ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি হেলেনা ও রায়হানকে

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ৭ মে ২০১৮

প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি হেলেনা ও  রায়হানকে

শেখ আব্দুল আওয়াল, গফরগাঁও ॥ জন্মগতভাবে দুই পা অচল। তবু দমে যায়নি হেলেনা খাতুনের স্বপ্ন। বুক ভরা দম নিয়ে দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে নেমে পড়ে মাঠে। কখনও হামাগুড়ি দিয়ে আবার কখনও মায়ের সহযোগিতায় হুইলচেয়ারে চড়ে নিয়মিত স্কুলের ক্লাস করেছে। সে সুফলও সে পেয়েছে। এ বছর গফরগাঁও উপজেলার ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে মাড়িয়ে হেলেনা খাতুন জিপিএ-৪.৮৯ পেয়েছে। অপরদিকে জীবনে ঝড়ঝাপটা, চরম দারিদ্র্য, আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি রায়হানের সামনে। পড়াশোনায় প্রচ- ঝোঁক আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে সব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ঠেলে এবার এসএসসির ফলে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। জন্ম থেকে বাম পা হাঁটুর নিচ থেকে না থাকা এ শিক্ষার্থী এবার আঠারদানা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২.৮৯ পেয়েছে। তার বন্ধুরা যখন ফলের জন্য বিদ্যালয়ে অপেক্ষা করছিল তখন সে রিক্সা চালাচ্ছিল। সে জানায় বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাতে সে সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালিয়েছে। সে কারণে খুব ভাল ফল করতে পারেনি। প্রতিবন্ধী রায়হান আঠারদানা গ্রামের বেলাল উদ্দিনের ছেলে। হেলেনার বাড়ি গফরাগাঁও উপজেলার ঘাগড়া গ্রামে। আর দশটা শিশুর মতো সে হাঁটতে পারে না। হেলেনার মনে কষ্টের পাহাড়। সে সহপাঠীদের সঙ্গে একসঙ্গে হেঁটে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারেনি। দৌড়াতে পারে না। খেলতে পারে না। তার অন্য সব সহপাঠীরা যখন স্কুল মাঠে খেলা করে, সে তখন চেয়ে চেয়ে দেখে। তার চোখের কোণে তখন বিন্দু বিন্দু নোনাপানি এসে জমা হয়। তবু সে দমেনি। হেলেনা জানায়, ছোট বেলায় থেকেই তার পা দুটি অচল। বড় হওয়ার পরও শক্তি ফিরে আসেনি পায়ে। স্কুলের যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা ছিল ছোটবেলা থেকেই। শারীরিক অক্ষমতার জন্য পরিবার-স্বজন ও প্রতিবেশীরা তার পড়াশোনা নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করলেও হেলেনার কখনও মনে হয়নি সে পারবে না। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে স্কুল। শুরুর দিকে মাফজিলা খাতুন কোলে করে নিয়ে যেতেন। একটু বড় হওয়ার পর হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেয় পরিবার। হেলেনার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন বলেন, জেএসসি সে জিপিএ ৪. ৮৫ পেয়েছিল। এসএসসিতে ৪.৮৯ পেয়েছে। আমার বিশ্বাস হেলেনা একদিন শিক্ষক ও তার মায়ের স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হবে।
×