ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট পরিচালকের জবানবন্দী

টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩০ মে ২০১৮

টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে টাঙ্গাইলের মোঃ মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রথম সাক্ষী কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গলের পরিচালক প্রতিভা মুৎসুদী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, আসামি মাহবুবুর রহমানসহ কয়েকজন রাজাকার পাকিস্তানী আর্মি নিয়ে আরপি সাহার নারায়ণগঞ্জের খানপুরের বাসায় আক্রমণ চালিয়ে তাকে ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা ওরফে রবি তার ঘনিষ্ট সহচর গৌরগোপাল সাহা তার কর্মচারী মতলব মিয়া ও একজন দারোয়ানকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এর পর তাদের আর খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া মির্জাপুর গ্রামে আসামি ও পাকিস্তানী আর্মিরা ৩২/৩৩ জন হিন্দুকে গুলি করে হত্যা করে। সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের জেরার জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ জুন। অন্যদিকে পিরোজুরের ভা-ারিয়ার মোঃ ফয়জুল হক হাওলাদারসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখানোর নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। রাজশাহীর মোঃ আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু ওরফে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগের ওপর শুনানির জন্য ১৭ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছে। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত, সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি, প্রসিকিউটর রিজিয়া সুলতানা বেগম চমন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে টাঙ্গাইলের মোঃ মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গলের পরিচালক প্রতিভা মুৎসুদী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, আমার নাম প্রতিভা মুৎসুদ্দি। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৮৩/৮৪ বছর। আমার ঠিকানাÑ গ্রাম পাহাড়তলী, পোঃÑ মহামুনী, থানা- রাউজান, জেলা- চট্রগ্রাম। আমি বিয়ে করিনি। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট আমার সন্তানতুল্য এবং এই ট্রাস্টই আমার সব কিছু। আামি ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করি। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উইমেন্স হলের (বর্তমান রোকেয়া হলের) প্রথম নির্বাচিত ভিপি ছিলাম। আমি ২০০২ সালে শিক্ষাবিদ হিসেবে একুশে পদক পেয়েছি। সাক্ষ্য প্রদানে তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মওলানা আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে মওলানা (বর্তমানে মৃত) মির্জাপুর থানা শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান হয়। তার দুই ছেলে আব্দুল মান্নান (বর্তমানে মৃত) ও মাহবুবুর রহমান ওরফে মাহাবুব ছিল কুখ্যাত রাজাকার। সব সময় তারা হাতে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করত। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে আরপি সাহার বয়স ছিল আনুমানিক ৭৪/৭৫ বছর। এবং শ্বাসকষ্টে ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জে নিজ বাসার না থেকে মির্জাপুরের গ্রামের বাড়িতে এসে থাকতেন। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে গবর্নর টিক্কা খান আরপি সাহাকে দেখা করতে বললে তিনি তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা অভি এবং কুমুদিনী হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ হাফিজুর রহমানকে নিয়ে ২৯ এপ্রিল গবর্নর হাউসে যান। টিক্কা খান নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের ফিরে যেতে বলেন। গবর্নর হাউসের গেটে আসার পরপরই সেখানে দাঁড়ানো পাকিস্তানী আর্মির গাড়ি থেকে আর্মিরা নেমে জেঠুমনি ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গাড়িতে তুলে নেয়। মে মাসের ৫ তারিখে পাকিস্তানী আর্মিরা আরপি সাহা ও তার ছেলেকে নারায়ণগঞ্জের বাসায় রেখে যায়। ৯ মে চন্দ্রমোহন সাহা আমাদের জানান, আসামি মাহবুবুর রহমানসহ কয়েকজন রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মি নিয়ে আরপি সাহার নারায়ণগঞ্জের খানপুরের বাসায় আক্রমণ চালিয়ে তাকে ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা ওরফে রবি তার ঘনিষ্ঠ সহচর গৌরগোপাল সাহ তার কর্মচারী মতলব মিয়া ও একজন দায়োরানকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এর পর তাদের আর খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া মির্জাপুর গ্রামে আসামি ও পাকিস্তানী আর্মিরা প্রায় ৩২/৩৩ জন হিন্দুকে গুলি করে হত্যা করে। পিরোজপুরের ভা-ারিয়ার পাঁচ জনকে ট্রাইব্যুনালে শ্যোন এরেস্ট ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা ও লুটতরাজসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পিরোজপুরের ভা-ারিয়ার ফজলুল হক হাওলাদারসহ (৭৫) পাঁচ জনকে মামলায় (শ্যোন এ্যারেস্ট) গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তবে, এই মামলার বিষয়ে পর্বতী শুনানির জন্য কোন দিন তারিখ ঠিক করেনি আদালত। ফজলুল হক হাওলাদার ছাড়া মামলার অপর আসামি হলেন- ফজলুল হক হাওলাদার (৭৫), আবদুল মান্নান হাওলাদার (৭৪), আজহার আলী হাওলাদার ওরফে আজু মুন্সি (৮৮), আশরাফ আলী হাওলাদার (৬৭) ও চরখালী গ্রামের মহারাজ হাওলাদার ওরফে হাতকাটা মহারাজ (৬৮)। প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গণহত্যা ও লুটপাটের দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। উপজেলার ধাওয়া ইউনিয়নের হেতালিয়া ও নদমূলা ইউনিয়নের চরখালী গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর ওই দিনই তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
×