলে বর্ষণের পানি ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে এসে পদ্মার পানির উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, দিল্লী থেকে বন্যার পূর্বাভাস দেয়া হলেও এখনও রাজশাহীতে বন্যা নিয়ে পাউবো শঙ্কিত নয় বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে পদ্মায় পানি বাড়লেও বাঁধের কোথাও কোন ধরনের ক্ষতি হলেই সেটি তাৎক্ষণিক অস্থায়ীভাবে সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাতে বাঁধ ভেঙে পড়ে পদ্মার পানি শহরে প্রবেশ করতে না পারে। পাউবো এ নিয়ে সতর্ক রয়েছে। এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান সজল বলেন, ‘চীনের সাংহু নদীতে গত ৫০ বছরের মধ্যে রেকর্ড পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই নদীর পানি এসে ভারতের অরুণাচল ও অসমে এরই মধ্যে বন্যার সৃষ্টি করেছে। উজান থেকে নেমে আসা সেই পানি বাংলাদেশের পদ্মা ও তিস্তায় এসে পড়ছে। ফলে এসব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে। কুড়িগ্রাম স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, উজান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ী ঢলে কুড়িগ্রামের ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, গঙ্গাধরসহ সবকটি নদ-নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কোন নদ-নদীর পানি বিপদ সীমা এখনও অতিক্রম করেনি। এ অবস্থায় কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ধরলা ও দুধকুমার নদীর অববাহিকার প্রায় ৩০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বুধবার দুপুরে ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ২৬ দশমিক ২৬ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে দুধকুমার নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ সে. মি. বৃদ্ধি পেয়েছে। দুধকুমার নদের পানি হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে তা নদের দু’কূল ছাপিয়ে নি¤œাঞ্চলে প্রবেশ করছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরলা নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ধরলা নদীর ভাঙ্গনে দুদিনে কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চর নানকার, সাতভিটা , নন্দদুলালের ভিটায় শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় এসব এলাকাকে নদীভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার দাবিতে মঙ্গলবার ভোগডাঙ্গার চর নানকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও হাজার হাজার নদী এলাকার মহিলা পুরুষ অংশগ্রহণ করে। দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলকুড়ি ইউনিয়নের চর উত্তর টিলাই, উত্তর টিলাই, উত্তর ধলডাঙ্গা, দক্ষিণ ধলডাঙ্গা, উত্তর সাতগোপাল, বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নসহ প্রায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার কিছু ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। কাঁচা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে যাতায়াত ব্যবস্থা। এছাড়াও নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর নুনখাওয়ার কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চলেও পানি ঢুকে পড়ছে। এদিকে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রায় ১৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ছে। তলিয়ে গেছে পটল, ঢেঁড়স, মরিচ, শসাসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। নিম্নাঞ্চলের কাঁচা সড়কে পানি উঠায় ধরলা নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
×