ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বোঝান ॥ সিঙ্গাপুরকে হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৩ মার্চ ২০১৮

 রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বোঝান ॥ সিঙ্গাপুরকে হাসিনা

বিডিনিউজ ॥ বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে ‘বোঝাতে’ সিঙ্গাপুরকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব এবং প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংয়ের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান এ আহ্বান জানান। সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট ভবন ইস্তানায় এই দুই বৈঠক হয় বলে পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহীদুল হক জানিয়েছেন। সোমবার দ্য স্ট্রেইটস টাইম্সে প্রকাশিত এক নিবন্ধে শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজতে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে সিঙ্গাপুরকে অনুরোধ জানানোর পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এ আহ্বান জানালেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জোট আসিয়ানের সদস্য সিঙ্গাপুর এবং মিয়ানমার। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড, ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনাম এই সংস্থার সদস্য। ২০১৮ সালের জন্য দশ রাষ্ট্রের এই সংস্থার নেতৃত্ব দিচ্ছে সিঙ্গাপুর। হালিমা ইয়াকুবের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, যদিও এটা সৌজন্য সাক্ষাত। হালিমা ইয়াকুবের সঙ্গে বেশ লম্বা মিটিং হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা আমাদের জন্য একটা বোঝা। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ করে এদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিলাম। নানাবিধ কারণে এটা ডিলে হচ্ছে। যেহেতু, আসিয়ানের চেয়ার এবং আসিয়ানের মেম্বার... সিঙ্গাপুর তারা যেন মিয়ানমারের গবর্নমেন্টকে বোঝায়- এদের ফিরে যাওয়ার মধ্যেই ওই এলাকার স্থিতিশীলতা ও উন্নতি নির্ভর করছে। হালিমা ইয়াকুব এবং লি সিয়েন লোংয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার আলোচনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুইজনের আলোচনায় একটা জিনিস পরিষ্কার হয়েছে যে, সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো ইকোনমিক কোলাবরেশন। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট তাদের সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন বলেও জানান তিনি। হালিমা ইয়াকুব এবং লি সিয়েন লোংয়ের সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে বলেও শহীদুল হক জানান। বাংলাদেশে খাদ্য ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছেন শেখ হাসিনা। এছাড়া জ্বালানি এবং জ্বালানির বিভিন্ন খাত নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য ছাড়াও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট। এই দুই বৈঠকেই দুদেশের মধ্যে বিমান যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত বাংলাদেশী নাবিকদের সিঙ্গাপুর বন্দরে সমস্যার বিষয়টি দুই বৈঠকেই আলোচনায় স্থান পায়। শহীদুল হক বলেন, নাবিকরা শিপে নামতে ও উঠতে সিঙ্গাপুরে যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন এটার সমাধানের জন্য অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। বৈঠকে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সিঙ্গাপুরকে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী অনেক আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়েও দুই বৈঠকেই আলোচনা হয়েছে। শহীদুল হক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দর ডেভেলপ ও অপারেশনাল করার ব্যাপারে প্রচ- উদগ্রীব’। সেখানেও তিনি সিঙ্গাপুরের সহায়তার কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশে খাদ্য ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী। আসিয়ানের ‘সেক্টরাল পার্টনার’ হতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথাও প্রধানমন্ত্রী দুই নেতার সঙ্গে বৈঠকেই তুলে ধরেন। শহীদুল হক বলেন, এখন এমবার্গো আছে। এমবার্গো লিফট করলে তারা সাপোর্ট করবে। হালিমা ইয়াকুব এবং লি সিয়েন লোংয়াকে এ বছরই বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তারা এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। পরে বিকেলে শেখ হাসিনা পোর্ট অথরিটি অব সিঙ্গাপুর ঘুরে দেখেন।
×