ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে মৃত ২ আসামিকে কারাদন্ড!

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

চট্টগ্রামে মৃত  ২ আসামিকে  কারাদন্ড!

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রাঙ্গুনিয়ার লোমহর্ষক ঘটনা নিয়ে দুটি মামলা। একটি মামলায় প্রথমে এক মুক্তিযোদ্ধার দুই পুত্রকে চোখ উপড়ে ফেলে এসিড ঢেলে দেয়া হয়। ঘটনাটি ’৯১ সালের। এরপর এসিডদগ্ধ পুত্রদের নিয়ে পিতা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহান মামলা করায় সন্ত্রাসীরা ’৯১ সালের ৩০ অক্টোবর যাত্রীবাহী একটি জিপ থেকে নামিয়ে তাকে (মুক্তিযোদ্ধা সোবহান) নিকটবর্তী জঙ্গল নিয়ে নিজের কবর নিজেকে দিয়ে খোঁড়ায়। এর পর তাকে হত্যা (১৯ পৃষ্ঠা ৭ কঃ দেখুন) করে মাটিচাপা দেয়া হয়। দুই ভাইয়ের মধ্যে এসিডদগ্ধ কবির আহমেদ মারা যান ৫ বছর পর। অর্থাৎ ’৯৬ সালে। চোখহারা অপর ভাই সবুর আহমেদ বেঁচে আছেন। নৃশংস কায়দায় হত্যাকান্ডের এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেয় এলাকার আইয়ুব বাহিনীর প্রধান আইয়ুব আলী ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা। এ দুটি ঘটনায় মামলা করে বিচার চাইতে গিয়ে নিহত আবদুস সোবহানের পুরো পরিবারকেই দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। সর্বক্ষণিক হত্যার হুমকি পেয়েছে। ২০০৭ সালের নবেম্বরে মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহান হত্যা মামলার বিচারের রায় হয়। রায়ে ২১ আসামির মধ্যে ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। অবশিষ্ট ৯ জন খালাস পায়। দন্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে আইয়ুব বাহিনীর প্রধান আইয়ুব আলীসহ অপর ১১ সহযোগী রয়েছে। দীর্ঘ ২৭ বছর পর বৃহস্পতিবার রায় হয়েছে সোবহানের দুই পুত্র কবির আহমেদ ও সবুর আহমদের চোখ উপড়ে ফেলে এসিড ঢেলে দেয়া সংক্রান্ত মামলার। মামলার রায়ে চার্জশীটভুক্ত ১৩ আসামির মধ্যে প্রধান আসামি আইয়ুব বাহিনীর প্রধান আইয়ুব আলীসহ দুজনকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তিনজন মৃতসহ সাত আসামিকে দন্ড দেয়া হয়েছে চার বছর করে। খালাস দেয়া হয়েছে চার জনকে। খালাসপ্রাপ্ত চার জনই পলাতক। চট্টগ্রামের পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ স্বপন কুমার সরকারের আদালতে রায়টি ঘোষিত হয়েছে। রায়ে চার্জশীটভুক্ত এবং পরবর্তীতে মৃত দুজনকে (গোলাম কাদের ও দুলা মিয়া) দন্ড দেয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। আসামিরা মৃত। কিন্তু রায়ে তাদের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পর বাদীপক্ষ সংক্ষুব্ধ। আবার মৃত আসামিদের দন্ডাদেশ কিভাবে হলো তাও তাদের বিব্রত করেছে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পিপি মোঃ লোকমান হোসেন জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, বিচার চলাকালে এবং রায় ঘোষণার আগে আসামিদের মধ্যে যে দুজন মারা গেছে তা আদালতের নজরে দালিলিকভাবে আসেনি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, আনঅফিসিয়ালি বিষয়টি শুনানি চলাকালে বিভিন্নভাবে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু আদালতের কাছে লিখিতভাবে কোন পক্ষই বিষয়টি জানায়নি বলে তিনি দাবি করেন। ২৭ বছর আগে সংঘটিত ঘটনাটি নিঃসন্দেহে বর্বরোচিত। আর মামলা দুটি চাঞ্চল্যকরও বটে। এ মামলা নিয়ে নিহতদের পক্ষে অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহানের পুত্র ডাঃ উকিল আহমেদ তালুকদার ওরফে সেলিম দুই যুগেরও বেশি আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া কেবলই বিলম্বিত হয়েছে। ফলে রায় আসতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আবার রায় পাওয়ার পর বাদীপক্ষ সংক্ষুব্ধ। তাদের পক্ষে উচ্চ আদালতে এ ব্যাপারে আপীল করা হবে বলে জানানো হয়েছে। নিহতদের পরিবারের অপরাপর সদস্যও বিস্মিত এই বলে যে, এ মামলার আসামিদের মধ্যে ইতোমধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের নিয়ে বিষয়টি আদালতে জানানোর দায়িত্ব কাদের ছিল, তা নিয়ে। মামলায় বাদীপক্ষে সরকারী পর্যায়ে যারা ছিলেন তাদের অনেকেরই বিষয়টি জানা থাকলেও তা আদালতকে কেন অবহিত করা হয়নিÑ এ প্রশ্নও তাদের পক্ষে রায় ঘোষণার পর রাখা হয়েছে। বাদীপক্ষ আরও দাবি করেছেÑ এলাকায় জায়গাসংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে পরবর্তীতে সন্ত্রাসী ঘটনাবলী ঘটেছে। জমি নিয়ে যিনি বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে তিনিও একজন। আদালতপাড়ায় দুই মৃত আসামিকে সাজা দেয়ার এমন বিষয়টি অতীতে কখনও হয়েছে কিনা তা নিয়ে কোন পক্ষই কিছু বলতে পারেননি। কেননা, মামলা চলাকালীন কোন আসামির মৃত্যু হলে শুনানি চলাকালে তা আদালতকে অবহিত করা হবে, বিচার প্রক্রিয়ায় তাদের নাম বাদ যায়। কিন্তু চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর এসিড নিক্ষেপের এই মামলায় দুই আসামির মৃত্যুর বিষয়টি আদালতের নজরে না আনায় মৃত দুজনকে দন্ডাদেশ দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে আদালতের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে।
×