ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

বৈশাখের বেশ কয়েকদিন গত হয়েছে। তবে কালবৈশাখী থামছে না। বরং গতি বাড়ছে হাওয়ার। প্রায় প্রতিদিন বিকেল বেলায় হুড়মুড় করে নেমে পড়ছে ঝড়। নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকাবাসী তো অবাক। এখন কালবৈশাখীর সময় বটে। তাই বলে এত! গত বুধবারের কথাই ধরা যাক, সন্ধ্যার দিকে যথারীতি হানা দিল কালবৈশাখী। বাতাসের সে কী গতি! বন্ধ জানালার বাইরে থেকে এত শব্দ তুলছিল যে, সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এ সময় ধূলিঝড়, বজ্রপাত এবং মুষলধারে বৃষ্টি হতে থাকে। সন্ধ্যা ৭টার পর ধূলিঝড়ে আক্রান্ত হয় রাজধানী। শো শো আওয়াজ তুলে প্রচ-বেগে ছুটতে থাকে বাতাস। এরপরই বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এবং কালবৈশাখীর তান্ডর শুরু হয়। এ সময় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ভূতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরা মানুষজন পড়েন চরম ভোগান্তিতে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীর ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৪ থেকে ৭৮ কিলোমিটারের মধ্যে। রাজধানীর আগারগাঁও দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ের গতিবেগ রেকর্ড করা হয় ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার। বিমানবন্দর এলাকায় ঘণ্টায় ৭৮ কিলোমিটার বেগে কালবৈশাখী বয়ে যায়। রাত ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে ঝড় বৃষ্টি। রাতে ঝড়ের গতিবেগ কমে আসলেও তা ছিল ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটার। ঝড়ের পরে রাজধানীর অনেক রাস্তায় পানি জমে মানুষ ও যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলেও আকাশের মুখ ছিল গোমড়া। এভাবে নিয়মিত হয়ে গেছে ঝড় বৃষ্টি। এদিকে শহর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এখন কালবৈশাখীর এঁকে দেয়া ক্ষত চিহ্ন। বিশেষ করে গাছ উপড়ে পড়ার দৃশ্যটি খুব দেখা যাচ্ছে। প্রথমে ভাবা হয়েছিল দুর্বল গাছগুলোই উপড়ে পড়ছে শুধু। কিন্তু গত কয়েকদিন শহর ঘুরে অবাক না হয়ে পারা যায় না। বিশালাকার পুরনো গাছ শেকড় শুদ্ধ উপড়ে পড়েছে। গত রবিবার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ১০ থেকে ১২টি ছোট বড় গাছ মাটিতে আছড়ে পড়ে। ন্যাম ভবনের সামনের কিছু গাছ লন্ডভন্ড হয়ে যায়। রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পাশে উপড়ে পড়ে কয়েকটি গাছ। সবুজ বৃক্ষের এমন ধ্বংস দেখে সত্যি মন খারাপ হয়ে যায়। এবার উত্তরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের অভিনব এবং দারুণ কার্যকর প্রতিবাদটির কথায় আসা যাক। গত সপ্তাহে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সফল প্রতিবাদ গড়ে তোলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত শনিবার তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে উঠে যৌন হয়রানির শিকার হন তাদের এক সহপাঠী। বাসের সহকারী ও চালক যৌন হয়রানির চেষ্টা করে। খবরটি ক্যাম্পাসে পৌঁছা মাত্রই শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে উত্তরার রাস্তায় নেমে আসেন। এরপর বাস ভাঙ্গা বা আগুন দেয়ার পুরনো স্টাইল নয়, বাস আটক করেন তারা। একটি দুটি নয়, তুরাগ পরিবহনের ৩০ থেকে ৪০টির মতো বাস আটকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে যান। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত না করা হলে এসব বাস ফেরত দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়। প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে সোমবার পুলিশ অভিযুক্তদের সায়েদাবাদ থেকে গ্রেফতার করে। প্রথমদিন থেকে আলোচিত এই প্রতিবাদের কথা এখনও রাজধানীবাসীর মুখে মুখে। যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রতিবাদ। শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন।
×