ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ী মহানায়ক’ প্রদর্শনীর ক্যাটালগের মোড়ক উন্মোচন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩০ আগস্ট ২০১৮

‘বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ী মহানায়ক’ প্রদর্শনীর ক্যাটালগের মোড়ক উন্মোচন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস ২০১৮ উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরে চলছে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। এরমধ্যে রয়েছে সেমিনার, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি-নিদর্শন আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি। অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ী মহানায়ক’ শীর্ষক প্রদর্শনীর ক্যাটালগের মোড়ক উন্মোচন হয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বুধবার দুপুরে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মশিউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান ইলিয়াস। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য যার প্রতি বাঙালী চিরকৃতজ্ঞ তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তৃণমূল থেকে উঠে আসা বঙ্গবন্ধু, একটি জনগোষ্ঠীর আস্থাভাজন রাজনৈতিক মহীরুহ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। একটি জাতিকে তিনি স্বাধীনতার জন্যে ধাপে ধাপে প্রস্তুত করেছিলেন। এগুলো শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ব ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। বাংলা, বাঙালী, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু এই শব্দগুলো একটি ছাড়া অন্যটি অসম্পূর্ণ। সুতরাং বাংলাদেশকে পরিপূর্ণভাবে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানার বিকল্প নেই। জাদুঘরের মাসব্যাপী প্রদর্শনী ও সেমিনার আয়োজনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, জাদুঘরের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই মহান নেতার ব্যাপারে জানতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে তারা জানবে এদেশের সঠিক ইতিহাস। মোহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, বাঙালীর কৃষ্টি এবং ইতিহাস রক্ষায় সবার আগে যিনি আন্দোলনে নেমেছেন, তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৫ সালের ২৫ আগস্ট করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান নামের পরিবর্তে পূর্ব বাংলা নাম রাখার প্রস্তাব দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই দাবিকে অগ্রাহ্য করেই পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তান ডাকতে থাকে। অনেক বছর পরে, প্রহসনমূলক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাবার পরে বঙ্গবন্ধু এই বঞ্চনা থেকে মুক্তির জন্য প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ। স্বাগত ভাষণে জাদুঘরের সচিব মোহাম্মদ শওকত নবী বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি দেশ ও একটি জাতির ইতিহাস। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর শোকের মাস আগস্টে বঙ্গবন্ধুর স্মরণে মাসব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করে একটি দায়িত্ব পালন করল। সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান ইলিয়াস বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো এমন মহান নেতার জীবনকে কোন রং বা বর্ণমালায় একত্রীকরণ করা যায় না। কারণ মুজিব তার সৃষ্টির চেয়েও মহান। তিনি আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা। তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। তার স্মৃতি আমাদের ভবিষ্যতের পথের দিশা। গান, কবিতা আর কথামালায় নজরুল স্মরণ ॥ গান, কবিতা আর কথামালায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণ করা হয় জাতীয় প্রেসক্লাব হলরুমে বুধবার সকালে। কবির ৪২তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহ্মুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লায়ন চিত্ত রঞ্জন দাস। অনুষ্ঠানে নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন ও বক্তব্য রাখেন শিল্পী ফেরদৌস আরা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি। এ সময় নজরুলকে আমাদের ভীষণ প্রয়োজন। অসাম্প্রদায়িকতাকে সমুন্নত রাখতে তিনি যে গান ও কবিতা লিখেছেন, তা যুগ যুগ ধরে বাঙালীর বাঙালিত্বে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিলেন। আমি আশা করব নতুন প্রজন্ম কাজী নজরুল ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আমাদের এই সোনার বাংলাকে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টির নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য কবি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, আমার কাছে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়লে যেমন লাগে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী পড়লেও তেমন লাগে। নজরুল জন্মেছিলেন বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার প্রত্যন্ত অঞ্চলের চুরুলিয়া গ্রামে। তার ডাক নাম দুখু মিয়া। তার বিচিত্র জীবনে স্থানীয় এক মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবেও ছিলেন তিনি। রুটির দোকানেও কাজ করেছেন। অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেছেন। আঠারো বছর বয়সে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি রাজনীতি সচেতন। এক সময় তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। এ সময় তিনি রচনা করেন ‘বিদ্রোহী’ ও ‘ভাঙার গান’ কবিতা। এক সময় তিনি জেলে বন্দী হন। জেল বন্দী অবস্থায় তিনি লেখেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। কাজী নজরুলের লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস আরা নজরুলের গানের সঙ্গে সঙ্গে তার সৃষ্টিকর্ম নিয়ে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি নজরুলের ‘দাও শৌর্য, দাও ধৈর্য হে উদার নাথ’ গানটি পরিবেশন করেন। তিনি বলেন, নজরুল ছিলেন অতি মানব। ১৮৯৯ সালে ভারতে জন্ম, বাংলাদেশের এই ভূমিতে ঘুমিয়ে আছেন ১৯৭৬ সালে। বাঙালী সংস্কৃতিতে তিনি আমাদের আদর্শ। তিনি রক্তে উদ্দীপনামূলক লেখনী আমাদের দিয়ে গেছেন। তিনি শিশু, কিশোর, তরুণ ও দেশ জাগরণের কবি। নজরুলের ‘আমায় নহে গো ভালবাস শুধু ভালবাস মোর গান’ গানটি পরিবেশনার মধ্যদিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা। কাজী নজরুল ইসলামকে নিবেদিত কবিতা পাঠ করেন শাহ্নাজ পারভীন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক আবু জাফর সূর্য, মোল্লা জালাল, মানিক লাল ঘোষ, এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, সমীরণ রায়, মিজানুর রহমান পিটু, শেখ শাহ্ আলম, বজলুর রহমান, রোকনউদ্দিন পাঠান, সবল সেন, সুদিপ্ত হালদার প্রমুখ।
×