ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর ৫০ থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করে তিন শ’ কারবারি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১০ জুলাই ২০১৮

রাজধানীর ৫০ থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করে তিন শ’ কারবারি

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর ৫০ থানা এলাকায় মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে তিন শতাধিক মাদক কারবারি। এদের মধ্যে শীর্ষ মাদক কারবারি শতাধিক, যাদেরকে বলা হয় মাদকের ডিলার। রাজধানীর প্রায় অর্ধশত স্পটে বা আখড়া কেন্দ্রিকস্থানে মাদক সরবরাহ করে তারা। পুলিশ, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, গোয়েন্দা সংস্থার তালিকাভুক্ত তারা। তাদের বেশিরভাগই একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে। রাজধানীতে মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত এমন শীর্ষ ব্যক্তিরাও রয়ে গেছে তালিকার বাইরে, যাদের বলা হচ্ছে ‘হোয়াইট কলার মাদক কারবারি’। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় অনেক শীর্ষ মাদক কারবারি আছে যারা ভাসমান। এ কারণে তাদেরকে তালিকাভুক্ত বা শনাক্ত করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর এ কারণেই দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও মাদকের কারবার অব্যাহত আছে। কেবলমাত্র মাদকের বড় চালানসহ কেউ ধরা পড়লে তখন বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। কিন্তু ছোটখাটো মাদক কারবারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে না। বড় মাদক কারবারিরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বাইরের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে যারা মাদকের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক দলের নেতা, কাউন্সিলর ও পুলিশ কর্মকর্তার নাম রয়েছে তারা সতর্ক হয়ে গেছে। সূত্র মতে, দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেই মাদকের কারবার অব্যাহত থাকার বিষয়টিতে নজরদারি করে প্রয়োজনীয় অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখা হচ্ছে। তবে বড় মাদক কারবারিরা সতর্ক হয়ে গেলেও মেগাসিটি অভিহিত রাজধানীর প্রায় পৌনে দুই কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত হওয়ায় খুচরা মাদক কারবারিদের চিহ্নিত করা কিছুটা কঠিন, যা সময় সাপেক্ষ বিষয়। তবে এলাকাভিত্তিক খুচরা মাদক কারবারিদের বিষয়েও খোঁজখবর নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে মাদক কারবারিদের গ্রেফতারে ব্যাপক অভিযান অব্যাহত আছে। রাজধানীর মাদকের বড় স্পট মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে একাধিক বার অভিযান পরিচালনা করে মাদক কারবারিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পেই মাদক কারবারির সংখ্যা রয়েছে প্রায় অর্ধশত যাদের বিরুদ্ধে মাদকবিরোধী অভিযানসহ গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প ছাড়াও রাজধানীর উত্তরা, কাওলা, খিলগাঁও, বনশ্রী, বনানীর কড়াইল বস্তি, মেরুল বাড্ডা, বাড্ডা, ভাটারা, খিলক্ষেত, তুরাগ, পল্লবী, বিহারী ক্যাম্প, রূপনগরের চলন্তিকা ঝিলপাড় বস্তি, সবুজবাগ, বাসাবো, নন্দীপাড়া, কলাবাগান, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, ধানম-ি, লালবাগ, চাঁনখারপুল, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি এলাকার স্পটগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় কারা কীভাবে মাদক কারবার চালাচ্ছে তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর মুগদা থানা এলাকার টিটিপাড়ার রেললাইন-সংলগ্ন ‘মেথরপট্টি’তে ফেনসিডিল, গাঁজা ও ইয়াবার সঙ্গে চোলাই মদও বিক্রি হয়। মতিঝিলের আরামবাগে ও আশপাশে ইয়াবা ও ফেনসিডিল বিক্রি করে মাদক কারবারিরা। যাত্রাবাড়ীর ওয়াসা কলোনিতে বড় বিক্রেতারা মাদক সরবরাহ করছে। রাজধানী ঢাকার ৫০ থানা এলাকায় পুলিশের সোর্স পরিচয়ে মাদক কারবার চালানো হচ্ছে, যাতে অনেকের নাম উঠে এসেছে। ডিবি পুলিশের গুলশান জোনের সোর্স পরিচয়ে মাদক কারবার করছে এক ব্যক্তি। ডিবির দক্ষিণ বিভাগে এক এসআই এর নাম ভাঙ্গিয়ে কারবার করছে কয়েকজন। বাড্ডা থানার এএসআই এর নাম ভাঙ্গিয়ে কারবার করছে এক সোর্স। গুলশান থানার এক এএসআই নাম ভাঙ্গিয়ে মাদক কারবার হচ্ছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে মাদক কারবারে নতুন রুট খোলা হচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় নেই। এমনকি মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অভিনব পদ্ধতি ও নতুন প্রযুক্তি। মাদক কারবারিরা নানা উপায়ে মাদক কারবার চালানোর চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে। তবে এটাও বেশি দিন নয়, খুব শীঘ্রই মাদক কারবার জিরোর পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
×