ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিক সুবর্ণাকে হত্যা করিয়েছে সাবেক শ্বশুর

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩০ আগস্ট ২০১৮

সাংবাদিক সুবর্ণাকে হত্যা করিয়েছে সাবেক শ্বশুর

কৃষ্ণ ভৌমিক, পাবনা থেকে ॥ সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত নারী সাংবাদিক সুবর্ণা নদীর ময়নাতদন্ত বুধবার পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। এরপর বাদ আছর এ্যাডওয়ার্ড কলেজ মাঠে জানাজা শেষে বালিয়া হালট কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাংবাদিক নদীর সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বাড়ির সামনে কুপিয়ে নারী সাংবাদিককে হত্যার ঘটনায় সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। বুধবার দুপুরে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা আব্দুল হামিদ সড়কে মানববন্ধনসহ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণার হুমকি দিয়েছে। এদিকে নিহত সাংবাদিক সুবর্ণা নদীর বোন চম্পা খাতুন দাবি করেছেন সুবর্ণার দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় পরাজয় জেনেই তার সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। চম্পা খাতুন আরও জানান, ২০১৬ সালের ৬ জুন শিল্পপতি আবুল হোসেনের ছেলে রাজিব হোসেনের সঙ্গে ৫ লাখ ১ টাকা দেনমোহরে নদীর বিয়ে হয়। ২০১৭ সালের ৩১ মে যৌতুক দাবিতে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে তালাকনামা পাঠানো হয়। ২০১৭ সালের ৪ জুন সুবর্ণা পাবনা সদর থানায় নারী ও শিশু- যৌতুক আইনে স্বামী, শাশুড়ি ও শ্বশুরকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। মামলা নং-৮। মামলা করার পর থেকেই শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী তাকে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দেয়। এর আগে ২০১৭ সালের ২২ জুলাই পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ কার্যালয়ে সুবর্ণা সংবাদ সম্মেলন করে স্বামী- শ্বশুরের হাত থেকে বাঁচতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুবর্ণা নদী শহরের রাধানগর মহল্লায় আলিয়া মাদ্রাসার গলিতে ভাড়া বাসায় মা ও একমাত্র শিশু কন্যা নিয়ে বসবাস করতেন। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে প্রেসক্লাব সড়কের রানা শপিং কমপ্লেক্স থেকে তার অফিসে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে বাসার সামনে আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা দুষ্কৃতকারীরা সুবর্ণা নদীর পেটে, মাথা ও ঘাড়ে অতর্কিত ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এ সময় তার চিৎকারে বাসা থেকে মা ও মেয়ে এবং আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুবর্ণা নদীকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে রাতেই পাবনা প্রেসক্লাব ও পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দসহ সাংবাদিকরা হাসপাতালে ছুটে যান। পাবনার অতিরিক্ত সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাসসহ জেলা পুলিশ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল হক জানান, নিহত সুবর্ণা নদীর মা মোছাঃ মর্জিনা খাতুন বাদী হয়ে বুধবার ৩ জন নামীয় আসামিসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে পাবনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারী সাংবাদিক সুবর্ণা নদীর সাবেক শ্বশুর শহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবুল হোসেনকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে এ হত্যাকা-ের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে না পারলেও কয়েকটি ইস্যুকে সামনে নিয়ে পুলিশ মাঠে নেমেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এদিকে বুধবার দুপুরে আব্দুল হামিদ সড়কে নারী সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদীকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন থেকে হত্যাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল মতীনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন, প্রবীণ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি. পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক শিবজিত নাগ, সাধারণ সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমন, পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী বাবলা, সংবাদপত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শহিদ, দৈনিক বিবৃতি সম্পাদক ইয়াছিন আলী মৃধা রতন, এনটিভির এবিএম ফজলুর রহমান, সিনসা সম্পাদক মাহবুব আলম, পাবনা টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএ আসাদ প্রমুখ। বক্তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানান এবং মানববন্ধন থেকে হত্যাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণার হুঁশিয়ারি জানান। আনন্দ টিভি ও একটি নিউজ পোর্টালের পাবনা প্রতিনিধি সুবর্ণা নদী আটঘরিয়া উপজেলা একদন্ত গ্রামের আয়ুব আলীর মেয়ে। তার পূর্বের পক্ষের আট বছরের এক মেয়ে রয়েছে। সাঁথিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিক্ষোভ ॥ এদিকে মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের মেয়ে কলেজছাত্রী মুক্তি খাতুনকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করার ঘটনার আসামিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সাঁথিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনসাধরণের উদ্যোগে সাঁথিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
×