ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানি সামনে রেখে পালন করা হচ্ছে দুই লাখ গরু

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩০ জুলাই ২০১৮

কোরবানি সামনে রেখে পালন করা হচ্ছে দুই লাখ গরু

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ কোরবানি ঈদের আগের এই সময়টায় বগুড়ায় এখনই বলাবলি হচ্ছে ‘বিরাট গরু ছাগলের হাট শুরু হয়ে গেল’। এ কথা শুনে কেউ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ছেন ‘ভাই ওই হাটে কি বিরাট বিরাট গরু ছাগল আর রাম ছাগল পাওয়া যাবে!’ কোরবানি ঈদকে ঘিরে অনেক ধরনের কথা বলা হয়। আর দিনা কয়েক পর এমন কথাও শোনা যাবে ‘ভাই আপনি গরু না ছাগল’! অন্য সময় স্বজন প্রতিবেশী পরিচিতজনকে এমন কথা বললে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা আর বলতে হয়। কোরবানি ঈদের আগের সময়টায় কে কি পশু কোরবানি দিচ্ছেন তা জানার এমন কৌতূহলী প্রশ্ন শুনলেও বেজার হতে হয় না। বগুড়ায় এমন সরব আলোচনা এখনই শুরু হয়েছে। অন্যদিকে খামারিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে গরু মোটাতাজাকরণের পর কতটা লাভ টেকে। কোরবানির হাটের আয়োজক ও ব্যাপারীরাও এখন মাঠে। তাদের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। গত ক’বছরে বগুড়ার প্রতিটি উপজেলায় গরু মোটাতাজাকরণের খামার গড়ে উঠেছে। বগুড়া প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের এক হিসাব বলছে, এই সংখ্যা ১৭ হাজার ৫শ’৮০টি। প্রতি খামারে গড়ে ১০টি করে মোট প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার গরু পালন করা হচ্ছে। কোথাও দেশীয় গরুর পাশাপাশি বিদেশী গরু আছে। বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি খামার আছে সদর উপজেলায় ২ হাজার ৩শ’টি। যেখানে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার ৫শ’টি। সাবগ্রামের একটি খামারে দেশী গরুর পাশাপাশি বিদেশী ব্রাহাম, শিবাবি, নেপালী ও দেশাল জাতের গরু পালন করা হচ্ছে। গরু পালনকারী খামারগুলোতে এবার যে বিষয়টি প্রশংসিত হয়েছে তা হলো বেশিরভাগ গরুকে কোন স্টেরয়েড, হরমোন জাতীয় ওষুধ ও ইনজেকশন করা হচ্ছে না। তাদের কথা, এ ধরনের বটিকা খাওয়ানোর পর গরু কৃত্রিমভাবে দ্রুত মোটাতাজা হয়ে ওঠে ঠিকই তবে গরুর কিডনি কলিজায় পচন ধরে। দ্রুত হাটে না পৌঁছালে মারাও যায়। গেল বছরগুলোতে এ ধরনের গরু মারা যাওয়ায় অনেক খামারি ও ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গরু খামারি মোরশেদুল বললেন, তিনি গরুকে সব সময়ই স্বাভাবিক খাবার যেমন নেপিয়ার ঘাস, খড়, ভূষি, খৈল, ভাত মাটির চারির ভিতরে গুলিয়ে খাওয়ান। এ ভাবেই গরু মোটাতাজা হয়েছে। সময়মতো পশু চিকিৎসকের সহায়তা নেন। একজন পশুপালন কর্মকর্তা বললেন, দেশে অনেক উন্নতমানের ব্রিড আছে। যেমন পাবনা ব্রিড, অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান ব্রিড, ভারতের হরিয়ানা ব্রিড ও স্থানীয় ব্রিডিং পদ্ধতির কিছু ব্রিড যা লোকাল ক্রস নামে পরিচিত। এমন ব্রিডে গরু প্রকৃতি থেকেই মোটাতাজা হয়। এসব গরুকে স্বাভাবিক খাবার দিয়ে শুধু যতœ নিলেই গরু ভাল থাকে। তিনি জানান, খামারগুলোতে ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও হরমোন জাতীয় ওষুধ বন্ধে শীঘ্রই সারাদেশে অভিযান চালানো হবে। গাবতলী এলাকার খামারি আশরাফুল বললেন, তিনি প্রতিটি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দরে ১০টি গরু কিনে পালন করেছেন। আশা করছেন দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে পারবেন। তবে এই বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করলেন সোনাতলার হরিখালি এলাকার গৃহস্থ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বললেন, গরুর ব্যাপারীরা গ্রামে গিয়ে কম দামে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। খামারিদের কয়েকজন বললেন গরুর দাম না পেলে তারা বিক্রি করবেন না। তারা কোরবানি ঈদের দিকে লক্ষ্য রেখেই গরু পালন করেন। বগুড়া সদরের খামারি রফিকুল ইসলাম গত দশ বছর ধরে গরু পালন করছেন। গরু পালন করেই তিনি বাড়ি ঘর পাকা করেছেন। জমিজিরাত করেছেন। গত কোরবানি ঈদের সময়ে দশটি গরু বিক্রি করে তার লাভ হয়েছিল অন্তত আড়াই লাখ টাকা। এবারও দশটি গরু তিনি বিক্রি করবেন। মাঠ পর্যায়ের চিত্র বলে দিচ্ছে এবারের কোরবানির ঈদে গরুর দামে তেমন হেরফের হবে না।
×