ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২০ লাখের বেশি তথ্য জোগাড় করেছে মহানগর পুলিশ

রাজধানীর ভাড়াটিয়াদের ডিজিটাল তথ্য ভাণ্ডার হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১২ এপ্রিল ২০১৮

রাজধানীর ভাড়াটিয়াদের ডিজিটাল তথ্য ভাণ্ডার হচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীতে ২০ লাখের বেশি ভাড়াটিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্রসহ তথ্য সংগ্রহ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একই সঙ্গে ভাড়াটিয়াদের বিষয়ে ডিজিটাল তথ্য ভা-ার করা হচ্ছে। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র শনাক্ত করার জন্য ডিজিটাল তথ্য ভা-ার করার উদ্দেশ্য। দুর্ধর্ষ অপরাধী ও জঙ্গীদের ভুয়া পরিচয়পত্র দিয়ে বাসা ভাড়া নেয়ার কৌশল ঠেকাতে পুলিশের এই উদ্যোগ। ডিএমপি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ডিএমপি সূত্র জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়া সক্রিয় জঙ্গী সংগঠনগুলোর সদস্যরা এখনও ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বাসা ভাড়া নিচ্ছে। অপরাধীরাও ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বাসা ভাড়াসহ পুলিশের চোখে ধুলো দেয়া যায় এমন নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। বাসা ভাড়া নেয়ার জন্য শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রই নয়, চাকরির নিয়োগপত্র বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র বানিয়ে বাড়িওয়ালাদের ধোঁকা দিচ্ছে। রাজধানীতে এখনও ভুয়া পরিচয় দিয়ে জঙ্গীরা বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছে। তবে বাসা ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে জঙ্গীরা আগের চাইতে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিশেষ করে ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার ক্ষেত্রে তারা কৌশল অবলম্বন করছে। ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করে ভাড়াটিয়া ফরমে ভুল তথ্যও সংযোজন করে দিচ্ছে। অভিভাবক হিসেবে এমন লোকজনের নাম বা মোবাইল নম্বর দিচ্ছে যারা জঙ্গী সংগঠনেরই সদস্য। ডিএমপির একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বাসা ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহের পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়ে তারা জোর দিয়েছেন। একই সঙ্গে ভাড়াটিয়াদের বিষয়ে যে ডিজিটাল তথ্য ভা-ার করা হচ্ছে, তা শেষ হলে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র শনাক্ত করাও সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় নেয়ার পাশাপাশি আরও কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যা সন্দেহভাজন জঙ্গী বা অপরাধীদের বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দিতে পারবে। ডিএমপি সূত্র জানান, গত কয়েক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে জঙ্গীদের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বাসা ভাড়া নেয়ার অনেক নজির অসংখ্য। সর্বশেষ চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি তেজগাঁও নাখালপাড়ার জঙ্গী আস্তানায় র‌্যাব যে অভিযান চালায়, সেই বাসার বাড়িওয়ালার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া জাতীয় পরিচয়পত্রগুলো ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে সক্রিয় দুই জঙ্গী গোষ্ঠী নব্য জেএমবি এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলাম তাদের জঙ্গী সদস্যদেরও বাসা ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করার বিষয়টি লক্ষ্য করছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে বাড়িওয়ালার সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করা এবং ভুয়া যেসব কাগজপত্র তৈরি করা প্রয়োজন তা যেন একটির সঙ্গে আরেকটির মিল থাকে এমন কৌশল অবলম্বন করে বাসা ভাড়া নিচ্ছে জঙ্গী ও অপরাধীরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বাড়িওয়ালাদের ভুয়া পরিচয়পত্রের বিষয়ে সজাগ থাকার পাশাপাশি ভাড়াটিয়া পেশাজীবী হলে প্রতিষ্ঠানে ফোন করে বা সশরীরে গিয়ে খোঁজ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ফোন করে খোঁজ নিয়ে স্থায়ী ঠিকানা সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মোবাইল নম্বর নিয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে গুরুত্বসহকারে পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন। ভাড়াটিয়াদের আচরণ এবং চলাফেরা বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা, তারা প্রতিদিন কখন বাসা থেকে বের হচ্ছে, কখন ফিরছে, অপরিচিত লোকজনের যাতায়াত আছে কী না, ভাড়াটিয়ারা প্রতিবেশীদের সঙ্গে মেশে কী না এবং প্রয়োজনে ভাড়াটিয়ার বাসার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কোন সন্দেহজনক কিছু আছে কী না তা খোঁজ রাখার জন্য বাড়িওয়ালাদের প্রতি পরামর্শ দিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকায় এখন জঙ্গীদের বাসা ভাড়া নেয়া অনেক কঠিন হয়ে গেছে। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর ধারাবাহিক অভিযানে জঙ্গীরা রাজধানী ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। এখন ঢাকার উপকণ্ঠসহ মফস্বল শহরে খুব অল্পসংখ্যক কিছু জঙ্গী আস্তানা গেড়ে আছে বলে তাদের ধারণা।
×