ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন আইন শীঘ্রই মন্ত্রিসভায় উঠছে ॥ আইনমন্ত্রী

দুর্ঘটনায় অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান থাকছে

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২ আগস্ট ২০১৮

দুর্ঘটনায় অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান থাকছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দ্রুতবিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এ সময় সব সড়ক দুর্ঘটনার বিচার দ্রুত হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি মনে করেন, যারা দোষী কেবল তাদেরই শাস্তি হওয়া উচিত। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় নিহত দুই শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত কামনা ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান আইনমন্ত্রী। আইনমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন ধরে (বছর খানেক) সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অনেক রকমভাবে এই সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। তাই যেসব কারণে (রাস্তার কারণে, গাড়ির কারণে, মানুষের চলাচলের কারণে, চালকের কারণে ইত্যাদি) সড়ক দুর্ঘটনা হতে পারে, সেগুলোর ব্যাপারে আইনে পর্যাপ্ত বিধান রাখা হয়েছে কিনা কিংবা দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে রকম পর্যাপ্ত বিধান আইনের মধ্যে আছে কিনা এবং আইনে কোন ফাঁকফোকর আছে কিনা সেই সব পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দেখে সড়ক পরিবহন আইনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, সড়ক পরিবহন আইন ’১৮ হবে অত্যন্ত আধুনিক। তার কারণ হচ্ছে এই আইনে অনেক বিষয় আছে যেগুলো আগের কোন আইনে এড্রেস হয়নি। তিনি বলেন, বিদেশে চালকের ভুলের কারণে যেমন পয়েন্ট কাটা যায় নতুন সড়ক পরিবহন আইনেও তেননি বিধান রাখা হয়েছে। এজন্য বারো পয়েন্ট রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, কোন ড্রাইভার অপরাধ করলে তার পয়েন্ট কাটা যাবে। যদি কোন ড্রাইভারের বারো পয়েন্ট কাটা যায় তা হলে সে আর কোন দিন ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবে না। কত পয়েন্ট কাটলে কি শাস্তি হবে আইনে তা বলা আছে। তিনি বলেন, কেউ যাতে কম অপরাধে বেশি শাস্তি এবং বেশি অপরাধে কম শাস্তি না পায় সেগুলো সুনিশ্চিতভাবে আইনে সন্নিবেশ করা হয়েছে। ৩ পয়েন্ট কাটলে কী হবে- এ রকম বিধানও করে দেয়া হয়েছে। বিচারের তাৎক্ষণিকতা বা ত্বরিৎ বিচারের ব্যবস্থা এই আইনের মধ্যে করা হয়েছে। তিনি বলেন, আইনটা মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত হবে, প্রধানমন্ত্রী চান এটা ত্বরিৎ উপস্থাপিত হোক। সেইক্ষেত্রে আমার মনে হয় এই আইনটা যদি অনুমোদিত ও সংসদে পাস হয় তাহলে আমার ধারণা সব স্টেকহোল্ডার ন্যায়বিচার পাবেন। ‘এখন কেউ যদি মনে করেন যে মানুষ মেরে তারা কম শাস্তি নিয়ে পার পেয়ে যেতে পারবেন, এটা তো হয় না। আবার এটাও ঠিক একজনের ভুলের জন্য সবাইকে দায়ী করাও ঠিক না। যে ভুল করেছে তার বিচার করা উচিত, কিন্তু সম্প্রদায়কে দায়ী করা ঠিক হবে না।’ সেগুলো বিচার-বিবেচনা করে আমার মনে হয় এই আইনটা যথোযোগী এবং সবকিছু অত্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দেখে আইনটি পাঠিয়েছি, বলেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে সেটা পর্যাপ্ত। রমিজ উদ্দিনের কলেজের হতভাগ্য ছাত্রছাত্রী নিহত হয়েছে, তাদের বিচার যেমন ত্বরিৎ হওয়া উচিত, সেই রকম সব দুর্ঘটনার বিচার দ্রুত হওয়া উচিত। আর একটা জিনিস, যারা দোষী তাদেরই কেবল শাস্তি দেয়া উচিত। পুরো সম্প্রদায়কে ভিক্টিমাইজ করা ঠিক হবে না, যে এটা করেছে তাকে নিশ্চয়ই শাস্তি দেয়া হবে। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের কথা দিতে পারি, যে মুহূর্তে তদন্ত শেষে এই মামলা আদালতে গড়াবে আমি প্রসিকিউশনকে বলে এর ত্বরিৎ বিচারের ব্যবস্থা করব। যারা অপরাধ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। আইনে এ-টু-জেড সব বিষয় যুক্ত আছে বলে জানান মন্ত্রী। আইন হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে আইনমন্ত্রীর শোক ॥ গত রবিবার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বুধবার এক শোকবার্তায় আইনমন্ত্রী নিহত দুই শিক্ষার্থীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। আইনমন্ত্রী বলেন, শুধু এটুকু বলতে চাই ১৯৯১ সালে এ রকম একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আমি আমার স্ত্রীকে হারিয়েছি। তাই একটা সড়ক দুর্ঘটনায় বা রেল দুর্ঘটনায় কেউ যদি নিহত হয় তার পরিবারের কি অবস্থা সে সমন্ধে আমার সম্যক অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমি বলছি। আমি অত্যন্ত ব্যতিত এবং এ রকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের যা যা উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার সেটা করা হবে।
×