ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদাকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়াই সরকারের উদ্দেশ্য ॥ রিজভী

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১২ এপ্রিল ২০১৮

খালেদাকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়াই সরকারের উদ্দেশ্য ॥ রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে নিঃশেষ করাই সরকারের উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি অভিযোগ করেন সরকার নানা বক্তব্য দিয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন। রিজভী বলেন, সরকারের মন্ত্রীদের লাগামহীন বক্তব্যের কারণে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও বেশি বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের তল্পীবাহক ছাড়া কোন আদর্শ শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেননি। সরকারের কাছে নিজেদের বিবেককে অঞ্জলি দিয়েছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের যে তা-বলীলা চলছে সেটির নিন্দা জানাচ্ছি। রুহুল কবির রিজভী বলেন, আরপিও সংশোধনীর খসড়ায় সশস্ত্র বাহিনীকে বাদ দেয়াকে একতরফা নির্বাচনের আলামত। গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে, সশস্ত্রবাহিনী যুক্ত হচ্ছে না- এই বিধান সংযোগ করে আরপিওর আইনের খসড়া করা হয়েছে। ওই খসড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সংজ্ঞা দিচ্ছেন যেখানে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ আছে। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী থাকবে না। তারা যে একতরফা নির্বাচন করবেন, সেই নির্বাচনেরই একটা আভাস ফুটে উঠছে, এর আলামত আমরা দেখতে পারছি। রিজভী বলেন, বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুধীজন, সুধী সমাজ, বুদ্ধিজীবী যারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করেছেন তারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছেন। আমরা বলেছি বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন। সেটাকে বন্ধ করার জন্য সরকারের এই উদ্যোগ। আমরা মনে করি এটি হীন উদ্দেশ্য প্রণোদিত, সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের পরিপন্থী উদ্যোগ। রিজভী বলেন, আইনগতভাবে খালেদা জিয়া ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সেবা পাওয়ার অধিকারী অথচ সে সুযোগ তাকে দেয়া হচ্ছে না। এখানেই সরকারের উদ্দেশ্যে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তাকে তিলে তিলে নিঃশেষ করার ষড়যন্ত্র রয়েছে। তিনি বলেন, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগে খালেদা জিয়ার যে এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছে তা মামুলি ব্যাপার মাত্র। তাকে এমআরআইসহ আরও আধুনিক পরীক্ষা করলে বোঝা যেত তার প্রকৃত স্বাস্থ্যগত অবস্থা কি। রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার মত একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতার ওপর নির্যাতন এবং নির্দয় ব্যবহার শুধু সরকার প্রধানের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা ছাড়া অন্য কিছু নয়। আর জামিন পাওয়ার পরও খালেদা জিয়ার জামিন আটকে দেয়া হয়েছে সরকার প্রধানের নির্দেশেই। রিজভী বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বেছে বেছে নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগদানকারী ছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে হল ছাত্রলীগের নেত্রীরা। মোর্শেদা নামের এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে। রিজভী বলেন, বর্তমান সরকার মেধাবী লোক পছন্দ করে না। এ কারণেই এদের সময় সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়, খাতায় কিছু না লিখেও এ প্লাস পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ ভর্তি বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ইত্যাদি রমরমা বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যেও সমালোচনা করে রিজভী বলেন, তিনি জানলেন কী করে রাত ১২টায় হাজার হাজার মেয়েরা বেরিয়ে আসছে হল থেকে। আর আন্দোলনকারীরা সবাই কি রাজাকারের সন্তান? তাহলে দেশে রাজাকারের সংখ্যা বেশি? তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের বিষয়ে আমাদের ভিশন-২০৩০তে বলা হয়েছে। কাদের কোটা রাখা হবে, কোটা কী পর্যায়ে আসবে তা সেখানে বলা হয়েছে। আমাদের দলের যে বক্তব্য তা সুস্পষ্ট। রিজভী বলেন, গণতন্ত্রে প্রতিটি মানুষের কথা বলার যে অধিকার সেই অধিকারটির বিষয়ে আমরা সব সময় সোচ্চার। গণতান্ত্রিক অধিকারকে আমরা সব সময় সমর্থন করি। তাই আন্দোলনকারীদের ওপর সরকার পৈশাচিক আক্রমণ করায় আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি। ছাত্রলীগের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের ওপর নিষ্ঠুর ও বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে ছাত্রলীগ। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবদুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী প্রমুখ। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদলের সমর্থন: শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল। সেইসঙ্গে তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ছাত্রদলের এ অবস্থানের কথা জানান।
×