ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধনবাড়ীর নওয়াব বাড়ির দীঘি যেন ময়লার ভাগাড়

প্রকাশিত: ০৭:০২, ২ এপ্রিল ২০১৮

ধনবাড়ীর নওয়াব বাড়ির দীঘি যেন ময়লার ভাগাড়

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১ এপ্রিল ॥ ধনবাড়ী নওয়াব বাড়ির ঐতিহ্যবাহী দীঘিটি ময়লা-আর্বজনা ফেলে ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। এতে দিনদিন সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়েছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে শতাধিক বছরের পুরনো এ দীঘির ঐতিহ্য। দীঘির পাড়ে নির্মিত বসতবাড়ির নিত্য ব্যবহার্র্য আর্বজনা ফেলে ও পয়ঃনিষ্কাশনের পাইপ লাইনের নোংরা পানিতে দূষিত হচ্ছে দীঘির পানি। ফলে দিনদিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভরাট হয়ে যাচ্ছে দীঘির তলদেশও। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ছড়াচ্ছে রোগ-জীবাণু। যত্রতত্র ময়লা-আর্বজনায় দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে দীঘিটির আসল রূপ। একসময় এ দীঘিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হতো, চলতো মাছ ধরার বড়শি প্রতিযোগিতা। এখন আর আগের মতো মাছ চাষ হয় না। দীঘি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ধনবাড়ীর নওয়াব বাড়ীর দীঘিটি উত্তর টাঙ্গাইলের সবচেয়ে বড় দীঘি। শুষ্ক মৌসুমে সব পুকুরের পানি শুকিয়ে গেলেও এ দীঘির পানি স্থির থাকে। দীঘির পাড় ঘেঁষা নওয়াব শাহী জামে মসজিদ। এ মসজিদে প্রতিদিন আসা শত শত দর্শনার্থী ও মুসুল্লিরা দীঘির পানিতে অজু-গোসল করে নামাজ আদায় করেন। নিত্যদিনের কাজ সারেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পানি এখন হয়ে গেছে বিবর্ণ। পানির সরবরাহে বিশেষ ভূমিকা রাখা এ দীঘিটা সংরক্ষণ করা না গেলে একদিন ময়লা-আর্বজনায় দীঘির পানি বিষাক্ত হয়ে পড়বে। ভরাট হয়ে যাবে পুরো অংশই। ফলে হারিয়ে যাবে পুরনো এ দীঘির ঐতিহ্য। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৩০ বিঘা জমির উপর এ বিশাল দীঘি। রয়েছে সুন্দর মনোরম শান বাঁধানো ঘাট। এখানে মুসুল্লিরা অজু করেন। মসজিদ পরিচালনার জন্যই এ দীঘি নির্মাণ করা হয়েছিল। দীঘির পাড়েই রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রথম প্রস্তাবক এবং ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী নবাব বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরীর বাড়ি (নওয়াব মঞ্জিল), নওয়াব প্যালেস, নওয়াব শাহী জামে মসজিদ ও ভিলা। পাশেই আফতাবুন্নেছা হাফিজিয়া মাদ্রাসা, নওয়াব ইনস্টিটিউশন, সাকিনা মেমোরিয়াল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, নওয়াব মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজ। এ বিষয়ে মসজিদ দেখতে আসা দর্শনার্থী ভাইঘাট আইডিয়াল ডিগ্রী কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী সুবর্ণা ইয়াসমিন বলেন, এ ময়লা আর্বজনা ফেলার জন্য আলাদা জায়গা দরকার। এগুলো দীঘির পানির সঙ্গে মিশে পানি দূষিত হচ্ছে। সবাই এ দীঘির পানিতে অজু করে মসজিদে নামাজ পড়েন। এখানে ময়লা আর্বজনা ফেলা ঠিক নয়। একই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী শাপলা আক্তার বলেন, এতে দীঘির ঐতিহ্য ধ্বংসের পাশাপাশি মারাত্মক সৌন্দর্য্যহানি ঘটছে। দর্শনার্থী মানিক সরকার বলেন, ময়লা ফেলার কারণে দীঘির পানি নোংরা ও অপবিত্র হচ্ছে। এতে পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে। দীঘি পাড়ের বাসিন্দা বিউটি আক্তার বলেন, আমরা এখানে ভাড়া থাকি। বাড়ির মালিক দীঘির সঙ্গে বাড়ির পানির লাইনের সংযোগ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, এটা খুবই গর্হিত কাজ। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। নওয়াব মঞ্জিলের ম্যানেজার মুকবুল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমরা নওয়াব মঞ্জিলের তরফ থেকে চেষ্টা করছি, যাতে ময়লা ও আর্বজনা ফেলা বন্ধ করা যায়। নওয়াব শাহী জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা ইদ্রিস হোসাইন বলেন, আমার এককভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ দীঘি পরিষ্কার পরিছন্ন রাখলে পরিবেশও ভাল থাকে। আমি সব সময়ই পরিষ্কার পরিছন্নতার পক্ষে।
×