ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাশিয়ার সমর্থন আদায়ে মস্কো গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২ এপ্রিল ২০১৮

রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাশিয়ার সমর্থন আদায়ে মস্কো গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে রাশিয়ার দৃঢ় সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে রবিবার তিনদিনের সফরে মস্কো গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সেখানে আজ সোমবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি। এছাড়া মস্কো সফরকালে ভøাদিমির পুতিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা বার্তাও পৌঁছে দেবেন তিনি। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভে জোর তৎপরতা চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে অনেক দেশই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চীন ও রাশিয়ার দৃঢ় সমর্থন পায়নি বাংলাদেশ। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ভেটো দিয়ে চলেছে এই দুই দেশ। সে কারণেই এবার রাশিয়ার সমর্থন পেতে দেশটিতে সফরে গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এছাড়া ভøাদিমির পুতিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, সেটিও জানাবেন। আজ সোমবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বৈঠক হবে। এই বৈঠকে চলতি বছরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের বাংলাদেশ সফরের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। অনেক দিন ধরেই পুতিনের ঢাকা সফরের বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের জন্য আগেও বিভিন্ন সময়ে রাশিয়ার সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাশিয়ার কাছে পুরোপুরি ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে এক বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথ খুঁজে বের করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাশিয়া যেন যুক্ত হয়, ঢাকা এই অনুরোধ করে। এর উত্তরে রাশিয়া জানিয়েছিল, তারা মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকি বহাল। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখবে। তবে রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর পর এই সঙ্কট একেবারেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানিয়েছিল রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছিলেন, এটা মাথায় রাখা উচিত সার্বভৌম কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করলে তা বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে গোলযোগ ডেকে আনতে পারে। তারপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একাধিক বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভেটো দেয় রাশিয়া। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশিয়া সফরকালে দুই দেশের মধ্যে বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুই প্রাধান্য পাবে। তবে রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় নির্মাণাধীন রূপপুর বিদ্যুত প্রকল্পের ভবিষ্যত সহায়তার বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প। এই প্রকল্পের ব্যয় হলো এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এতে রাশিয়ার সহায়তার পরিমাণ ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এছাড়া বছরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এবারের রাশিয়া সফরে বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টিও আলোচনা হবে। এর আগে গত বছর এপ্রিলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের আমন্ত্রণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী দ্বিপক্ষীয় সফরে মস্কো গিয়েছিলেন। সে সময় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তখন দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এগুলো হলো- টেলিকম ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক, সংবাদ সংস্থা বাসস ও ইতার তাসের মধ্যে সমঝোতা স্মারক এবং সংস্কৃতিক সহযোগিতা ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক। সেই সফরের এক বছর পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী আবার রাশিয়া সফরে গেলেন।
×