ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়ার সেরা বিনিয়োগ হাব বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

এশিয়ার সেরা বিনিয়োগ হাব বাংলাদেশ

উত্তম চক্রবর্তী, লন্ডন থেকে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এশিয়ার সেরা বিনিয়োগ হাব হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বড় বাজার এবং বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের সুবিধা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে নিশ্চিয়তা দিচ্ছি, এশিয়ার সবচেয়ে বেশি এফডিআই (প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ) প্রণোদনা দেয়া দেশে আপনারা (ব্যবসায়ী) আমাদের সরকারের কাছ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন। বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে লন্ডনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কমনওয়েলথভুক্ত সরকার প্রধানদের এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্যে প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথভুক্ত এসআইডিএস (স্মল আইল্যান্ড ডেভেলপিং স্টেট), এলএলডিসি (ল্যান্ড লকড ডেভেলপিং স্টেট) এবং আফ্রিকান ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপক বাণিজ্য সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৯ কোটি মধ্যবিত্ত ক্রেতা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশকে এশিয়ার সেরা বিনিয়োগ হাব হিসেবে বিদেশী বিনিয়োগকারীও ব্র্যান্ডিং করছে। তিনি বলেন, টেকসই বিনিয়োগ সুরক্ষা দিতে বিদ্যুত উৎপাদন, বিশেষ করে তেল ও গ্যাসের উৎপাদনকে সরকার সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, মানবসম্পদের সক্ষমতা ও কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং প্রযুক্তির ব্যবহার গতিশীল করার ওপরও সরকার জোর দিচ্ছে। এসবের ফলে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমে আসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬ দশমিক ৭০ শতাংশ; যা ২০১৫ সালে ২২ দশমিক ৪০ ভাগে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, চলতি অর্থবছরে তিন বিলিয়ন ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচীর সুফল এসেছে। তিনি বলেন, রফতানি কেন্দ্রিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের কর্মসংস্থান বাড়াতে ও দারিদ্র্য কমাতে ভূমিকা রেখে চলেছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে গত মাসে জাতিসংঘের স্বীকৃতির কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বেসরকারী অংশীদারিত্বকে গুরুত্ব দেয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তার সরকার দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। এর ফলে কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বাড়ানো ও দারিদ্র্যবিমোচনে এসএমই গুরুত্ব ভূমিকা রাখছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ খাতের আরও বিকাশে সরকার সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্প বাংলাদেশের উন্নয়নেও বহুমূখী ভূমিকা রাখছে। এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ই-কমার্সের উন্নয়নে ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে; যা থেকে এসএমই খাত সুবিধা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ বাড়ানো ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, কাঁচামাল, ভবিষ্যত উদ্যোক্তাদের তথ্যভিত্তিক বাজার সুবিধা দেয়ার মতো বিষয়গুলোর দিকে সরকার মনোযোগ দিয়েছে। বিনা জামানতে এক অংকের সুদে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের সরকার ঋণ দিচ্ছে এবং মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দিচ্ছে। এ মাসের শুরুতেই আমরা দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এসএমই পরামর্শ কেন্দ্র চালু করার কথাও তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা চ্যালেঞ্জ থাকার পরও দারিদ্র্যবিমোচনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্বে বাংলাদেশ মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আর সদস্য দেশগুলোর টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার ও বেসরকারী খাতকে কমনওয়েলথ সহায়তা দিতে পারে। সফরের দ্বিতীয় দিনে বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা সরকার প্রধানদের বৈঠকে এবং সন্ধ্যায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র দেয়া নৈশভোজে অংশ নেন। সফরের তৃতীয় দিন আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকালে বাকিংহাম প্যালেসে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এরপর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ও কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রেসিয়া স্কটল্যান্ডের দেয়া অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে, দুপুরে সম্মেলনের নির্বাহী সভা এবং রাতে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সরকার প্রধানদের সম্মানে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের দেয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন।
×