ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস রুখতে কঠোর বিমসটেক, রোহিঙ্গা প্রশ্নে চুপ

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সন্ত্রাস রুখতে কঠোর বিমসটেক, রোহিঙ্গা প্রশ্নে চুপ

বিডিনিউজ \ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় জোরদার লড়াইয়ের প্রতিশ্রæতি থাকলেও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশা লাঘবের বিষয়ে কিছুই নেই বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণায়। শুক্রবার নেপালের কাঠমান্ডুতে ১৮ দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুদিনের বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন। এতে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশ অংশ নেয়। কাঠমান্ডু সম্মেলনের ঘোষণায় নেতারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদে উৎসাহ, সমর্থন ও অর্থায়নের জন্য জোটভুক্ত দেশগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার বিষয়ে একমত হয়েছেন। কিন্তু ঘোষণায় মিয়ানমারে রাখাইনে ‘জাতিগত নিধন অভিযানের’ মুখে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই। সদ্যসমাপ্ত চতুর্থ সম্মেলনে বঙ্গোপসাগরের উপক‚লবর্তী এসব দেশের নেতারা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগ সেতু হিসেবে বিমসটেকের বিশেষ অবস্থানকে গতিশীল করে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পর্যায় উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রতি ব্যক্ত করেন। সেইসঙ্গে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সংহত ও গভীরতর করার বিষয়ে পূর্ণ প্রতিশ্রæতিশীল থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে ঘোষণায়। পাকিস্তান সদস্য না থাকায় অনেকের কাছেই সার্কের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত ’৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই জোটকে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার উন্নয়নে কার্যকর মঞ্চ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। যৌথ ঘোষণায় তার উল্লেখ রয়েছে। বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন বিমসটেকের সদস্যের মধ্যে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডও রয়েছে। ভারত-পাকিস্তান সম্প্রতি উত্তেজনার ফলে ইসলামাবাদে ২০১৬ সালের সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর এই জোট বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ সৃষ্টি করছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জ্বালানি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং কৃষি বিষয়ক সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও জনস্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতাসহ ১৪ সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে উন্নয়নে এই জোটের প্রাধান্য রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সন্ত্রাস প্রতিরোধ প্রাধান্য পাওয়ায় সদস্য দেশগুলোর নিরাপত্তা প্রধানরা নিয়মিত বৈঠক করছেন। থাইল্যান্ডে আগামী বছর মার্চে বিমসটেকের পরবর্তী বৈঠক বসবে। বিশ্ব দরবারে বহুল আলোচিত চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম ইঙ্গিত দিলেও তা হয়নি। বিষয়টি বছরের পর বছর ঝুলে থাকলে তা এই অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা সঙ্কট তৈরি করবে বলে অনেকে মনে করলেও কাঠমান্ডু ঘোষণায় বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচির বদলে প্রেসিডেন্ট এই সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলন শেষে শুক্রবারই দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে নেতারা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় জোরদার প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করে লড়াইয়ের সমন্বিত পদ্ধতি খুঁজে বের করার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন। বিমসটেকভুক্ত দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানান হয় বিমসটেক ঘোষণায়। যে কোন ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডর নিন্দা জানিয়ে দায়ী যে-ই হোক না কেন এ বিষয়ে কাউকে কোনভাবে ছাড় না দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। নেতারা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্যবস্তু শুধু সন্ত্রাসী ব্যক্তি ও সংগঠন এবং চক্র নয়, বরং যেসব রাষ্ট্র কিংবা অরাষ্ট্রীয় সংগঠন তাদের মদদ দেয়, তাদের গুণকীর্তন করে, তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে জোটভুক্ত অঞ্চলে সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ, সন্ত্রাসীদের লোকবল বৃদ্ধি ও আন্তঃসীমান্ত চলাচল বন্ধ, উগ্রপন্থায় দীক্ষা দমন, সন্ত্রাসবাদের উদ্দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ স্বর্গ ভেঙ্গে দেয়ার সুপারিশ করেছেন তারা। আঞ্চলিক কারিগরি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরও সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিমসটেক সচিবালয়ের কার্যকারিতা বাড়ানোর প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে এই ঘোষণায়। বিমসটেকের বর্তমান চেয়ারম্যান নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি অলি শর্মা সমাপনী বক্তব্য দিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
×