ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়নে অংশীদার হোন- সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৪ মার্চ ২০১৮

উন্নয়নে অংশীদার হোন- সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় শরীক হতে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নিজস্ব শিল্প পার্ক গড়ে তোলার জন্য সরকার তাদের ৫শ’একর বা তারও বেশি জমি বরাদ্দে প্রস্তুত রয়েছে। সারাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে এই সুবিধা গ্রহণ করে সেখানে শিল্প স্থাপনের জন্য সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসতে পারে।’ তিনি হোটেল সাংগ্রিলাতে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ব্যবসায়ী ফোরামের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন, বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুর যৌথভাবে ‘নতুন অধ্যায়ের পথে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য শিল্পমন্ত্রী লিম হং কিয়াং অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুরের ভারপ্রাপ্ত সিইও ক্যাথি লাই এবং সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান এসএস তেও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে বিদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিনিয়োগের স্থান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের ব্যবসায়ীদের জন্য আইন দ্বারা বিদেশী বিনিয়োগের সুরক্ষা প্রদান, কর অবকাশ, যন্ত্রাংশ আমদানি করে শিল্প স্থাপনে স্বল্প শুল্ক ধার্য, যে কোন সময় লভ্যাংশসহ শতভাগ মূলধন প্রত্যাহারের সুবিধা, রেমিট্যান্স রয়্যালিটি প্রদান, তরুণ ও কর্মদক্ষ জনশক্তি এবং প্রতিযোগিতামূলক বেতন ভাতার সুবিধার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান এবং নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশী পণ্যের কোটামুক্ত এবং শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা জাতিকে আমাদের ডিজিটাইজেশনের অংশ হিসেবে রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১-এর মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তরের পথে এগিয়ে চলেছি। যেখানে ২০২১ নাগাদ দেশকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। শেখ হাসিনা বলেন, ভর্তুকি দেয়া কৃষি খাত থেকে বাংলাদেশকে আমরা একটি আধুনিক, সহনীয় এবং বহুমুখী অর্থনীতির পথে নিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের জিডিপি’র চার পঞ্চমাংশ আসে উৎপাদনশীল খাত থেকে, ২০১৭ সালে প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস এক তথ্যানুয়ায়ী, আগামী তিন দশকের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের তৃতীয় ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি হিসেবে উঠে আসবে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক শীর্ষ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিগত ২০ বছরে বিস্ময়কর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই শহরের ভোক্তা শ্রেণী হবে। যা একটি বিশাল বাজারের সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গেল অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, রিজার্ভের পরিমাণ বর্তমানে ৩৩ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ২০০৫ সালে এই রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমাদের রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৪ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার, দারিদ্র্যের হার যেখানে ২০০৫ সালে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ, তা বর্তমানে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর ৬ মাস হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে জনগণের মাথাপিছু আয় ১৬শ ১০ মার্কিন ডলার। ক্রয় সক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বীকৃতি হিসেবে শীঘ্রই বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন লাভ করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের খ্যাতি বিশ্বজোড়া উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে তৈরি পোশাক খাতে আমাদের রফতানির পরিমাণ ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার। সেক্ষেত্রে পোশাক রফতানির শীর্ষ দেশ চীনের পরের অবস্থানটিই বাংলাদেশের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ তৈরি পোশাক খাতে রফতানির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একইসঙ্গে ওষুধ শিল্পের সমৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় চাহিদার ৯৭ শতাংশ মিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আমাদের তৈরি ওষুধ বিশ্বের ১২০টি দেশে রফতানি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাত এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে এখন বিশ্বমানের হালকা ও মাঝারি ধরনের সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরি হচ্ছে। একইসঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগে দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে গড়ে উঠছে অত্যাধুনিক আইটি পার্ক। ২০২১ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশের আইটি খাত। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্ব শেষে দু’দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদারের অংশ হিসেবে দু’দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়। অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে চুক্তি সই ॥ আগামী দিনে বাংলাদেশ ও সিংঙ্গাপুরের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব আরও জোরদারের লক্ষ্যে দু’দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বাংলাদেশ-সিংঙ্গাপুর ব্যবসায়ী ফোরাম-২০১৮ এর উদ্বোধনের পর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
×