ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জুনেও শেষ হবে না ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ৯ মে ২০১৮

জুনেও শেষ হবে না ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ

মীর আব্দুল আলীম, রূপগঞ্জ ॥ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় ও গোলাকান্দাইল দিয়ে এশিয়ান বাইপাস সড়কের সংযোগ স্থল। এ পথে নিত্য হাজারও মালবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী যান বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের একমাত্র রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়াও দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের মার্কেট গাউছিয়ার অবস্থান থাকায় নিত্য যানজটের এলাকা হিসেবে ভোগান্তির পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত। তাই এ সমস্যার সমাধানে সরকার মেগা প্রকল্পের কাজ হাতে নেয় ২০১৫ সালের অক্টোবরে। ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু করেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়। তবে মেগা প্রকল্পের আওতায় এ ফ্লাইওভারটি ২০১৮ সালের জুনের আগেই খুলে দিবেন বলে সরকারের উর্ধতন মহল বিভিন্ন সময় পরিদর্শনে এসে ঘোষণা দেন। কিন্তু শেষ ঘোষিত সময়ে কাজ শেষ হবে না বলল কর্তৃপক্ষ। কারণ এখনও ফ্লাইওভারটির গোলাকন্দাইল অংশের ৩৫ শতাংশ কাজ বাকি, চলছে মে মাস, জুন মাসের আর ক’দিন মাত্র। এতে সহজেই অনুমেয় যে যথাসময়ে কাজ বুঝিয়ে দিতে পারবেন না ঠিকাদার। সূত্র জানায়, ভুলতা ফ্লাইওভার উড়াল সেতুটি নির্মাণ করছে চীনা কোম্পানি চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রুপ ও স্পেক্টা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ওএমএন বিল্ডার্স লিমিটেড। নির্মাণাধীন ভুলতা ফ্লাইওভার প্রকল্প ঘেষে প্রতি মঙ্গলবার ফুটপাথ ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মধ্যভাগে ডিভাইডেশনের স্থানে হকার্স মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধভাবে। একই মহাসড়কে মালামাল বহনে লাইনের পর লাইন দাঁড়িয়ে রয়েছে পিকআপ ভ্যান, ট্রাক ও লড়ি। আর তাই নিত্য যানজটের কারণে ফ্লাইওভারে ব্যবহৃত মালামাল যথাসময়ে পৌঁছে না। এমনই চিত্র দেখা গেছে ভুলতা ফ্লাইওভার এলাকায়। সূত্র জানায়, দেশীয় অর্থায়নে ২০১৫ সালের অক্টোবরে ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণের শুরু থেকেই হকার্স ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়েন নির্মাণ শ্রমিকরা। ব্যস্ততম এ মহাসড়কের উভয়পাশে ফুটপাথ দখল এমনকি ডিভাইডারের ফাঁকা স্থানে হকাররা তাদের পসরা সাজিয়ে ব্যবসা করতে থাকায় এ সমস্যা আরও প্রকট হয়ে আছে। ব্যস্ততম গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় স্বাভাবিকভাবে পথচারী, ক্রেতা, বিক্রেতা আনাগোনা দেশের যে কোন স্থানের তুলনায় একটু বেশি। ফলে এখানকার প্রশাসন এ সমস্যা নিরসনে নানা পদক্ষেপ নিয়েও ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাওয়ায় আশায় দিন গুণলেও সে অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না। এদিকে সম্প্রতি সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি এ ফ্লাইওভারটি পরিদর্শনে এসে আগামী জুন মাসের আগেই এ উড়াল সেতুর কাজ শেষ হবে বলে ঘোষণা দেন। আর সে সময়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে জানান। বাস্তবে এ কাজের কোন অগ্রগতিই দেখছেন না স্থানীয়রা। ফ্লাইওভারটির ঢাকা সিলেট মহাসড়ক অংশের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হলেও এশিয়ান বাইপাস গোলাকান্দাইল অংশের ৩ তলার পুরো কাজই বাকি। এছাড়াও গ্যাং রোড, ড্রেনেজ, পাইলিং, পার্কওয়েসহ বেশকিছু কাজ বাকি রয়েছে। অন্যদিকে গার্ডার নির্মাণের এখনও হদিস নেই। তাই যথাসময়ে এ কাজ সমাপ্ত হবে না বলে মনে করেন স্থানীয়রা। সূত্র জানায়, সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবারের জন্য হকার্স ও পরিবহন শ্রমিকরা এ ফাঁড়িকে চাঁদা দিয়েই তাদের অবৈধভাবে দোকানের পসরা বসিয়ে ও মহাসড়কে চলমান অবৈধ কার পার্কিং রাখায় ফ্লাইওভার কাজে ধীর গতি হয়েছে। তবু রোধ করা যাচ্ছে না অবৈধ হকার ও পরিবহন শ্রমিকদের অবৈধ পার্কিং। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যে জানা যায়, উপজেলা পর্যায়ে ৪ লেন বিশিষ্ট ৩ তলা যুক্ত এই প্রথম কোন মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে রূপগঞ্জের ভুলতা ও গোলাকান্দাইলে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগে এ মহাসড়কের ওপর নির্মাণ করা ফ্লাইওভার কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। এ উড়াল সেতুটি ১ দশমিক ২৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হবে। যার উভয় গার্ডার অভ্যন্তরে চারলেন বিশিষ্ট হবে। একই সঙ্গে ৩ তলা বিশিষ্ট ফ্লাইওভারটি দেখতেও হবে দৃষ্টিনন্দন। এশিয়ান বাইপাস, ঢাকা সিলেট মহাসড়ক সংযোগস্থলে এ ফ্লাইওভার এলাকায় সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১২ কোটি টাকা। যা মূল কাজের ব্যয় হচ্ছে ১২০ কোটি টাকা। অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। নির্মাণ চুক্তিতে এ উড়াল সেতুর কাজ ২ বছরেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা সমস্যার কারণে ২য় দফায় ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে তা সম্পন্ন হবার কথা ছিল। তবে বাস্তবে মাত্র ৬৫ ভাগ কাজ শেষ হলেও এখনও ৩৫ ভাগ মূল কাজই বাকি রয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের রয়েছে হতাশা। তাই স্বল্প সময়ে এ কাজ শেষ হওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। হকার্স ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা জানায়, প্রতি মঙ্গলবার গাউছিয়া মার্কেটে দেশী বিদেশী পাইকাররা কাপড় কিনতে আসে। তাই হকার্স ব্যবসায়ীরা সপ্তাহে একদিনই তাদের ব্যবসা করেন। আবার এ দিনে পাইকারদের ক্রয়কৃত কাপড় বহনে পরিবহন যানবাহন এখানেই রাখতে হয়। তাই এদিন একটু সমস্যা হয়। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক রিয়াজ হোসেন বলেন, সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী যথাসময়ে কাজ বুঝিয়ে দিতে পারতাম। কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই শেষ হবে এর নির্মাণ কাজ। উপজেলা প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, মেগা প্রকল্প আওতাধীন এ উড়াল সেতুর কাজ যথাসময়েই শেষ হতো। ব্যস্ততম সচল মহাসড়কে কাজ করতে যেয়ে নানা বাধা পেতে হয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। তবু দু’এক মাসের মধ্যেই শেষ হবে এ প্রকল্পটি।
×