ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বেসামাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

চাঁপাই ও গাইবান্ধায় ডায়রিয়ার প্রকোপ

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২ এপ্রিল ২০১৮

চাঁপাই ও গাইবান্ধায়  ডায়রিয়ার প্রকোপ

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ ‘বাসি, পচা ও বাইরের পানি পান করবেন না।’ মাইকে ঘুরে ঘুরে এই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে শহরজুড়ে। পৌরসভা এই প্রচারের ব্যবস্থা করায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে শহরজুড়ে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভাসহ সমগ্র জেলায় ডায়রিয়া মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় পৌরসভা এই মাইকের প্রচার চালাচ্ছে শহরজুড়ে। গত এক সপ্তাহে পৌরসভার ২১টি মহল্লা ও ৪০ ইউনিয়নে ভয়াবহ আকারে ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। চাঁপাই মডার্ন হাসপাতালে প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। বহির্বিভাগে এই ধরনের রোগীর সংখ্যা কয়েক সহস্রাধিক হবার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনেকটাই বেসামাল হয়ে পড়েছে। পুরো হাসপাতালজুড়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর বেড এখন হাসপাতাল বারান্দার এখানে সেখানে। যদিও এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কোন ঘটনা না ঘটলেও হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। পৌর এলাকার মসজিদ পাড়া, আরামবাগ, নিমতলা, ফকিরপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, রেলওয়ে কলোনি, স্কুঠিপাড়া, বালিগ্রাম, হাসপাতাল রোড, মহাডাঙ্গা, দ্বারিয়াপুর এলাকাসহ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর, বালিয়াডাঙ্গা, বারঘরিয়া, মহারাজপুর এলাকায় কয়েক শতাধিক রোগী আক্রান্ত হয়েছে ডায়রিয়াতে। ৪ শত ২০ রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। স্বাস্থ্যবিভাগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোন মেডিক্যাল টিম গঠন না করায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তেই আছে। শনিবারেও ডায়রিয়া রোগীর ভিড় ছিল হাসপাতালে। হাসপাতাল প্রবেশের মুখেও রোগীরা মেঝেতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একটি ওয়ার্ডের ইনচার্জ সুলতানা রাজিয়া জানান পর্যাপ্ত স্যালাইন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে থাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছেনা। অন্যদিকে শহরের ডায়রিয়া সামাল দিতে পাইপ লাইনের সরবরাহকৃত পানি ব্যবহারে অধিক সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। শহরজুড়ে মাইক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে বিকল্প কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা থেকে জানান, ডায়রিয়া পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। শনিবার রাত থেকে রবিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত আরও ৪৬ নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত ৭০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেডে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় মেঝেতে ও করিডরে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতালে একটি বেঞ্চে ৩ জন রোগীকে বসিয়ে আইভি স্যালাইন লাগিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোগী আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এই আশঙ্কায় জরুরী বিভাগের সম্মুখে পৌরসভা থেকে তাঁবু ও টিন দিয়ে একটি প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া পাড়া ও মহল্লায় মেডিক্যাল টিম গিয়ে রোগীদের জরুরী চিকিৎসাসেবাসহ স্যালাইন বিতরণ করছে। গাইবান্ধা পৌর এলাকার নতুন নতুন এলাকাসহ শহরতলির গ্রামগুলোতেও ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। পৌরসভার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এলাকাগুলো হচ্ছে ডেভিড কোম্পানিপাড়া, সরকারপাড়া, শাপলাপাড়া, মালিপাড়া, পলাশপাড়া এবং থানাপাড়া। এছাড়া পৌর এলাকার বাইরে সদর উপজেলার দক্ষিণ ধানঘরা, ত্রিমোহিনী, দারিয়াপুর গ্রামেও ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। ইতোমধ্যে ঢাকার রোগ নির্ণয় ও রোগতত্ত্ব বিভাগের ৩ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ সাজ্জাদ, ডাঃ সোহেল ও ডাঃ মির্জাসহ ৬ জনের একটি টিম ডায়রিয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে পরীক্ষার জন্য রোগীর মল ও পানি সংগ্রহ করছেন বলে জানা গেছে। তদুপরি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের একটি টিম ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকার পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে।
×