ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের জন্য স্পেশাল প্রোগ্রাম করছি ॥ তানভীর তারেক

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১১ জুন ২০১৮

 ঈদের জন্য স্পেশাল প্রোগ্রাম করছি ॥ তানভীর তারেক

তানভীর তারেক। সঙ্গীত সাধনা এবং উপস্থাপনার পাশাপাশি ইউটিউব কন্টেন্ট তৈরি এবং লেখালেখি করেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদেও বেশ কিছু কাজ করছেন। ঈদে গান, উপস্থাপনাসহ একাধিক সৃজনশীল কাজের ব্যস্ততা নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। এবারের ঈদের কাজ নিয়ে বলুন? তানভীর তারেক : ঈদে বিশেষত আমি খুব স্পেশালি কাজ করি না। কারণ আমি মনে করি এই সময়ে দর্শক শ্রোতাদের সেভাবে মনোযোগ পাওয়া যায় না। টিভি পর্দায় এটিএন নিউজের জন্য তিনদিনের বিশেষ অনুষ্ঠান করছি। এটা ঈদের দিন ও ঈদের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন প্রচার হবে। এছাড়া জাগো এফ এম আমি ‘রাতাড্ডা উইথ তানভীর’ নামের যে অনুষ্ঠানটি নিয়মিত করি সেটির ঈদ স্পেশাল করছি। তবে আমি সবচেয়ে বেশি সময় দিচ্ছি গান আর ইউটিউব কন্টেন্ট নিয়ে। এখন টিভিতে অনুষ্ঠান নির্মাণ করলেও তা অধিকাংশ দর্শকেরা ইউটিউবের মাধ্যমেই দেখছে। আমার নিজেরও অনেক শো খুব আলোচনায় আসে। আমারই কোন টক শো। পরে যখন শুনি যে তারা জানেই না কোন চ্যানেলে এটা প্রচার হয়েছে। তখন অবাক হই। কারণ তারা দেখেছে ইউটিউব থেকে। সেই থেকে পরিকল্পনা করলাম যে নিজের ইউটিউব চ্যানেলটিকে দাঁড় করাব। গত ৫ পাঁচ মাস ধরে আমি এই ইউটিউব চ্যানেলের কাজেই ডুবে আছি। আমার নিজের নামসহ মোট ৩টি চ্যানেলে বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট তৈরির কাজ করছি। কী ধরনের কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করছেন? তানভীর তারেক : আমি আমার নিজস্ব ঘরানার কাজগুলো ইউটিউব দর্শকদের জন্য অনুষ্ঠান নির্মাণ করছি। আমার ইউটিউব চ্যানেলের কয়েকটি অনুষ্ঠান জনপ্রিয় ঘয়েছে। যেমন ‘হকার’ অনুষ্ঠানটি আমি প্রতিদিন ইউটিউবে লাইভ করি। অনুষ্ঠানটি দর্শকগ্রহণ করেছে। এছাড়া ‘র‌্যান্ডম টক’ অনুষ্ঠানটিও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখানে আমার দর্শকদের সঙ্গে আমি সরাসরি কথা বলতে পারি। পত্রিকা এবং টিভি মিডিয়ায় আপনার কাজের অভিজ্ঞতাটা কেমন? তানভীর তারেক : মোটেই ভাল ছিল না। যদিও ফ্রি ল্যান্সার হিসেবে বিভিন্ন চ্যানেলে অনুষ্ঠান গ্রন্থনা ও উপস্থাপনার কাজ দীর্ঘদিন ধরে করছি। কিন্তু চ্যানেল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বের চেয়ারটা সত্যিই খুব নাজুক। কারণ এখানে বিপণন বিভাগকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী এজেন্সির দাসত্ব মেনে নিতে হয়। এছাড়া তাদের কোন উপায়ও থাকে না। এর ভেতরে আমাদের স্বভাবজাত দুর্নীতিতো থাকেই। সঙ্গে রয়েছে টি আর পি নামের অদ্ভুত এক অবৈজ্ঞানিক খেলা। টিভি স্টেশনে দর্শকেরা সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার মনে হলো। এটি সব চ্যানেলের ক্ষেত্রে এটি কম বেশি সমান ও সত্য। কোনটাই কম কোনটাই বেশি এখানে সর্বাগ্রে গ্রহণযোগ্য বিজ্ঞাপনী সংস্থার ইচ্ছে অনিচ্ছা। টিভি মালিকের নিজস্ব পছন্দ এবং টিআরপি সংস্থার দেয়া তালিকা। এই তিন প্রক্রিয়ার ভেতরে কখনও দর্শকদের আসল চাহিদার কোন গুরুত্ব নেই। কোন চ্যানেলে আলাদা গবেষণা সেল নেই। দর্শক জরিপের কোন ব্যবস্থা নেই। গৎবাধা একই ফর্মেটের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে সব জায়গায়। আর বাজারের নাজুক অবস্থা। চ্যানেলের সার্বিক খরচ সামলে অনেকেই বড় বাজেটের রিস্কও নিতে পারছে না। এসব কারণেই দর্শকেরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এই বিপরীত যুদ্ধের সঙ্গে নিজেকে কোনভাবে খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না। গান ও লেখালেখি প্রসঙ্গে বলুন তানভীর তারেক : এক সময় বিভিন্ন কোম্পানির ব্যানারে একাধিক এ্যালবাম প্রকাশ করেছি। আমার কথা ও সুরে প্রকাশিত এ্যালবাম সংখ্যা ২৪টি। দেশের শীর্ষ তারকা কণ্ঠশিল্পীরা এতে কাজ করেছেন। কিন্তু নিজস্ব মেধাস্বত্ব বা নিজের মতো করে গান করে দেখেছি, সেগুলোর সঠিক প্রচার নেই। এছাড়া কপিরাইটের এই সময়ে আমি অন্য ব্যানারে কাজ করেও মানসিক শান্তি পাই না। একটি ছোট লেবেল থেকেও নিজের কথা সুর একটি ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করলে সেটি অন্তত স্বাধীনভাবে কাজ করা যাবে। অর্থের যোগানের চেয়েও একটা মানসিক শান্তির চাহিদা আমার বেশি থাকে। এ কারণেই নিজের কথা-সুরের নতুন কম্পোজিশনগুলো আমি আমার চ্যানেলে পোস্ট দিচ্ছি। এর বাইরে কিছু চলচ্চিত্রের গানের কম্পোজ করছি। নিজের কাজের জায়গা কমফোর্ট না হলে কখনওই কাজ করিনি। কপিরাইট ইস্যুতে একটা বিভেদ লক্ষ করা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী? তানভীর তারেক : আমি মনে করি, এই কপিরাইট ইস্যুতে অনেকদিন থেকেই এ নিয়েই নানামুখী বাহাস চলছে। কখনও শিল্পী প্রকাশকের বিরুদ্ধে মামলা করছে। কখনও একজন প্রকাশক অন্য প্রকাশককে। কিন্তু আমি মনে করি আমরা গানের মানুষেরা সাংগঠনিক হতে পারিনি। হয়তো অনেক সংগঠন ঠিকই আছে। কিন্তু কেউ কারও প্রতি আস্থা বা শ্রদ্ধার জায়গাটা রাখি না। এ কারণেই আজ এই সঙ্কট। আমাদের কপিরাইট ইস্যুতে মূল সমস্যা, বিভিন্ন টেলকো কোম্পানির সঙ্গে। কিন্তু তাদের আমরা কতটাই বা কন্ট্রোল করতে পারছি। শো নিজেরা নিজেদের ভেতরে মিটিয়ে সম্মিলিতভাবে মূল সঙ্কটের জায়গাটায় সমাধান করা উচিত। আর নিজের লেখালেখি? তানভীর তারেক : লেখালেখি আমার একেবারেই প্রতিদিনের কাজ। খাওয়া পরার মতো। সেটা পত্রিকায় ফিচার লিখি বা গল্প উপন্যাস। জীবনটা খুব ছোট। আর আমরা সবাই কিন্তু এই যাপিত জীবনের আনন্দ আহরণেই এত উচ্ছ্বাস করি। খুব বেশি প্রচলিত ধারার সুপারস্টার তকমা লাগানোর দৌড় আমার ভেতরে কাজ করেনি। বা সেটা পাওয়ার অযোগ্যতাও নিশ্চয়ই রয়েছে। কিন্তু আমার মতো কাজ করার পর যদি কেউ ভাল বলেছে, আমার প্রশংসা করেছে। আমার সেদিনের সারাদিনটা কি যে ভাল কাটে বলে বোঝাতে পারব না। আমি প্রতিদিন এ রকম আনন্দ নেয়ার জন্য বাঁচি, লিখি, গান বানাই, টিভি অনুষ্ঠান করি, রেডিও জকি হয়ে কথা বলি বা ইউটিউবে কন্টেন্ট তৈরি করি। পুরোটাই আমার আনন্দের স্বার্থে। মাস কয়েক আগে এটি প্রতিবেদন লেখার কারণে আমারই কিছু বন্ধু, ছোট ভাই ব্রাদার আমার চাকরি খেতে ছুটে এল। খুব কষ্ট পেলাম, কষ্ট পাওয়ার চেয়ে বেশি অবাক হলাম। এই যে হিংস্রতা, এই সমালোচনা রিসিভ করতে না পারা, তাতে তার নিজেরই ক্ষতি হয়। তাই মনে প্রাণে চাই এসব দূর হোক। আমার সমালোচনার জবাব তো তারা আমাকে তাদের সৃজনশীলতা দিয়েও দিতে পারত। তাই এসব খুব পীড়া দেয়। এক ধরনের বিভ্রান্তিতে ভুগছি আমরা এই ভার্চ্যুম্যানিয়াকে। গণমাধ্যম বা শোবিজও এর বাইরে নয়। দেখুন, আমার আজকের কথাগুলো নিয়েও অনেকের মতবিরোধ থাকতেই পারে। কিš' সেটির জবাব স"জনশীল প্রক্রিয়ায় হোক, তা না করে আমরা ক্রমশ হিংস্র হয়ে পড়ছি। সমাজ থেকে এই রেষারেষি দূর হোক। এটিই একমাত্র কামনা। -সাজু আহমেদ
×