ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষাকে পূর্ণতা দিয়েছে শাপলা

বিলে ঝিলে ফুটে থাকা ফুল- অপরূপ বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৯ জুলাই ২০১৮

বিলে ঝিলে ফুটে থাকা ফুল- অপরূপ বাংলাদেশ

মোরসালিন মিজান ॥ চারপাশে কত না ফুল ফুটে আছে! জাতপাত গুনে শেষ করা যাবে না। বহুবিধ রং-রূপ-ঘ্রাণ। দারুণ মুগ্ধ করে রাখছে। তবে বাংলাদেশ চেনা যায় শাপলাতেই। ফুলটি সবদিক থেকে আলাদা। বিপুল জলরাশির উপরিভাগে সৌন্দর্যের সবটুকু নিয়ে দৃশ্যমান হয়। অজস্র ফুল। ফুলের ভাসমান বাগান। ঢেউয়ের সঙ্গে দোল খায়। যে দেখেনি এ দৃশ্য, সে দুর্ভাগা! বাংলাদেশ দেখার তার ঢের বাকি, ধরে নিতে হবে। তবে যারা দেখতে চান, এখন উপযুক্ত সময়। ভরা বর্ষায় বাংলাদেশের বহু অঞ্চল জল থৈ থৈ করছে। এ জলভাগের অনিন্দ্য সুন্দর ফুলটিই শাপলা। আর শাপলা মানেই যেন বাংলাদেশ। জনপ্রিয় একটি দেশাত্মবোধক গানের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ফজল-এ-খোদা সেখানে শাপলার কথা লিখেছিলেন। লেখাটিÑ যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে/যে দেশেতে কলমি কমল কনক হয়ে হাসে/সে আমাদের জন্মভূমি মাতৃভূমি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ...। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দেয় শাপলা। বাংলাদেশের এটি জাতীয় ফুল। টাকার গায়ে শাপলার জলছাপ। পয়সাও শাপলা। গুরুত্বপূর্ণ দলিল দস্তাবেজেও এর ছবি ব্যবহৃত হয়। শাপলা জলজ উদ্ভিদ। নদী মাতৃক বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই গাছ হয়। এ প্রসঙ্গে সিলেট অঞ্চলের আলোচনা খুব প্রাসঙ্গিক। বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বহু হাওড়-বাঁওড়। খাল বিল নদী জলাশয় আছে। বর্ষায় অনেক শুকনো এলাকাও প্লাবিত হয়। ফসলের জমি পর্যন্ত তলিয়ে যায়। তবে ধান কাটার পর পাহাড়ী ঢলে ডুবে যাওয়া জমিতে শাপলা ফুটে থাকে। লিখতে লিখতেই মনে পড়ছে, শৈশবে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে দেখা হয়েছিল অগণিত শাপলা ফুটে থাকার অপরূপ দৃশ্য। কাদাজল মাখা আল-পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই পথ ফুরিয়ে যায়। সামনে শান্ত জলের নদী। জল তেমন দেখা যায় না। যতদূর চোখ যায় শাপলা আর শাপলা শুধু। কোনটি পুরো ফুটেছে। কোনটি ফোটার অপেক্ষায়। কচিকাঁচা চোখে দেখা অপরূপ দৃশ্য আজও মনে দাগ কেটে আছে। ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোতেও শাপলা ফুল দেখা যায়। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে প্রচুর শাপলা হয়। রাস্তার সমান্তরালে ইছামতী নদী। নদীর তীর ধরে গাড়ি করে যেতে যেতে দেখা হয়েছিল ফুটে থাকা শাপলার ফুল। বর্তমানে ইরি আমন ধানের ক্ষেত, পাটের ক্ষেত জলমগ্ন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে অজস্র শাপলা ফুটে আছে। খাল বিল জলাশয় থেকে এসব শাপলা ব্যক্তি উদ্যোগে সংগ্রহ করা হয়। পরে চলে আসে রসুনিয়া ইমামগঞ্জ ও তালতলার পাইকারি ক্রয়কেন্দ্রে। সেখান থেকে চলে আসে ঢাকায়। জানা যায়, শাপলা পদ্মগোত্রের। দিনের বেলায় ফুল ফোটে। জলে নিমজ্জিত নরম দ-ের উপরিভাগে চমৎকার দেখায়। ১৩ থেকে ১৫টি পাপড়ি। ৪ থেকে ৫টি বৃতি। পাপড়ির মাঝখানে হলুদ রঙের পরাগদানি থাকে। মূল রংটি সাদা হলেও, লাল ও নীল রঙের ফুলও কম বেশি দেখা যায়। সারা বিশ্বে ৩৫টি প্রজাতি। শাপলার পাতাও অদ্ভুত সুন্দর। বড় গোলাকার পাতা পানির ওপর ভেসে থাকে। চারদিকে আবার পিঠার মতো নকশা করা। পাতার সাইজ ২০ থেকে ২৩ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ব্যাপ্তি ০.৯ থেকে ১.৮ মিটার। বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হলেও অন্য অনেক দেশেই অস্থিত্ব আছে ফুলটির। এই যেমনÑ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইয়েমেন, তাইওয়ান, ফিলিপিন্স, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ার পুকুর ও হ্রদে হয় সাদা শাপলা। পাপুয়া নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু এলাকায়ও আছে বলে জানা যায়। পুরাণেও আছে শাপলার কথা। তবে বাংলাদেশের বিলে ঝিলে পুকুরে যে শাপলা, তার সঙ্গে বাঙালীর শৈশব স্মৃতি, আবেগ ভালবাসা মিশে আছে। এই আবেগ ভালবাসার ভাগ আর কোন ফুলের পাওয়া হবে না।
×