ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, বার্সিলোনার গৌরবময় গোলের রেকর্ড এখন দ্য রেডসদের, রোনাল্ডোদের রেকর্ড নিজেদের করে নিয়েছেন সালাহরা, অঝোরে কাঁদলেন মিলনার-জেকোরা, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ২৬ মে ফাইনাল মহারণে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে লিভারপুল, রোমা ৪-২ লিভারপুল (দু

রোমার হৃদয় ভেঙ্গে স্বপ্নের ফাইনালে লিভারপুল

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ৪ মে ২০১৮

রোমার হৃদয় ভেঙ্গে স্বপ্নের ফাইনালে লিভারপুল

জাহিদুল আলম জয় ॥ লিওনেল মেসি-লুইস সুয়ারেজ-ফিলিপ কুটিনহোদের বিরুদ্ধে অসাধ্য সাধন করে সেমিফাইনালে উঠে আসে এএস রোমা। শেষ চারের প্রথম লেগে এ্যানফিল্ড থেকে ৫-২ গোলে হেরে আসে ইতালিয়ান ক্লাবটি। কিন্তু ফিরতি লেগে বার্সার ম্যাচের মতো আরেকবার ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস রচনা করতে চেয়েছিলেন জেমস মিলনার, এডিন জেকোরা। কিন্তু না, এবার আর পারেনি রোমের দলটি। কাছাকাছি গিয়েও বেদনায় নীল হতে হয়েছে। বুধবার রাতে সেমির দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠ রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে প্রত্যাশিত জয়ই পেয়েছে স্বাগতিক রোমা। লিভারপুলকে তারা হারিয়েছে ৪-২ গোলে। কিন্তু এই ব্যবধানে জয় ফাইনালের টিকেটের জন্য যথেষ্ট ছিল না। আর একটি গোল যদি রোমা কম খেত তাহলেই স্বপ্নের ফাইনালে উঠে যেতে পারতো তারা। কিন্তু সেটা হয়নি বরং দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ ব্যবধানে জিতে ১১ বছর পর ইউরোপ সেরার যজ্ঞের ফাইনাল মহারণে উঠে গেছে জার্গেন ক্লপের দল। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ষষ্ঠ ট্রফির লক্ষ্যে আগামী ২৬ মে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে শিরোপা যুদ্ধে গত দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে লিভারপুল। তুখোড় ফর্মে থাকা ইংল্যান্ডের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জেতা মোহাম্মদ সালাহকে পুরো ম্যাচে বোতলবন্দী রাখতে দারুণ কার্যকর ছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। দুই গোল হজম করে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে ইতালির রাজধানীর ক্লাবটির। প্রতিপক্ষের রক্ষণে একচেটিয়া চাপ ধরে শুরু করা রোমার নবম মিনিটের ভুলের সুযোগে এগিয়ে যায় লিভারপুল। মাঝমাঠে নাইনগোলানের ভুল পাস পেয়ে সামনে এগিয়ে বাঁয়ে বল বাড়ান ববার্টো ফিরমিনো। বলটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে অতিথিদের এগিয়ে নেন সাডিও মানে। আরও কোণঠাসা হয়ে পড়া রোমা ১৫ মিনিটে সৌভাগ্যের ছোঁয়ায় গোলের দেখা পায়। এল শারাউইয়ের ক্রস ফেরাতে শট নেন ডিফেন্ডার লোভরেন। তার শট মিডফিল্ডার জেমস মিলনারের মুখে লেগে নিজেদের জালেই আশ্রয় নেয়। ২৫ মিনিটে ফের এগিয়ে যায় লিভারপুল। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হয় রোমা। উল্টো এডিন জেকোর হেডে গোলমুখে বল পেয়ে যান জিওরজিনো ভিনালডাম। ডাচ মিডফিল্ডারের অনায়াস লক্ষ্যভেদে দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৭-৩। শেষ হয়ে যায় রোমার এ্যাওয়ে গোলের সুবিধা। রোমার ফিকে হয়ে যাওয়া স্বপ্নে কিছুটা আশা জাগান জোকো। বিরতির পর ৫২ মিনিটে এল শারাউইয়ের শট জার্মান গোলরক্ষক লোরিস কারিয়ুস ঠেকানোর পর ফিরতি বল ধরে কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠান বসনিয়ার এই ফরোয়ার্ড। কিছুক্ষণ পর দুই মিনিটের ব্যবধানে দলটি আরও দুটি সহজ সুযোগ নষ্ট করে। ৬৬ মিনিটে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙ্গে জেকো লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিলে হতাশা বাড়ে স্বাগতিক শিবিরে। ৮০ মিনিটে তার আরেকটি প্রচেষ্টা রুখে দেন কারিয়ুস। ৮৬ মিনিটে বেলজিয়ামের মিডফিল্ডার নাইনগোলানের দূরপাল্লার শটে বল পোস্টে লেগে জালে প্রবেশ করলে নাটকীয়তার সম্ভাবনা জাগে। ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে টানতে বাকি সময়ে আরও দুই গোলের প্রয়োজন ছিল রোমার। কিন্তু তারা আদায় করতে পারে আর এক গোল। যোগ করা সময়ের একবারে শেষ মুহূর্তে (৯৪ মিনিট) নাইনগোলানের পেনাল্টি থেকে গোলে রোমার আপসোস শুধু বাড়িয়েছেই। প্রয়োজনীয় আরেকটি গোল করার সময়ই যে স্বাগতিকরা পায়নি। চার নম্বর গোলটির পরপরই খেলার শেষ বাঁশি বাজান রেফারি। এখন ফাইনাল মহারণের অপেক্ষা। এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে রোনাল্ডো-বেল-বেনজেমাদের গোলের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছেন লিভারপুলের আক্রমণভাগের তিনত্রয়ী মোহাম্মদ সালাহ, সাডিও মানে ও রবার্টো ফিরমিনো। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ২০১৩-১৪ মৌসুমে ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের ‘বিবিসি’ খ্যাত তিন তারকার গোল ছিল ২৮টি। এর মধ্যে সেই মৌসুমে সি আর সেভেন করেছিলেন একাই ১৭ গোল। আর বেল ও বেনজেমা করেছিলেন যথাক্রমে ৬ ও ৫ গোল। রিয়ালের এই ত্রয়ীর গোলের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছেন সালাহ-ফিরমিনো-মানেরা। চলমান মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে সালাহ করেছেন ১০ গোল। অন্যদিকে ব্রাজিলিয়ান তারকা ফিরমিনোর পা থেকেও এসেছে ১০ গোল। আর মানে করেছেন নয় গোল। দীর্ঘ ১১ বছর পর ফাইনালে উঠে এসেছে লিভারপুল। ২০০৭ সালের ফাইনালে তাদের হারতে হয়েছিল। এবার ফাইনালে উঠার পথে জার্গেন ক্লপের দল গড়েছে দারুণ এক রেকর্ড। বার্সিলোনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক দ্য রেডসরা। সেমির ফিরতি লেগে দুই গোল করে লিভারপুল। তাতেই বার্সিলোনার ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমের পুরনো গোলের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়েছে তারা। ওই মৌসুমে ১৬ ম্যাচে ৪৫ গোল করেছিল কাতালানরা। স্প্যানিশ ক্লাবটির ১৮ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙ্গে এখন লিভারপুলের গোল সংখ্যা ১৪ ম্যাচে ৪৬টি।
×