ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘রোহিঙ্গা শিশুরা যুদ্ধের বদলে প্রকৃতির ছবি আঁকছে’

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ২৫ মে ২০১৮

‘রোহিঙ্গা শিশুরা যুদ্ধের বদলে প্রকৃতির ছবি আঁকছে’

মনোয়ার হোসেন ॥ আত্মপ্রচার কিংবা নতুন কোন ছবি নয়, ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত প্রিয়াংকা কথা বললেন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিয়ে। বললেন মিয়ানমারের অমানবিকতার শিকার হওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে। বিশ্বসুন্দরী এই বলিউড অভিনেত্রী চার দিন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বৃহস্পতিবার সেই অভিজ্ঞতার কথা বললেন ঢাকার সাংবাদিকদের। শিশুদের প্রতি বিশ্ববাসীর দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে সাবেক এই বিশ্ব সুন্দরী বলেন, প্রতিটি শিশুর বেড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি শিশুর সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে হবে। তারা কোথা থেকে এসেছে, কে তাদের পিতা-মাতা, সেটা কোন বিষয় নয়। ইতিহাস, মানচিত্রের বাইরে এদের পরিচয় হচ্ছে এরা শিশু। এই শিশুরাই আগামী বিশ্বের ভবিষ্যত। তাই বিশ্ববাসীকে বলতে চাই, এই শিশুদের জন্য হৃদয়কে উন্মুক্ত করতে হবে। চার দিনের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান সহিংসতার কথা উল্লেখ করে প্রিয়াংকা চোপড়া বলেন, আমি শুনেছি নৃশংস, হিং¯্র ও নিষ্ঠুরতার হৃদয়বিদারক কাহিনী, যা পরিবারগুলোকে তাদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছে। আমি দেখেছি অসহনীয় পরিস্থিতি, যেখানে লাখ লাখ শিশু এখন বসবাস করছে। শিশুদের সহায়তা ও সুরক্ষা প্রদানে ইউনিসেফ ও তার অংশীদারের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব তার সবটুকুই তারা করেছে। কিন্তু আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে। এই শরণার্থীদের জন্য আরও বেশি তহবিল গড়ে তুলতে হবে। তাহলে তাদের জীবনটা আরেকটু সহজ হবে। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া কক্সবাজারের শামলাপুর, লেদা, উনচিপ্রাং, জামতলি, বালুখালি ও কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ও আশ্রয়কেন্দ্র এবং ইউনিসেফের সহায়তাপ্রাপ্ত শিক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। লন্ডনে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রিয়াঙ্কা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হাজির হয়েছিলেন। সেখানে তার হৃদয় ছুঁয়েছে শিশুদের অঙ্কনের খাতা। তিনি বলছিলেন সাত বছরের মনসুর আলীর কথা। ছয় মাসের শিশুটির ড্রয়িং খাতায় বোমা বিস্ফোরণের বদলে ঠাঁই পেয়েছে সূর্যোদয়। রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বললেন, গণমাধ্যমে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের খবর জেনেছিলেন তিনি। কিন্তু এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করেছেন এই সফরে এসে। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বললেন, রোহিঙ্গার বিষয়টি একটি রাজনৈতিক সমস্যা। আমি, আমরা তার সমাধান দিতে পারব না। কিন্তু আমরা এই উদ্বাস্তু মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারি। পুরো বিশ^বাসীর তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো প্রয়োজন। প্রিয়াঙ্কা বললেন, পৃথিবী জুড়েই এই উদ্বাস্তু সমস্যা বিরাজ করছে। আমরা যুদ্ধসহ নানা ইস্যুতে শিশুদের বিভক্ত করছি। তাদের মাঝে ঘৃণার জন্ম দিচ্ছি। শিশুরা সঠিক দিক-নিদের্শনা না পেলে মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। আর তার জন্য দায়ী অন্য কেউ নয়, আমরাই। জাতিসংঘ বা ভারত সরকারের কাছে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে আহ্বান জানাবেন কিনা জানতে চাইলে প্রিয়াঙ্কা বললেন, এসব কথা বলার জন্য তিনি খুবই ছোট মানুষ। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখে করেছিলেন তিনি। যেদিন তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেদিন এ বিষয়ে কথা বলবেন! মিষ্টি করে হেসে প্রিয়াঙ্কা বললেন, ‘আমি সারাবিশ্বের শিশুদের প্রধানমন্ত্রী হতে চাই’। কক্সবাজারের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কারো শত্রু নই, সুতরাং আমার উপরে কোন হামলা হওয়ার আশঙ্কা করি না। আমি বাংলাদেশ থেকে শুধু ‘মিঠাস’ (মিষ্টি অনুভূতি) নিয়ে যেতে চাই। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে তার ভূমিকার প্রশংসা করে এ কথা জানিয়েছি।’ তিনি সবাইকে শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যার যতটুকু সামর্থ্য ততটুকু দিয়ে শিশুদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। নিজস্ব অর্থায়নে আশি জনের মতো শিশুদের নিয়ে তিনি প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ফাউন্ডেশন পরিচালনা করেন। যেসব শিশুকে নিয়ে কাজ করেন তাদের সবাই তার সন্তানের মতো বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার এ সফরের বাইরে কোন প্রশ্ন না করার অনুরোধ ছিল। তারপরও কথা প্রসঙ্গে উঠে এলো চলচ্চিত্রের কথা। তিনি বললেন, বর্তমানে তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনায় মন দিয়েছেন। যেখানে নতুন পরিচালক, নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে কাজ করবেন। সেখানে যদি কোনদিন ভালো গল্প পান তাহলে উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন। এর নাম তিনি ‘সারভাইবাল’ দেবেন বলেও প্রশ্নের জবাবে জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের মুখপাত্র সীমা সেনগুপ্ত ও বাংলাদেশের ইউনিসেফের জনসংযোগ প্রধান জেন জেকুয়েস সিমন।
×