ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ শুরু পুলিশের

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ শুরু পুলিশের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশকে সহযোগিতা করছে স্কাউট ও রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা। কোন কোন স্থানে পুলিশের চেয়ে জনস্বার্থে কাজ করা দুটি সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের বেশি সোচ্চার দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার সকাল থেকেই নগরীর বেশিরভাগ সড়কে হিউম্যান হলার ও লেগুনা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ট্রাফিক সচেতনতার মাস উপলক্ষে বাস চলাচলও কম ছিল। এজন্য জনদুর্ভোগের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে পুলিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হেলমেটবিহীন চালকদের পেট্রোল পাম্প থেকে তেল দেয়া হচ্ছে না। যেখানে সেখানে গাড়ি থামাতেও পুলিশকে নিষেধ করতে দেখা গেছে। তবে এই সিদ্ধান্ত খুব একটা কার্যকর হয়নি প্রথম দিনে। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে লেগুনা চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ১২১টি বাস স্টপেজ ছাড়া কোন অবস্থাতেই নগরীতে বাস থামান যাবে না। যত্রতত্র গাড়ি থামালে মামলা করার কথাও বলেন তিনি। সেইসঙ্গে হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালকদের কোন পেট্রোল পাম্পে তেল না দেয়ার কথা জানিয়ে কমিশনার বলেন, দরজা বন্ধ করে বাস চালাতে হবে। আন্ডারপাস ও ওভারব্রিজ ব্যবহারসহ যত্রতত্র রাস্তা পারাপার বন্ধে জনসচেতনায় বিশেষ বিশেষ পয়েন্টে মাইকিং করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। বুধবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, দরজা বন্ধ করে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত খুব একটা কার্যকর হয়নি। বেশিরভাগ বাস দরজা খুলে চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে লেগুনা চলাচল বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। বাসাবো বিশ্বরোডসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ‘এখানে গাড়ি দাঁড় করালে মামলা হবে’। অর্থাৎ বাস স্টপেজ ছাড়া গাড়ি দাঁড়াতে পুলিশ সদস্যদের বাধা দিতে দেখা গেছে। অন্তত ১০টি পেট্রোল পাম্প খুলে প্রত্যেকটিতেই একটি বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়ে। এতে লেখা রয়েছে, ‘হেলমেটবিহীন চালক/মালিক এর মোটরসাইকেলে পেট্রোল, অকটেন সরবরাহ করা হয় না। নির্দেশক্রমে পুলিশ কমিশনার ডিএমপি’। পাম্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট পরতে দেখা যাচ্ছে। যারা হেলমেট ছাড়া আসছে তাদের আমরা তেল না দেয়ার কথা বলছি। অনেকেই জরুরী প্রয়োজনের কথা বলে তেল নিচ্ছেন। প্রথমদিন বলেই আমরা কোন কোন ক্ষেত্রে একটু ছাড় দিচ্ছি। আগামীকাল থেকে কোন ছাড় নয়। হেলমেট ছাড়া তেল সরবরাহ করা হবে না। গুলিস্তান থেকে বাসাবো, মুগদা থেকে মালিবাগ মোড় ও মগবাজার-গাবতলী থেকে মহাখালী পর্যন্ত লেগুনা চলাচল করতে দেখা যায়নি। ফার্মগেট এলাকায় শত শত লেগুনা ও হিউম্যান হলারের অবৈধ পার্কিং দেখা যেত প্রতিদিন। মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন রুটে চলা এসব পরিবহন বুধবার চোখে পড়েনি। এসব পয়েন্ট ছিল ফাঁকা। কোন যানজট ছিল না। ফার্মগেট, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিয়ম মেনে রাস্তা পারাপারের ঘোষণা দেয়া হয় মাইকে। এক্ষেত্রে পুলিশকে সহযোগিতা করে ট্রাফিক ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইন মেনে রাস্তা পারাপারের জন্য প্রথমে পথচারীদের আহ্বান জানানো হবে। এরপর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করার কথাও জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে পরিস্থিতির দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। অনেক স্থানেই ফুট ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার বেড়েছে। তেমনি বেপরোয়া পারাপারও আছে। পুলিশ বলছে, বেপরোয়া পথচারীদের সড়ক পারাপার সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ৩টি পয়েন্টেম মোট ২৬ জন রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক (বাংলামোটর মোড়, রূপসী বাংলা ক্রসিং ও শাহাবাগ মোড়) প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দায়িত্বপালন করছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটিন পুলিশ (ট্রাফিক)। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের পরিচালক এস এম আহম্মেদ জানান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা ট্রাফিক আইন প্রয়োগ ও রাস্তা পারাপার বিষয়ে পথচারীদের মাঝে ট্রাফিক সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে। মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে, ইত্তেফাক মোড়, দৈনিক বাংলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্কাউট সদস্যদের কাজ করতে দেখা গেছে। ৫-৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ‘মাসব্যাপী ট্রাফিক আইন প্রয়োগ ও ট্রাফিক সচেতনতামূলক কর্মসূচী-২০১৮’ উপলক্ষে ঢাকা মহানগরী এলাকায় ট্রাফিক আইনে বিদ্যমান বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী রুট পারমিটবিহীন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, ড্রাইভিং লাইসেন্সবহীন যানবাহন, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী যানবাহন এবং চালকের বিরুদ্ধে ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনে পুলিশকে সহায়তা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ২৬ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে।
×