ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জেল-জরিমানার বিধান রেখে বেসরকারী চিকিৎসা সেবা আইন হচ্ছে

ডাক্তাররা অফিস সময়ে চেম্বার বা অন্যত্র রোগী দেখতে পারবেন না

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  ডাক্তাররা অফিস সময়ে চেম্বার বা অন্যত্র রোগী দেখতে পারবেন না

তপন বিশ্বাস ॥ জেল-জরিমানার বিধান রেখে বেসরকারী চিকিৎসাসেবা আইন করতে যাচ্ছে সরকার। দীর্ঘ প্রায় ৩৪ বছর পর এই প্রথম ডাক্তারদের চিকিৎসা বাবদ ফি নির্ধারণ করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যা বেসরকারী চিকিৎসাসেবা আইন ২০১৬ নামে অভিহিত হবে। নতুন আইন অনুযায়ী অফিস সময়ে কোন ডাক্তার বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কিংবা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতে পারবেন না। ছুটির দিনে নিজ জেলার বাইরে গিয়ে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতে পারবেন না। নিয়ম না মানলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে ১ লাখ টাকা জরিমানা ও ৬ মাসের কারাদ- দেয়া হবে। এছাড়া আদালত উপযুক্ত মনে করলে বেসরকারী চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াফত করতে পারবে। চিকিৎসায় অবহেলা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদ- এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এছাড়া নতুন এ আইনে ডাক্তাররা সরকার নির্ধারিত ফির তালিকা চেম্বারের সামনে দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে বাধ্য থাকবেন। আদায় করা ফি বাবদ রোগীকে রসিদ দিতে হবে। রসিদের মুড়ি ডাক্তার নিজ দায়িত্বে সংরক্ষণ করতে বাধ্য থাকবেন। কোন ডাক্তার স্বীকৃত, অনুমোদিত সার্টিফিকেট কোর্স, ডিপ্লোমা বা ডিগ্রী ছাড়া কোন যোগ্যতার বিবরণ সাইনবোর্ড, নামফলক কিংবা ভিজিটিং কার্ডে ব্যবহার করতে পারবেন না। মুক্তিযোদ্ধা ও দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের জন্য বিনামূল্যে যথাক্রমে ৩ ও ২ ভাগ শয্যা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। ডাক্তারের বিরুদ্ধে চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোন ধরনের অবহেলার অভিযোগ তদন্ত করবে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল। ওই সংস্থার তদন্তে কোন ডাক্তার দোষী হলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদ- এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি ভুল চিকিৎসায় শিকার হয়ে মারা গেলে কিংবা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভাংচুর করলে এবং এর ফলে কোন ডাক্তার কিংবা বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে আক্রমণকারীকে ৩ বছরের কারাদ- এবং ৫ লাখ টাকা অর্থদ- দেয়া হবে। এছাড়া অতিরিক্ত ফি আদায় করলে ডাক্তারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। আইনের খসড়া নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সংশ্লিষ্ট এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ১৯৮২ সালে এ সংক্রান্ত একটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে ওই আইন চলে আসছে। তবে যুগ বদলে গেলেও আইনটি প্রতিপালনও হচ্ছে না। তাই নতুন করে একটি আইনের খসড়া তৈরি করে সমন্বয় সভা করেছি। বৈঠক শেষে স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ইকবাল আর্সলান বলেন, নতুন আইন প্রণয়নের প্রাথমিক কাজ চলছে। ডাক্তারদের ফি এখনও নির্ধারণ হয়নি। তবে আইনটি চূড়ান্ত করা হলে তাতে ডাক্তারের ফি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত অন্যান্য চার্জ উল্লেখ থাকতে পারে। আইনের খসড়াটি থেকে জানা যায়, সরকার সময়ে সময়ে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ডাক্তারদের ফিস ও পরীক্ষা নিরীক্ষা সংক্রান্ত চার্জ নির্ধারণ করে দেবে। অর্থাৎ ডাক্তারের ফি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ নির্দিষ্ট করে দেয়া হচ্ছে না। কোন ডাক্তার সেবা সংক্রান্ত কোন প্রকার মিথ্যা প্রত্যয়নপত্র প্রদান করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে কোন অর্থকড়ি নেয়া যাবে না। বেসরকারী চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে অথবা ডাক্তারের ব্যক্তিগত চেম্বারে বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করতে হবে। চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল তথ্য রেজিস্ট্রারে লিখে রাখতে হবে। ওই রেজিস্ট্রার গোপনীয় দলিল হিসেবে গণ্য হবে। রোগীকে রোগের বিবরণ জানাতে হবে। প্রয়োজনীয় ও বিকল্প চিকিৎসা, চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং অস্ত্রোপচারের জটিলতা সম্পর্কে রোগীকে অবহিত করতে হবে। এমন কি খাতওয়ারি চিকিৎসা ব্যয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে। সন্দেহজনক মৃত্য, আত্মহত্যা, বিষ প্রয়োগ, বেআইনী গর্ভপাত, অগ্নিদগ্ধ হওয়া, দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতি লাঞ্ছিত ও প্রহৃত ক্ষতি অন্যের দ্বারা যে কোন আঘাতজনিত ক্ষতির ক্ষেত্রে চিকিৎসককে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করতে হবে। ডাক্তারের বিরুদ্ধে অপরাধসমূহের তদন্ত ও বিচার ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৫ নং আইনের আওতায় পরিচালিত হবে। ডাক্তারের অপরাধে রোগীর মৃত্যু হলে বাংলাদেশ দ-বিধি ১৮৬০ এর ৪৫ নং আইনের বিধান প্রযোজ্য হবে। এছাড়া সরকারী লাইসেন্স ছাড়া বেসরকারী চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করলে ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও ২ বছরের জেল অথবা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে। বেসরকারী কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তারা পরিদর্শন, চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি কাগজপত্র পরীক্ষা করতে পারবেন। সরকারী নিয়মনীতি লঙ্ঘন হয়েছে প্রমাণ হলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া যাবে। চিকিৎসক আইন না মানলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিদর্শনকালে যদি প্রমাণিত হয় যে জনস্বার্থেই এ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া দরকার তাহলে সরকার যে কোন বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দিতে পারবে। এমন কি লাইসেন্সও বাতিল করতে পারবে। সেই ক্ষেত্রে ১৫ দিনের সময় দিয়ে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। লাইসেন্স বাতিল হলে বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসারত ব্যক্তিদের ওই প্রতিষ্ঠান নিজ খরচে অন্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করতে বাধ্য থাকবে। এ আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্য মেডিক্যাল প্রাকটিস এ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস এ্যান্ড ল্যাবরেটরিস রেগুলেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ বাতিল বলে গণ্য হবে।
×