ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রীষ্ম অঞ্চলে ফসলহানির কারণ কীটপতঙ্গ

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 গ্রীষ্ম অঞ্চলে ফসলহানির কারণ কীটপতঙ্গ

জলবায়ুর পরিবর্তন বিশেষ করে উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোর ফসলহানির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে কীটপতঙ্গ। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের এক গবেষণায় এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রার প্রতি ডিগ্রী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অন্তত ১০-২৫% বেশি গম, চাল এবং ভুট্টা ধ্বংস করবে কীট, গবেষকদের হিসাব তাই বলছে। উষ্ণতা এসব ফসলনাশক কীটকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে এবং সেগুলোর খাবার গ্রহণের পরিমাণও বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে তাদের বংশবৃদ্ধি হবে। গবেষণা দলটির সহকারী প্রধান কার্টিস ডয়েচ বলেন, এভাবে বংশবৃদ্ধির ফলে খাদ্যশস্যের ওপর টান পড়বে। তিনি বলেন, বর্তমানে কীটপতঙ্গের খাবারের পরিমাণ ১২টি রুটির সমপরিমাণ আটার সমতুল্য। তবে এই শতাব্দীর শেষেও যদি এই হারে সামগ্রিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে তবে এসব কীটের খাবার গ্রহণের মাত্রা আরও বাড়বে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের প্রফেসর কার্টিস ডয়েচ আরও বলেন, আমরা পুরো বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছি। তাতে পুরো বিশ্বের মানুষের প্রধান তিনটি খাদ্যশস্যকে বেছে নেয়া হয়। সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় তারা পুরো বিশ্ব থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে একটি গাণিতিক গণনা করেন যা ইঙ্গিত দেয় যে, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফসলের ক্ষতি বেশি করে কীটপতঙ্গ। গবেষকদের দলটি ৩৮ প্রজাতির ক্ষতিকর পোকার তথ্য তাদের গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। তারা দেখতে চেয়েছেন যে কিভাবে তাপমাত্রা এসব কীটের বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে সেই সঙ্গে খাদ্য শস্যের ওপর তাদের প্রভাব এবং ভবিষ্যত ফসলহানি বুঝতে এই পরীক্ষা চালানো হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেখা গেছে তাপমাত্রা প্রতি ডিগ্রী বৃদ্ধিতে ফসলের ক্ষতি হয়ে থাকে শতকরা ৫ ভাগ। আর সেখানে কীটপতঙ্গের প্রভাব যোগ হলে সে ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর টিউকসবারি অন্তত তাই বলছেন। টিউকসবারির মতে যত তাপমাত্রা বাড়বে তত পোকামাকড়ের বংশবৃদ্ধি হবে এবং তত দ্রুত তারা ফসল খেতে শুরু করবে। তার মতে, এর প্রভাব বেশি দেখা যাবে ইউরোপের ‘ব্রেড বাস্কেট’ ও মার্কিন ‘কর্ন জোন’-এ। তিনি আরও বলেন যে, ‘বহু ইউরোপীয় দেশেই এ ধরনের প্রভাব ৫০-১০০% পর্যন্ত দেখা যেতে পারে। এর অর্থ ইউরোপে গম উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত ১৬ মিলিয়ন টন। কিন্তু ক্রান্তীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা ইতোমধ্যেই এসব পোকামাকড়ের বৃদ্ধির জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এখন সেখানে তাদের বংশবৃদ্ধির হার বরং কমেছে। বিশ্বের অন্যতম বেশি ফসল উৎপাদনকারী অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং চীন এই আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে।-বিবিসি অবলম্বনে।
×